বছর ঘুরে বর্ষা আসে। দেখা দেয় বন্যা। ভাঙ্গে বাঁধ। কপাল পুড়ে কৃষকের। প্রতিবছরই সরকারি বরাদ্দ আসে বাঁধের। শুধু হয়না স্থায়ী সমাধান। থেকেই যায় কৃষকের কান্না। বরাদ্দের টাকার কাজে হয় নয়-ছয়। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ঝিনাই নদীর শংকারপুর এলাকার বাঁধটি যেন সোনার ডিম দেওয়া হাঁসের মতন। মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরাদ্দ থেকে শুরু করে দেওয়া হয় কাবিখার বরাদ্দ, তবুও ভাঙে বছর বছর।
এলাকাবাসি জানায়, ঝিনাই নদীর বাঁধটি প্রতি বছর একইস্থানে ভাঙে। অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছর কৃষকের ক্ষতির পরিমান অনেক বেশি হয়েছে। কোনাবাড়ি, শংকরপুর, হেলনাপাড়া মৌজার প্রায় ২৫০ বিঘা জমির আমন ধান সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। দেড়িতে বন্যার পানি আসায় নিচু জমিতেও কৃষক লাগিয়েছিলেন রোপা আমন।
কোনাবাড়ি গ্রামের কৃষক মফিজ উদ্দিন ও হেলনাপাড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে আমাগো কাম-কাজ নাই। ধার-দেনা কইরা ধান বুনছিলাম, পানি সব ভাসাইয়া দিলো।
শংকরপুর গ্রামের মাদরাসা শিক্ষক শফিউল আলম জানান, বাঁধ ভাঙার কারণে তার প্রায় ১৮ বিঘা জমির ধান এখন পানির নিচে। এটি শুধু বাঁধই নয়, গরজনা, শংকরপুর, দিঘলআটা, বলআটা, চরবীরসিংহ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের চলাচলের রাস্তাও এটি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলশাদ জাহান বলেন, মাঠ পর্যায় থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে ওই এলাকায় আমন আবাদের ২৫০ বিঘা জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত বছরও ওই এলাকার কৃষক একই কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থ বছরে জরুরী ভিত্তিতে ১০০ মিটার বাঁধ মেরামতের জন্য ৯ লাখ ৭৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাঁশের খুটি, বালু এবং জিআই তারের টানা দিয়ে কাজ করা হয়। সব টাকাই এখন পানির নিচে।
একইস্থানে ২০২০-২১ অর্থ বছরে কাবিখার ৪ টি টিআর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। যার টাকার পরিমাণ দুই লাখ। প্রকল্প আসে কিন্তু টাকার লুটপাটের কারনে স্থায়ী বাঁধ আর হয়না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার যোগসাজশে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নামমাত্র কাজ করে শুধু টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। বাঁধের জন্য বার বার বরাদ্দ এলেও কাজের কাজ কিছুই হয়না।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, বাঁধে অর্ধেক টাকার মাটি ভরাটের কাজ করা হয়েছে বাকি অর্ধেক টাকার কাজ না হওয়ায় ফেরত দেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, এর আগের অর্থ বছরও ওইস্থানে কাবিখার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঝিনাই নদীর ধারের রাস্তাটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো বাঁধ নয়। ঘাটাইলের ইউএনও মহোদয়ের অনুরোধে জরুরী ভিত্তিতে বরাদ্দ দিয়ে সংস্কার করা হয়েছিল। ওপরের নির্দেশনা পেলে বাঁধটির স্থায়ীভাবে কাজ করা হবে।
ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.সোহাগ হোসেন বলেন, উপজেলায় আমি সদ্য যোগদান করেছি। বাঁধটি পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এমএন