ঢাকাশনিবার, ০৩ মে ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২

টাকা পরিশোধ করার পরও ঋণগ্রস্ত শতাধিক কৃষক

বি এম ফারুক (যশোর)

সোমবার, ২৮ নভেম্বর ২০২২ , ০৮:৪৭ পিএম


loading/img

যশোরে জনতা ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির শিকার হয়েছে শতাধিক কৃষক। ঋণের টাকা পরিশোধ করার পরও তাদেরকে ঋণগ্রস্ত দেখানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) ঋণ মেলায় এসে টাকা পরিশোধ করার জন্য চিঠি দিয়েছে। ফলে এসব কৃষক এখন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, জনতা ব্যাংকের চাঁচড়া শাখা থেকে সদরের করিচিয়া গ্রামের কৃষক ইব্রাহিম হোসেন ২০১১ সালে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নেন। ২০১৬ সালে ৮০ হাজার টাকা ঋণখেলাপি হয়। এ সময় তিনি ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করে, বাকিটা মওকুফ করার জন্য শাখা ব্যবস্থাপককে অনুরোধ করেন। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এ টাকা পরিশোধ না দেখিয়ে ঋণ হিসেবে দেখায়।

বিজ্ঞাপন

এরপর গত বছর (২০২১) তাকে আবারও ১৭ হাজার ৩৯৪ টাকা পরিশোধ করার জন্য বলা হয়। ফলে গত ৬ ডিসেম্বর ইব্রাহিম ওই টাকা পরিশোধ করে ব্যাংক ব্যবস্থাপক মো. আসাদুজ্জামানের কাছ থেকে প্রত্যায়নপত্র নেন। কিন্তু গত ২০ নভেম্বর ব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামানের স্বাক্ষরিত এক পত্রে বলা হয় ২০১১ সালে ইব্রাহিম হোসেন ৪০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেছেন। যার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। যার মধ্যে ২৮ হাজার ৮৯০ টাকা বকেয়া রয়েছে।

এদিকে ২৯ নভেম্বর (আজ) বাগেরহাট বাজারে ঋণ আদায় ক্যাম্পে থেকে আবারও পাওনা ২৮ হাজার ৮৯০ টাকা পরিশোধের জন্য জানানো হয়েছে। এতে ঋণ পরিশোধ না করলে, মামলা মাধ্যমে ঋণের টাকা আদায় করা হবে বলে জানানো হয়।

ইব্রাহিম হোসেন জানান, আমি ঋণের টাকা পরিশোধ করেছি। অথচ আমাকে ঋণগ্রস্ত দেখিয়ে টাকা আদায়ের জন্য নোটিশ করা হয়েছে। এতে আমার সম্মানহানি হয়েছে। ব্যাংকের অফিসার রমিজ বিভিন্ন সময় আমার কাছ থেকে ৫০০-১ হাজার করে টাকা নিয়ে গেছে। এভাবে তিনি প্রায় ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন। কৃষকদেরকে শেষ করে দিচ্ছে ব্যাংক। আমি সব টাকা পরিশোধ করেছি, আমার কাছে সব ডকুমেন্ট আছে। তারপরও আমাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যে সব কৃষক ঋণ পরিশোধের ডকুমেন্ট নেয়নি, তাদের কি হবে?

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, শুধু ইব্রাহিমই নয়- রুদ্রপুর গ্রামের আফতাব, মাহতাব, হাফিজুর রহমান, করিচিয়া গ্রামের সিদ্দিক, আব্দুর রউফসহ অন্তত শতাধিক কৃষককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যারা ঋণ নিয়ে পরিশোধ করার পরও ঋণখেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এসব কৃষক বর্তমানে মামলার ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত দিন কাটাচ্ছে।

রফিকুল ইসলাম নামে এক কৃষক জানান, তার বাবা রবিউল ইসলাম জনতা ব্যাংক চাঁচড়া শাখা থেকে একটি ঋণ গ্রহণ করেন। তিনি জীবিত থাকা অবস্থা ওই ঋণ পরিশোধ করে গেছেন। তিনি তাকে ঋণখেলাপি দেখিয়ে আমার কাছে চিঠি দিয়েছে। আমাকে ঋণের টাকা পরিশোধ করার জন্য বলেছে। বাবা জীবিত থাকা সময় যে সব কাগজপত্র ছিল, তা এখন আমাদের কাছে নেই। এখন মামলার ভয় দেখানো হচ্ছে।

উল্লেখ্য, জনতা ব্যাংক চাঁচড়া শাখা সদর উপজেলার বাগেরহাট বাজারে ঋণ আদায়ের ক্যাম্পের আয়োজন করেছে। এতে অন্তত দুই শতাধিক কৃষককে ঋণের টাকা পরিশোধ করার জন্য বলা হয়েছে। এরমধ্যে শতাধিক কৃষক তাদের ঋণের টাকা পরিশোধ করেছে। তারপরও তাদেরকে ঋণখেলাপি দেখিয়ে পরিশোধ করা জন্য বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা নতুন করে আবার কৃষকদের ঋণ দেব। এজন্য ঋণ মেলার আয়োজন করেছি। এখান থেকে বেছে বেছে আবার ঋণ দেওয়া হবে। আমরা, আপনারা সবই তো এক। এ নিয়ে লেখালেখির দরকার নেই।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |