কৃষক মিন্টু রায় ২.৭০ একর জমিতে ‘ইরি-২৮’ ধান আবাদ করেছেন। হঠাৎ দুইদিনের মধ্যে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে পুরো জমির ধান চিটা হয়ে গেছে। তিনি ব্যাংক ও এনজিও থেকে লোন নিয়ে বোরো আবাদ করেছেন। এখন চরম লোকসানের মুখে পড়েছেন তিনি।
মিন্টু রায় পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলি ইউনিয়নের মম্ভিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ছাড়াও একই ইউনিয়নের পৌরগোজা গ্রামের কৃষক ব্রোঞ্জ মন্ডল ১.৮০ একর, হারুন মিয়া ১.০০ একর এবং জলিল মিয়ার ০.৫০ একর জমির ধান ব্লাস্ট রোগে আক্রমণে চিটা হয়েছে। এ ছাড়া কলাপাড়া উপজেলার অনেক কৃষকের জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এতে কৃষকরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
কৃষক মিন্টু রায় বলেন, ৯০ কড়া (২৭০ শতাংশ) জমিতে ভালো ফলনের আশায় বোরো 'ইরি-২৮' ধান আবাদ করি। ধান রোপণের পর নিয়মিত পরিচর্যা করেছি। দেখে মনে হচ্ছিল ফলন ভালো হবে। শীষ বের হওয়ার কিছুদিন পরে মাঝখানের গিরা কালো হয়ে ধানগুলো শুকিয়ে যেতে শুরু করে। ধানগুলোতে ক্রমেই চিটা হয়ে যায়। এরপর ওষুধের দোকানীর সঙ্গে পরামর্শ করে ধানে মেডিসিন ব্যবহার করেছি। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি। এখন সব ধানে চিটা হয়েছে। আমার ৯০ কড়া জমিতে যে ধান হবে তাতে ধান কাটার শ্রমিকদের মজুরিও হবে না।’
তিনি আরও বলেন, কৃষি ব্যাংক থেকে নেওয়া লোন পরিশোধ কারার ইচ্ছে ছিল ধান বিক্রি করে। ২৭০ শতাংশ জমি আবাদ করতে সব মিলিয়ে প্রায় এক লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। ধানের আবাদ করেই সংসার চলে আমার। এখন আমার পথে বসা ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমি এখন ব্যাংকের লোন পরিশোধ করবো কিভাবে তা নিয়ে চিন্তায় আছি।
লতাচাপলী ইউনিয়নের পৌরগোজা গ্রামের কৃষক ব্রোঞ্জ মন্ডল বলেন, ধান ক্ষেতে অনেক শ্রম দিয়েছি। ধানের গাছ দেখে মনে হয়েছিল অনেক ফলন হবে। তবে ধান বের হয়ে পরিপক্ক হওয়ার আগেই গাছ শুকিয়ে সব ধান চিটা হয়ে গেছে।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লান্ট প্যাথলজি বিভাগের প্রফেসর ড. আশরাফুল আলম বলন, 'ব্লাস্ট' হলো ফাঙ্গাস জাতীয় ছত্রাক। এ ছত্রাক একই ধান গাছে তিন ধরনের রোগ সৃষ্টি করে। পাতা ব লাস্ট, গিট বা নোড ব্লাস্ট এবং নেক বা শীষ ব্লাস্ট।
তিনি আরও বলেন, প্রচন্ড গরম আবার ভোরে কুয়াশা ও ঠান্ডা এ ধরণের আবহাওয়া ফাঙ্গাস জাতীয় ছত্রাকের পছন্দ। এ সময় তারা দ্রুত বংশবিস্তর করে বাতাসের মাধ্যমে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের প্রধান খাদ্য ধান। তারা ধান গাছ ও ধানের বিভিন্ন অংশ খেয়ে ফেলে। ফলে গাছ মরে যায় এবং ধান চিটা হয়ে যায়। পটুয়াখালী থেকে এ ধরনের রিপোর্ট আগে কখনো আসেনি। ২০১০ ও ২১৪ সালে খুলনা ও রংপুরে ব্লাস্টের আক্রমণ হয়েছে, আমরা গবেষণা করেছি। লতাচাপলীর এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।
লতাচাপলী ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাসেদুল হাসান বলেন, ধান বের হওয়ার সময় দিনে অতিরিক্ত গরম ও রাতে শীত এবং কুয়াশার কারণে কিছু ধান নস্ট হয়েছে, তবে তা অল্প।
পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) আবদুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, পটুয়াখালীতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ৭শ’ ৫০ হেক্টর আর উৎপাদন হয়েছে ১৯ হাজার ২৫০ হেক্টর। গরম আবহাওয়ায় ধান নস্ট না হয় সে বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। তবে গরম আবহাওয়ার কারণে ধানের পুষ্টতা একটু কম হতে পারে। কি পরিমাণ ধানের ক্ষতি হয়েছে, এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হবে।