কারও ঠাঁই হাসপাতালের মেঝেতে, কারও সিড়ির ওপরে, কেউ অবস্থান করছে সিটে কেউ বা সিটের নিচে। অতিরিক্ত রোগীর চাপে বারান্দায় হাটার ব্যবস্থা নেই। সবাই ছুটছে নিজের আদরের ছোট্ট শিশুটিতে বাঁচাতে। নোয়াখালী দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বর্তমান চিত্র এটি। মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর ) সকালে সরেজমিনে গিয়ে এই দৃশ্য চোখে পড়ে।
প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুরা। এরমধ্যে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে শিশুরা। গত তিন দিনে এই দুইটি রোগে আক্রান্ত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে ৫০জন শিশু। এতে ৫০ শয্যার হাসপাতালটি শিশুসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগীর চাপে হিমশিম খাচ্ছে।
হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত সিনিয়র নার্স রুপা বেগম আরটিভি নিউজকে জানিয়েছনে, গত তিনদিনে শুধু ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৫০ জন শিশু ভর্তি হয়েছে। শিশু ছাড়া অন্যান্য রোগেও ভর্তি আছেন অনেকে। গতকাল সোমবার বিকেল পর্যন্ত ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৭৪ জন। এরমধ্যে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশু রয়েছে ৩৭ জন। হাসপাতালটির শয্যা সংখ্যা ৫০টি। অতিরিক্ত রোগীদেরকে বাধ্য হয়ে হাসপাতালের মেঝেতে অবস্থান করতে হচ্ছে।
মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায় শিশু ও মহিলা ওয়ার্ড সম্পূর্ণ পরিপূর্ণ হয়ে অনেকে বারান্দায় অবস্থান করছে। মহিলা ওয়ার্ডের সামনে বারান্দায় বসার জায়গায় ছোট শিশুকে নিয়ে বসে আছে সুফিয়া বেগম (৩৫) নামে একজন।
আলাপকালে পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্ধা সুফিয়া আরটিভি নিউজকে জানিয়েছেন, রোববার বিকালে ডাইরিয়া আক্রান্ত সন্তান আয়েশাকে (২) নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। সিট না থাকায় বারান্দায় থাকতে হয়েছে তাকে। গত ৪৮ ঘণ্টা এভাবে কেটেছে তিনিসহ তার অসুস্থ্য শিশুটির। খোলামেলা জায়গায় হওয়ায় রাত কাটাতে অনেক কষ্ট হয়েছে তাদের। শীতের মধ্যে বাতাস আটকানোর জন্য বাড়ি থেকে আনা কাপড় দিয়ে বেড়া তৈরি করে নিয়েছেন।
সুফিয়ার মত অনেকের অবস্থান বারান্দায়। হাসপাতালের অতিরিক্ত চাপ কমাতে বারান্দায় কিছু সিট বসিয়ে রোগীদের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
হাতিয়া উপজেলায় ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় প্রায় ৭ লাখ লোকের বসবাস। চরাঞ্চলসহ এই ৭ লাখ লোকের ভরসা ৫০ শয্যার এই হাসপাতালটি। জরুরি প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসার জন্য এখান থেকে মাঝে মধ্যে অনেক রোগীকে নদী পাড়ি দিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়।
এ ব্যাপারে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার নাজিম উদ্দিন বলেন, ৫০ শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিনই ধারণ ক্ষমতার বেশি রোগী ভর্তি হয়ে থাকে। এরমধ্যে ডাইরিয়া ও নিউমোনিয়ায় প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমিত সংখ্যক জনবল নিয়ে মোকাবিলা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এমআই