দিনভর বিদ্যুৎ না থাকায় টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল টিকাকেন্দ্রে এসে টিকা না পেয়ে ফিরে গেছেন লোকজন। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ফাইজারের টিকা দিতে গেলে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় টিকা সংরক্ষণ করতে শীততাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকতে হয়। ফলে বিদ্যুৎ না থাকলে টিকা কার্যক্রম চালানো সম্ভব হয় না।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানা গেছে, শুক্রবার বিরতি দিয়ে যথারীতি শনিবার (২২ জানুয়ারি) করোনার টিকাদান কর্মসূচি চালুর কথা ছিল। কিন্তু জেলার প্রধান সঞ্চালন লাইনে আজ মেরামতের কাজ থাকায় বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় টিকা সংরক্ষণ করতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকতে হয়। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে না রাখলে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। এ জন্য দিনভর টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ ছিল। বিকেলের দিকে বিদ্যুৎ আসলেও ওইসময় আর টিকাদান চালু করা যায়নি। ফলে শীতের সকালে আসা বহু মানুষ টিকা না পেয়ে হতাশ হয়েছেন।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার লাউজানা রাজমিস্ত্রী আরিফুল ইসলাম আরটিভি নিউজকে বলেন, দৈনিক মজুরি ৫০০ টাকা। দুই সন্তান ও স্ত্রীসহ চারজনের সংসার চলে এই আয়েই। টিকা নেবেন বলে আজ কাজে যাননি। সকাল ১০টায় টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ টিকাকেন্দ্রে এসে জানতে পারেন আজ টিকা দেওয়া হবে না। বিদ্যুৎ নেই তাই টিকা দেওয়া বন্ধ! আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, টিকা তো পেলাম না, সেই সঙ্গে আজকের উপার্জনটাও হাতছাড়া হলো।
পৌলী এলাকার ৮৫ বছর বয়সী আতোয়ার আলী আরটিভি নিউজকে বলেন, নভেম্বর মাসে ফাইজারের প্রথম ডোজ নিয়েছিলাম, আজ দ্বিতীয় ডোজ নিতে এসেছি। আমি বয়স্ক মানুষ, আসতে অনেক কষ্ট হয়। তবুও এসেছি। কিন্তু আসার পর বলে আজ টিকা দিবে না। আবার আসতে হবে। কী আর করব, যেভাবে করোনা বাড়তেছে না নিয়েওতো উপায় নাই!
আলোকদিয়া গ্রামের সুজাত আলী বলেন, বাড়ি থেকে এখানে আসতে ১০০ টাকা খরচ হয়। সারাটা দিন চলে যায়। কাজ করা বাদ দিয়া আসলাম। কিন্তু টিকা পেলাম না। আবার টাকা খরচ করে, দিন কামাই করে আসতে হবে।
করটিয়া কামরুল আলম সিদ্দিকী ও তার স্ত্রী হোসনে আরা, এলেঙ্গা থেকে আসা মদন মোহন, সদর উপজেলার গালা ইউনিয়নের রিতা আকারসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে টিকা নিতে আসা অনেকেই আরটিভি নিউজকে জানিয়েছেন, আজ যে টিকা দেওয়া হবে না সেটি আগে থেকে জানালে ভালো হতো। বাড়ি থেকে আসতে একদিকে যাতায়াত বাবদ খরচ হয়েছে, অন্যদিকে দিনটাও গেল বিনা কাজে।
সদর উপজেলায় বিদ্যুৎ না থাকার বিষয়ে টাঙ্গাইল বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের (পিডিবি) উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সাহাদত হোসেন আরটিভি নিউজকে বলেন, প্রধান সঞ্চালন লাইনে আজ বাৎসরিক মেরামতের কাজ করা হচ্ছে। এ কারণে জেলার বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎ নেই। এ বিষয়ে আমরা আগেই প্রচার প্রচারণা করেছি যাতে মানুষের দুর্ভোগ কম হয়।
টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন আরটিভি নিউজকে বলেন, ফাইজারের ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করতে হয় ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায়। ডাইলুয়েট রাখতে হয় ১৫ থেকে ২৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায়। যে কারণে ভ্যাকসিন সেন্টারে শীততাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু রাখতে হয়। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে না রাখলে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। বিদ্যুৎ না থাকায় আজ ভ্যাকসিন বন্ধ রাখতে হয়। টিকা নিতে আসা মানুষের এই ভোগান্তির জন্য দুঃখও প্রকাশ করেন সিভিল সার্জন।
এমআই/টিআই