‘আই জাগা–সম্পত্তি কিছু ন চাই, আর পুতরে আনি দে (আমি জায়গা-সম্পত্তি কিছু চাই না, আমার ছেলেকে এনে দাও),’ ঘরের মেঝেতে বসে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে এভাবে বিলাপ করতে থাকেন শাহনাজ আক্তার। তাকে ঘিরে বসে আছেন স্বজনেরা। কেউ বিলাপ করছেন আর কেউ শাহনাজকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। কিছুক্ষণ পরপর চিৎকার দিয়ে উপস্থিত সবাইকে বলছেন তার বুকের ধন জিয়াউল হক সজীবকে (২১) ফিরিয়ে দিতে।
গতকাল শুক্রবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যায় সজীবের মায়ের আহাজারি শোনা যাচ্ছিল হাটহাজারীর চিকনদণ্ডী ইউনিয়নের আমানবাজার এলাকার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কবির লাইনম্যান বাড়ির বাইরে থেকেও। সজীবের মায়ের আহাজারিতে উপস্থিত অন্যদের চোখেও পানি এসে যায়।
বিলাপ করতে করতে শাহনাজ বলেন, আমার ছেলেকে গলার আর কানের সোনা বন্ধক দিয়ে ২৫ হাজার টাকা দিয়েছি। লালিয়ারহাট একটা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে দিয়েছি ৫০ হাজার। আমাকে বলেছে টাকা আসতে দেরি হচ্ছে, লোন নিয়ে দেন। আমি কী করব, ব্যাংকে আগে থেকেই ছিলাম, লোন নিয়ে দিয়েছি। আমি খবর পেয়েছি দেড়টা-দুইটার দিকে। আমার জা বলছে গাড়ি অ্যাকসিডেন্ট করেছে, একটু খবর নেন। আমি ছাদে ছিলাম। কিভাবে নেমেছি জানি না। আমার কাঁপুনি শুরু হয়েছে। তখন কল দিচ্ছিলাম তাদের, কল যাচ্ছে না। পরে একটা পুলিশ ফোন করেছে।
-
আরও পড়ুন... ‘বাবা আমি চলে যাব, আমার জন্য দোয়া করিয়েন’
আর্তনাদ করে শাহনাজ বলতে থাকেন, ‘ওরে পুত, কেন গেলি? ১০ মিনিট ট্রেন অপেক্ষা করলে কিচ্ছু হতো না। ট্রেনের ট্রাফিক ছিল না, নামাজ পড়তে গেছিল। রেললাইনে কী গাড়ি বন্ধ থাকে? ‘... ওরে পুত কেন গেলি, কেন গেলি?’
মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া রেলস্টেশন এলাকায় শুক্রবার বেলা সোয়া ১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণ হারান মাইক্রোবাসের চালকসহ ১১ আরোহী।
নিহত আরেকজন কে এস নজুমিয়া স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী ইকবাল হোসেন মারুফ। তার মা কামরুন নাহার (৪৬) বিলাপ করে বলছিলেন, আমি কাকে নিয়ে থাকব। কিভাবে বাঁচব, তোরা আমার ধনকে ফিরিয়ে দে। আবদুল ওয়াদুদ মাস্টারের বাড়ির বাসিন্দা মারুফের মায়ের কান্নায় অন্যদেরও চোখ মুছতে দেখা গেছে।
-
আরও পড়ুন... একসঙ্গে ১১ জনের মৃত্যুতে স্তব্ধ খন্দকিয়া গ্রাম
স্বজনরা জানায়, মারুফের বাবার সঙ্গে মায়ের সম্পর্ক না থাকায় তিন সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বসবাস করেন কামরুন। মারুফসহ তিন সন্তানকে নিয়ে তিনি অনেক কষ্টে জীবন যাপন করছেন।