রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার এক বাড়ির উঠানে পড়ে আছে বাবার মরদেহ টানা ২২ ঘণ্টা ধরে। তার পাশেই বসেছে দরবার। সেখানে উপস্থিত মৃত ব্যক্তির পাঁচ সন্তান। এ সময় তারা ব্যস্ত বাবার সম্পত্তি বণ্টন নিয়ে। সম্পত্তি বণ্টনের আগে বাবাকে দাফন করা হবে না। এরপর ২২ ঘণ্টা পর সালিসের মাধ্যমে ইউপি চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে দাফনের সিদ্ধান্ত হয় ওই বৃদ্ধের মরদেহ।
মঙ্গলবার (৬ জুলাই) আলোচিত এ ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের দক্ষিণ পাঁচুরিয়ার অম্বলপুর গ্রামে। এর আগে মঙ্গলবার (৬ জুলাই) বিকেল ৩টায় মৃত্যু হয় তার। বুধবার (৭ জুলাই) দুপুর ১টা পর্যন্ত বাড়ির উঠানেই ফেলে রাখা হয় তার মরদেহ। পরে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। মৃতের সন্তানদের এমন কাণ্ডে হতবাক স্থানীয়রা।
মৃত ব্যক্তি ওই গ্রামের ইয়াছিন মোল্লা (৮৫)।
স্থানীয়রা জানায়, মৃত ব্যক্তির ৫ সন্তান ফুলবড়ু, বাবলু মোল্লা, মমতাজ, রাবেয়া ও আব্দুর রহমান। বাবার জমি নিয়ে ছোট ভাই আব্দুর রহমানের সঙ্গে বিরোধ ছিল বাকিদের। সেই বিরোধের জেরেই বাবার মরদেহ দাফন না করে জমির ভাগবাটোয়ারা নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।
এদিকে ২২ ঘণ্টা পর দেবগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলামের হস্তক্ষেপে সালিসের মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা করা হয়। স্থানীয়দের সংবাদের ভিত্তিতে গোয়ালন্দঘাট থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা মর্গে পাঠায়।
ইয়াছিন মোল্লার বড় চার সন্তানের দাবি, ছোট ভাই আব্দুর রহমানের কাছে থাকতেন ইয়াছিনমোল্লা। এ সময় বাবাকে ফুঁসলিয়ে সব সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে রাজবাড়ী কোর্টে একটি মামলা চলমান। রহমান ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বাবাকে মেরে ফেলেছে বলে ধারণা তাদের।
দেবগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম বলেন, এই খবরটি শুনে সঙ্গে সঙ্গে আমি তাদের বাড়িতে যাই এবং সালিসের মাধ্যমে লকডাউনের পরে সমাধানের কথা বলে স্ট্যাম্পে তাদের উভয় পক্ষের স্বাক্ষর নিয়ে ইয়াছিন মোল্লার দাফনের সিদ্ধান্ত নেই।
আব্দুর রহমান মোল্লা বলেন, ডাক্তারের কথা অনুযায়ী বাবাকে বাসায় রেখে চিকিৎসা করাই। মঙ্গলবার (৬ জুলাই) দুপুর আড়াইটার দিকে বাবা আরও বেশি অসুস্থ হলে গোয়ালন্দ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে দেখে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান আকন্দ জানান, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজবাড়ী হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
জিএম