চলছে ইলিশের আকাল। উৎকণ্ঠায় রয়েছেন মৎস্যজীবীরা। বরগুনার জেলেরা ইলিশ শিকারে গিয়েছেন গভীর বঙ্গোপসাগরে। আশানুরূপ ইলিশ না পাওয়ায় তারা হতাশ হয়ে পড়েছে। মূলধনের শতকরা ৩০ ভাগ টাকাও উঠে না আসার আশঙ্কা করছেন ট্রলার মালিকরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রজনন মৌসুমের অবরোধ শেষে প্রথম সপ্তাহেই বোঝা যাবে ইলিশের প্রজননকালীন অবরোধ সঠিক ছিল কি না। শীতেও সাগরে পর্যাপ্ত ইলিশ পাওয়া যাবে বলে ধারণা করছেন অনেকে।
পাথরঘাটার ট্রলার মালিক আলম একজন প্রকৃত জেলে ও সাগর-কেন্দ্রিক মৎস্য সম্পদ আহরণে বড় বিনিয়োগকারী। তারা ৮টি ট্রলার দিয়ে মাছ ধরেন। এ খাতে তার মূলধন বিনিয়োগ ৩ কোটি টাকার ওপরে। এ বছরে তিনি জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে শুরু ইলিশ মৌসুমে মাছ শিকারের জন্য সাগরে ট্রলার পাঠিয়েছেন। এতে জ্বালানি, রসদ ও শ্রমিকদের আহার ও নগদ টাকা হিসাব করে প্রতি ট্রলারে খরচ হয় ২০ লাখ টাকা। মাছ বিক্রি থেকে তিনি পেয়েছেন মাত্র ৩০ লাখ টাকা। কম বেশি তার সব ট্রলারের চিত্র একই রকম এবং উপকূলের সব জেলের লাভের হিসাব কমবেশি প্রায় অভিন্ন। তিনি দাবি করেন, এ বছর প্রজনন মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা সময়কাল নির্ধারণ সঠিক হয়নি। কারণ, অবরোধের শুরুতে ধরা ১০ ভাগ ইলিশের পেটে ডিম দেখা যায়নি।
একই কথা বলেছেন বরগুনার ট্রলার মালিক আবদুস সালেক। তার কথায়, আরও সময় বৃদ্ধি করা হলে মা ইলিশ বেশি ডিম দিতে পারতো। তিনি আরও বলেন, ইলিশ মৌসুমের জ্যৈষ্ঠ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত পাঁচ মাসের মধ্যে ৬৫ দিন ও ২২ দিনের অবরোধ ছিল। এখানেই প্রায় তিন মাস গেছে। বাকি দুই মাসে একাধিকবার লঘুচাপ, নিম্নচাপ ও সাইক্লোনের জন্য সাগরে যেতে বাধা। স্বাভাবিকভাবেই এ বছর তাদের বিনিয়োগ উঠবে না। ১৫-১৭ জন শ্রমিক নিয়ে সাগরে ট্রলার পাঠিয়ে খরচের ৩০ শতাংশ টাকাও হাতে পাননি।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী আরটিভি নিউজকে বলেন, ভরা মৌসুমে সাগর থেকে শূন্য হাতে ফেরা। বাকিতে জ্বালানি এবং জেলেদের জন্য চাল-ডাল কিনতে না পারায় তাদের সাগরে পাঠানো যাচ্ছে না।
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ, অ্যাকোয়াকালচার অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী আরটিভি নিউজকে জানান, এ বছর সরকারের ইলিশ প্রজননকালের অবরোধের ফলে মাছের সন্তোষজনক বংশবৃদ্ধি হবে।
তবে প্রজননকালীন নিষেধাজ্ঞা আরও প্রলম্বিত হওয়া উচিত কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বোঝা যাবে অবরোধ-উত্তর প্রথম সপ্তাহে শিকার করা মাছের পেটে ডিমের পরিমাণ কেমন তা দেখে। মাছে ডিমের পরিমাণ ৬০ ভাগের বেশি হলে অবরোধের সময় নির্ধারণে বিজ্ঞানসম্মত চিন্তা করতে হবে।
জিএম/এসকে