বন্ধুকে হত্যার পর মোবাইল বিক্রির টাকায় বান্ধবীকে নিয়ে হোটেলে কিশোর
মোবাইল ফোনের জন্য স্কুলছাত্র নওফেল শেখকে (১৪) খুন করেছে তারই বন্ধু। এ ঘটনায় অভিযুক্ত কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার (২৭ জুন) দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকার টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত ওই কিশোরের বাড়ি শাজাহানপুর। কিন্তু সে ঢাকায় তার বড় ভাইয়ের সঙ্গে লন্ড্রির দোকানে কাজ করত। খুনের ঘটনার পর মোবাইল বিক্রির কাজে জড়িত ওই কিশোরের কথিত বান্ধবীকে (২০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২৮ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী নিজ কার্যালয়ে এক প্রেস কনফারেন্সে এসব তথ্য জানান।
এর আগে, গত ২০ জুন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শাজাহানপুরের খরনা ইউনিয়নের দাড়িগাছা গ্রামের জঙ্গল থেকে নওফেলের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সে উপজেলার খরনা ইউনিয়নের দাড়িগাছা হাটপাড়া গ্রামের ইসরাফিলের ছেলে এবং দাড়িগাছা ইসলামিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র।
পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, নওফেল এবং হত্যায় অভিযুক্ত কিশোর একে অপরের বন্ধু ছিল। তারা একসঙ্গে চলাফেরা করত এবং দাড়িগাছা গ্রাম থেকে দুই কিলোমিটার দূরের একটি জঙ্গলে গিয়ে মাঝেমধ্যে ধূমপান করত।
প্রায় দুই মাস আগে নওফেলের বাবা শখের বশে জমি বিক্রির টাকা দিয়ে নওফেলকে ১৮ হাজার টাকা দিয়ে একটি মোবাইল কিনে দেন। নওফেলের সেই নতুন ফোন কীভাবে পাওয়া যায় সেই পরিকল্পনা করতে থাকে ওই কিশোর। গত ১৮ জুন নওফেলের জন্মদিন থাকায় ওই কিশোর নওফেলকে ওই জঙ্গলে গিয়ে ধূমপান করে একটু আনন্দ করে আসার প্রস্তাব দেয়। সেদিন জন্মদিন থাকায় নওফেল উৎফুল্ল ছিল এবং সে তার কথায় রাজি হয়ে যায়।
ওই কিশোর নওফেলকে হত্যা করে সেই স্মার্ট ফোনটি পাওয়ার পরিকল্পনা মাফিক তার গলায় পূর্ব থেকেই একটি মাফলার রাখে। পরে ওইদিন বেলা ১১টার দিকে ধূমপান করার জন্য নওফেল ও ওই কিশোর দাড়িগাছা গ্রামের ফুলবাড়ীয়া এলাকায় বাগানের মধ্যে যায়।
নওফেল জঙ্গলের একটি গাছের সঙ্গে হেলান দিয়ে ধূমপান করার একপর্যায়ে ওই কিশোর তার গলায় থাকা ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি লম্বা মাফলার হাতে নিয়ে নওফেলকে বলে, ‘মামা তোমাকে যদি এই মাফলার দিয়ে সিনেমার স্টাইলে খুন করা হয় তাহলে কেমন হবে। তখন নওফেল হেসে বলে যে, ‘মামা তুমি তো আমকে খুন করবে না।’ তখন অভিনয়ের ছলে ওই কিশোর মাফলার দিয়ে নওফেলের গলায় দুটি প্যাঁচ দিয়ে গাছের সঙ্গে শক্ত করে পেছন দিক থেকে টেনে ধরে।
এতে নওফেল ছটফট করতে থাকে এবং একপর্যায়ে মারা যায়। নওফেল নিস্তেজ হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে ওই কিশোর তখন নওফেলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য পাশের জমিতে থাকা একটি বাঁশের লাঠি হাতে নিয়ে নওফেলের মাথায় পরপর দুটি আঘাত করে। এতেও নওফেল নড়াচড়া না করলে ওই কিশোর নিশ্চিত হয় যে নওফেল মারা গেছে। তখন ওই কিশোর ঘটনাস্থল থেকে ১০ থেকে ১৫ হাত দূরে ঝোপের ভেতর নওফেলের মরদেহ টেনে নিয়ে গুম করে রাখে। পরে নওফেলের স্মার্ট ফোনটি নিয়ে সবার অগোচরে চলে যায় ওই কিশোর।
পুলিশ সুপার বলেন, ওইদিন দুপুর ১টার দিকে ওই কিশোর তার বান্ধবীকে মোবাইল ফোনে শেরপুর থেকে ডেকে নিয়ে বগুড়া শহরের সাতমাথা একটি পুরাতন মোবাইল ক্রয়-বিক্রয়ের দোকানে যায়। তারা ভাই-বোনের পরিচয় নিয়ে নিজেদের অভাব অনটনের কথা বলে নওফেলের ওই মোবাইল ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে। সেখান থেকে তারা দুইজন বগুড়া শহরের গালা পট্টিতে অবস্থিত একটি হোটেলে মোবাইল বিক্রির দুই হাজার টাকা দিয়ে একটি রুম ভাড়া করে সময় কাটায়। পরে ওই কিশোর তার এক বন্ধুকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ওই মেয়ের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য আসতে বলে। পরে মোবাইল বিক্রির দেড় হাজার টাকা বান্ধবীকে দিয়ে তারা যার যার এলাকায় চলে যায়।
পরে ২০ জুন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে খরনা ইউনিয়নের দাড়িগাছা গ্রামের জঙ্গল থেকে নওফেলের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তখন চারদিকে খবর ছড়িয়ে পড়লে খুনি ওই কিশোর ঢাকায় দিয়ে আত্মগোপন করে। পরে পুলিশের ব্যাপক অভিযানে ঢাকার টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকা থেকে ২৭ জুন দুপুর দেড়টার দিকে খুনি ওই কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং হত্যার কাজে ব্যবহৃত সেই মাফলার উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, এ ঘটনায় জড়িত কিশোরকে আজ আদালতে পাঠানো হবে। এ ছাড়াও মোবাইল বিক্রিতে সহায়তাকারী ওই নারীও আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুর রশিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোতাহার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) হেলেনা খাতুন এবং শাজাহানপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন।
মন্তব্য করুন