৬৪ জেলার মাটির সমন্বয়ে এক অভিনব মানচিত্র তৈরি করেছে ভেদরগঞ্জের মানিক। মানচিত্রে প্রতিটি জেলার মাটি ব্যবহার করা হয়েছে শরীয়তপুর জেলার চিত্রে; যা দর্শনার্থীদের করেছে বিমোহিত। তাই তো দিনে দিনে বাড়ছে দর্শনার্থী।
শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার গৈড্যা গ্রামের যুবক মানিক হোসেন। প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে ভেদরগঞ্জ বাজারে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন একটি উন্মুক্ত পাঠাগার। এখান থেকেই শুরু তার সৃজনশীলতা, ভালোবাসা ও ভালো লাগা । দেশের প্রতি অনন্য ভালোবাসা পারে এমন ব্যতিক্রমী মানচিত্র তৈরির আগ্রহ জাগাতে। মানচিত্রটি স্পর্শ করলেই ৬৪ জেলাকে স্পর্শ করা হবে।
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার গৈড্যা গ্রামের যুবক মানিকের তৈরি করা বাংলাদেশের ব্যতিক্রমী মানচিত্রের কথা। যে মানচিত্রটি থেকে পাওয়া যাবে দেশের সব জেলার মাটির গন্ধ ও মনোতৃপ্তি। এমন প্রত্যাশা নিয়ে গত দুই বছর চার মাস সময় নিয়ে দেশের ৬৪ জেলা থেকে মাটি সংগ্রহ করে বাংলাদেশের এই ব্যতিক্রমী মানচিত্র বানিয়েছেন মানিক। মনের আবেগ ও ভালোবাসা দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন এই মানচিত্রটি।
জানা গেছে, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার ভেদরগঞ্জ বাজার একটি ভবনের ছাদে তিনটি কক্ষে প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে মানিক এই উন্মুক্ত পাঠাগারটি গড়ে তোলেন। ২০০২ সালের এসএসসি ব্যাচের বন্ধুদের কাছ থেকে কুরিয়ার ও ডাকঘরের মাধ্যমে ৫৯ জেলার মাটি সংগ্রহ করেন মানিক। আর বাকি পাঁচ জেলার মাটি তিনি সরাসরি গিয়ে সংগ্রহ করেন। শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার গৈড্যা গ্রামের যুবক মানিক হোসেন দেশের প্রতিটি জেলা থেকে সংগ্রহ করে মাটি দিয়ে তৈরি করেছেন ব্যতিক্রমী এই মানচিত্র। ৬৪ জেলার মাটি সংগ্রহ করে তৈরি করা এই মানচিত্রটি ইতোমধ্যে স্থান করে নিয়েছে সব মানুষের মনে। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে মানচিত্রটি দেখতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আসছেন ভেদরগঞ্জ বাজারে মানিকের উন্মুক্ত গ্রন্থাগারে। গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ডে স্বীকৃতির আবেদন জানিয়েছেন অনেকে। মানচিত্রটির দৈর্ঘ্য আড়াই ফুট, প্রস্থ ৩ ফুট। মানচিত্রটি রাখা হয়েছে ভেদরগঞ্জ বাজারের মানিকের উন্মুক্ত গ্রন্থাগারে। কাচঘেরা স্টিল ও কাঠের বাক্সে রাখা হয়েছে মানচিত্রটি। মানচিত্রটির পাশাপাশি গ্রন্থাগারে রয়েছে বিভিন্ন রকম বই, খেলাধুলাসামগ্রী, মাটির তৈরি মৃৎশিল্পের শোপিস, পত্রিকা, মানিকের নিজের হাতে তৈরি শোপিস, শিশুদের খেলনা, বিভিন্ন দেশের মুদ্রা-কয়েন। এ ছাড়া গ্রন্থাগারের বাহিরে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছে ভরা সবুজের সমারহ। সব মিলিয়ে মনোরম পরিবেশে সময় কাটানোর চমৎকার একটি জায়গা হলো এই গ্রন্থাগারটি।
ব্যতিক্রমী মানচিত্রের উদ্ভাবক মানিক বলেন, গেল প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে আমি উন্মুক্ত গ্রন্থাগার নামে একটি পাঠাগার গড়ে তুলি। এই পাঠাগারটি গড়ে তোলা আমার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো যুবসমাজকে মোবাইল আসক্তি থেকে ফিরিয়ে বইমুখী করার ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র। আমাদের এই গ্রন্থাগারে বইয়ের পাশাপাশি রয়েছে, শিশুদের ও বড়দের খেলারসামগ্রী, বৈদেশিক মুদ্রা কয়েন। এর পাশাপাশি আমি চিন্তা করেছি নতুন কিছু করার। সেই নতুন চিন্তার ফসল হচ্ছে আমার এই ৬৪ জেলার মাটির সমন্বয়ে গড়া বাংলাদেশের মানচিত্রটি। মানুষ যাতে এক জায়গা থেকে সারা বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মাটির গন্ধে ঘ্রাণ নিতে পারে এবং দেখতে পারে কোন জেলার মাটির রং কেমন। এই মানচিত্রটি তৈরি করতে আমার সময় লেগেছে ২ বছর ৪ মাস। সারাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আমাকে মাটি পাঠিয়ে সহায়তা করেছেন আমাদের এসএসসি ২০০২ ব্যাচের বন্ধুরা। আমাকে বিভিন্নভাবে যারা সহায়তা করেছেন সকল বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
