জয়পুরহাট সদর উপজেলায় এলজিইডির রাস্তা সংস্কারের কাজে কৃষকদের ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। রাস্তার দুই পাশের ফসলি জমি থেকে মাটি নেওয়ার অনুমতি না থাকলেও এস্কেভেটর (ভেকু) মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে খনন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কৃষক ও জনপ্রতিনিধিরা।
জয়পুরহাট সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অশোক ঠাকুর বলেন, ঠিকাদারকে অন্য জায়গা থেকে মাটি কেনার জন্য এলজিইডি অর্থ বরাদ্দ দিলেও অসাধু ঠিকাদার কৃষকদের অর্থ না দিয়েই তাদের ফসলি জমি থেকে মাটি নিচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার ভাদশা ইউনিয়নের দূর্গাদহ বাজার থেকে হরিপুর পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার রাস্তা এলজিইডির ব্যাবস্থাপনায় বর্ধিত ও কার্পেটিং করার কাজ চলছে। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
কাজের জন্য অন্য কোথাও থেকে মাটি সরবরাহের চুক্তি থাকলেও নওগাঁর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান `ইথান এন্টারপ্রাইজ’ স্থানীয় কৃষকদের ফসলি জমি থেকে মাটি নিচ্ছে। এজন্য এস্কেভেটর দিয়ে দুই পাশে পাঁচ থেকে আট ফুট গভীর এবং ছয় থেকে আট ফুট চওড়া করে খনন করা হচ্ছে।
সংস্কারাধীন ওই রাস্তার পার্শ্ববর্তী ছাওয়ালপাড়া গ্রামের একই এলাকার ডাবলু চন্দ্র, আব্দুল হাকিম, সেলিনা বেগম, বাদল চন্দ্র আরটিভি নিউজকে বলেন, ঠিকাদার খুব প্রভাবশালী। তাই আগে থেকে কোনো নোটিশ না দিয়ে বা না জানিয়েই রাস্তার দুই পাশে তাদের জমি থেকে আলু, সরিষা, কলাগাছ ও ধান নষ্ট করে আট ফুট পর্যন্ত চওড়া ও গভীর গর্ত করে জোর করে মাটি নেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় সহজ সরল গ্রামের কৃষকরা তাদের ফসলি জমি থেকে মাটি কাটতে বাধা দিলে কোনো কিছুই তোয়াক্কা না করে উল্টো হুমকি দিচ্ছেন এমন অভিযোগ দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে। এছাড়াও রাস্তার দু'পাশে সরু গভীর হওয়ায় রাস্তাও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
তরিকুল ইসলাম, হারুনুর রশিদসহ অনেক কৃষক আরটিভি নিউজকে বলেন, ঠিকাদারের লোকজন বলেছিলেন এটা সরকারি কাজ। তবে এখন নিশ্চিত হয়েছি এই মাটি কাটা ও রাস্তার কাজ সরকারের নয়, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান করছে। তাই আমরা ক্ষতি পূরণও দাবি করছি।
এ ব্যাপারে সত্যতা নিশ্চিত করে স্থানীয় ভাদসা ইউপি’র সংশ্লিষ্ট মেম্বার লিটন আরটিভি নিউজকে জানিয়েছেন, আমি এলাকার কৃষকদের অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি ঠিকাদার মেশিন দিয়ে সাত থেকে আট ফুট পর্যন্ত গভীর করে প্রায় আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার খাল খনন করেছেন। এতে প্রায় একশ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময় আমি বাধা দিলেও আমার কথাও শোনেনি।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির এস্কেভেটর চালক জয়নাল আবেদিনের কাছে এ বিষয়ে চাইলে তিনি বলেন, ঠিকাদারের ম্যানেজার যা বলে আমরা তাই করি। যেখানে দেখে দিচ্ছে, সেখানেই মাটি কাটি।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার নুর আলম সিদ্দিক সাংবাদিকদের সঙ্গে ‘খারাপ আচরণ’ করেন।
তিনি বলেন, আপনাদের এখানে কি? নিউজ করবেন, করেন। রুলস-রেজুলেশনের বাইরে কোনো মাটি কাটা হয়নি। যা রুলস সে রুলস অনুযায়ী মাটি কাটা হচ্ছে। অফিসের অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেন।
এ নিয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইথান এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী রাসেলকে ফোন করা হলে তিনি জরুরি কাজে ব্যস্ত আছেন বলে লাইন কেটে দেন।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মোবারক হোসেন বলেন, ঠিকাদারকে অন্যত্র থেকে মাটি আনতে অথবা কৃষকদের বা ফসলের ক্ষতি না করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা না হলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।