মানচিত্রটি দেখতে আসা আরেক নারী বইপ্রেমী আরটিভি নিউজকে বলেন, আমি এর আগে বহুবার এই উন্মুক্ত গ্রন্থাগারে এসেছি। প্রায় সময় এখান থেকে বই নিয়ে পড়ি আবার পড়া শেষ হলে দিয়ে যাই। কিন্তু আজ নতুন বই নিতে এসে এক অন্যরকম ব্যতিক্রমী একটি মানচিত্র এখানে দেখতে পেলাম। যে মানচিত্রটি আমাকে খুব সহজে সমগ্র বাংলাদেশের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। যেই মানচিত্রের পাশে দাঁড়ালে একনজরে দেখে নেওয়া যায় বাংলাদেশের কোন জেলার মাটির রং কেমন। সেইসঙ্গে নেওয়া যায় বাংলাদেশের মাটির গন্ধ। সমগ্র জেলা ঘোড়া ও যেমন সম্ভব নয় তেমনি সমগ্র জেলার মাটির ঘ্রাণ কালার একসঙ্গে দেখা সম্ভব নয়। কিন্তু সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে দিয়েছেন আমাদের মানিক ভাই। আমার মনে হয় মানিক ভাইয়ের এই মানচিত্রটি গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ডে জায়গা করে নিতে পারে।
উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিরক আরটিভি নিউজকে বলেন, আমি মানিক ভাইয়ের ফেসবুকে ব্যতিক্রমী এই মানচিত্রটির ছবি দেখেছি। ছবিটি দেখার পর থেকেই আমার মানচিত্রটিকে ছুঁয়ে দেখার ভীষণ ইচ্ছা জাগে। তাই আজ আমি এখানে এসেছি মানচিত্রটি ঘুরে ঘুরে দেখলাম এবং স্পর্শ করলাম। আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। তারচেয়েও বড় ব্যাপার হচ্ছে আমি একজায়গায় বসে সারা বাংলাদেশের মাটি দেখতে পাচ্ছি; যা অন্য কোনোভাবে কখনোই সম্ভব নয়। এমন একটি কাজের জন্য মানিক ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
ভেদরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবুল বাশার চৌকিদার বলেন, আমি মানিকের উন্মুক্ত গ্রন্থাগার পরিদর্শনে এসে নতুন জিনিস দেখতে পেলাম, যা এর আগে আমি কখনো দেখিনি বা শুনিনি। এখানে তিনি বিভিন্ন জেলা থেকে মাটি সংগ্রহ করে ব্যতিক্রমী অত্যন্ত চমৎকার একটি মানচিত্র তৈরি করেছেন, যা আমাকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করেছে এবং দেশের মাটির প্রতি ভালো লাগার মানসিকতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এটা এমন একটি মানচিত্র যেটাকে ছুঁলে সমগ্র বাংলাদেশকে ছুঁয়ে দেখা হয়। এ যেন এক ভিন্ন অনুভূতি।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর আল-নাসিফ বলেন, মানিকের এই অভিনব মানচিত্রটি আসলেই মুগ্ধ করেছে আমাকেসহ স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে। এমন উদ্যোগে আমরা সব সময়ই মানিকের পাশে আছি। দেশের প্রতি ভালোবাসা এই মানচিত্রে তা ফুটে উঠেছে। এ এক ভিন্ন রকম ভালো লাগা। এর আগে আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মানিকের উন্মুক্ত পাঠাগারে বইসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম দিয়েছি প্রয়োজনে আরও কিছু লাগলে দেওয়া হবে।
শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) পারভেজ হাসান বলেন, যুবসমাজকে মোবাইল আসক্তি থেকে সরিয়ে বই পড়ার দিকে ধাবিত করার লক্ষ্যে ভেদরগঞ্জের সৃজনশীল যুবক মানিক সাড়ে তিন বছর আগে বিভিন্ন প্রজাতির গাছে ভরা সবুজের সমারহ বইয়ের সংগ্রহশালা গড়ে তোলা হয়েছে মনোযোগ একটি উন্মুক্ত গ্রন্থাগার। সব মিলিয়ে মনরোম পরিবেশে সময় কাটানোর চমৎকার একটি জায়গা হলো এই গ্রন্থাগারটি। জেলা উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এই গ্রন্থাকারে আসেন এবং বই পড়েন এখন পাশাপাশি দেখতে পাবেন ব্যতিক্রমী মানচিত্রটি।
দেশের ৬৪ জেলার মাটির সমন্বয়ে তৈরি করেছেন ভীষণ চমৎকার একটি মানচিত্র; যার মধ্যে রয়েছে ভালো লাগা ভালোবাসা দেশের প্রতি অগাধ প্রেমের বহিঃপ্রকাশ।