আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ভাই-বোনের স্বর্ণপদক জয়
ওষুধ ও রোগ বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল মেডিসিন অ্যান্ড ডিজিজ অলিম্পিয়াডে (আইএমডিও) স্বর্ণপদক পেয়ে চমক সৃষ্টি করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মূলগ্রামের কৃষক পরিবারের দুই সন্তান। একই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জয় পেয়েছেন ভাই-বোন।
প্রতিযোগীদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ প্রতিযোগী হয়ে সারাবিশ্বের নারী প্রতিযোগীদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন ছোট বোন তুরে সাইনা তিথি। আন্তর্জাতিক মেডিসিন এন্ড ডিজিজ অলিম্পিয়াড ২০২৩-এ সারাবিশ্বে প্রথম হয়ে স্বর্ণপদক অর্জন করেন ভাই নাইমুল ইসলাম। সেই সঙ্গে ফুল-রাইড বৃত্তির অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগও পেয়েছেন। আপন দুই ভাই-বোনের এমন সাফল্য দেখে খুশি এলাকাবাসীও।
জানা গেছে, পরিবারে বাবা-মা ও ৬ ভাই-বোনসহ ৮ জন সদস্যের পরিবার কৃষক রাজা মিয়ার। তার মধ্যে দুই ছেলে ও চার মেয়ে। ভাই বোনদের মধ্যে তৃতীয় রিফাত ও বোন চতুর্থ। মা একজন গৃহিণী। চলতি বছরের ২৯ জুলাই শুরু হওয়া আইএমডিও’র এই প্রতিযোগিতার ফলাফল এসেছে আগস্টের মাঝামাঝিতে। যেখানে নাইমুলের প্রাপ্ত স্কোর ১০০ এর মধ্যে ৯১ এবং নাইমুলের বোন তিথি পেয়েছেন ৮৯। নাইমুল গত বছর ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছেন। অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মূলগ্রাম উচ্চবিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি দিয়েছেন তার বোন তুরে সাইনা তিথি।
ছোটবেলা থেকেই জীববিজ্ঞানে আগ্রহী নাইমুল। তবে বিজ্ঞানসংশ্লিষ্ট সব ধরনের প্রতিযোগিতাতেই অংশ নিতেন। গত বছর আইএমডিওতে অংশ নিয়ে পুরস্কার জেতা হয়নি, তবে অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতার হাত ধরেই এবার এসেছে পুরস্কার। আইএমডিওতে অংশ নিতে হলে ইউনাইটেড স্টেট মেডিসিন অ্যান্ড ডিজিজ অলিম্পিয়াডের ধাপ পার করে আসতে হয়। এই ধাপে শীর্ষ ৫-এ স্থান করেছিলেন নাইমুল। তাছাড়াও ২০২০ সালে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে প্রেসিডেন্ট’স স্কাউট অ্যাওয়ার্ডও পেয়ে ছিলেন তিনি।
নাইমুল বলেন, ইউনাইটেড স্টেট মেডিসিন অলিম্পিয়াডের প্রশ্নগুলো জটিল হলেও নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পরীক্ষা শেষ করি। পরীক্ষা শেষে অন্যান্য দেশের প্রতিযোগীদের চিন্তিত দেখে মনে একটা সাহস পেয়েছিলাম। আমার পরীক্ষা যেহেতু ভালো হয়েছে তাই ভাবলাম ভালো কিছুই হবে।
নাইমুলের বোন তিথি বলেন, বড় ভাইকে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেখে, আমারও ইচ্ছা হতো এসব প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে। গ্রামের একটা স্কুল থেকে এত বড় আয়োজনে অংশ নিতে পারাটাও বড় একটা ব্যাপার। ইউনাইটেড স্টেট মেডিসিন অ্যান্ড ডিজিজ অলিম্পিয়াডের পরীক্ষা ভালো হলেও কয়েকটা প্রশ্ন নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন তিনি। ভাইয়ার পরামর্শ, দিকনির্দেশনা ও সামগ্রিকভাবে পরীক্ষা ভালো হওয়ায় আশাবাদী ছিলাম। তাই সাফল্য এসেছে।
কৃষক রাজা মিয়া বলেন, আমি আমার ছেলে মেয়েকে উপযুক্ত শিক্ষার উপকরণ কোনো কিছুই দিতে পারি নাই, এই সাফল্যের জন্য আমি আমার ছেলে-মেয়ের কাছে চির কৃতজ্ঞ। সে অনেক দুঃখ কষ্ট করে পড়ালেখা করেছেন। এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যে, বৃষ্টির সময় টিনের চাল দিয়ে পানি পড়ে বই খাতা ভিজে গেছে। আমি একজন সাধারণ কৃষক, আমি শারীরিকভাবে অনেকটাই অসুস্থ, তার চেষ্টা এবং কষ্ট আজকের এই সাফল্য এনে দিয়েছে। বর্তমানে ফুল-রাইড স্কলারশিপ নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে পড়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে আমার ছেলে। দেশবাসীর কাছে আমি আমার ছেলে-মেয়ের জন্য দোয়া চাই।
কসবার মূলগ্রাম উচ্চ বিদ্যালযয়ের প্রধান শিক্ষক মো. এমরান হোসাইন বলেন, এই প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তার ব্যতিক্রম দিক হচ্ছে তার মধ্যে অনন্য অধ্যবসায় ছিল, সেই অধ্যবসায় হচ্ছে সে নতুন যে কোনো একটা জিনিস দেখলে পরে সেটার প্রতি তার জানার শেখার যে আগ্রহ সেটা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
এদিকে ভাই-বোনের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে স্বর্ণপদক লাভের এমন সাফল্য এলাকায় যেমন চমক সৃষ্টি করেছে, তেমন সফল হয়ে নিজ এলাকার ও দেশের জন্য ভালো কিছু করার নতুন চমক দেখার অপেক্ষায় এলাকাবাসী।
উল্লেখ্য, ইন্টারন্যাশনাল মেডিসিন অ্যান্ড ডিজিজ অলিম্পিয়াড হাইস্কুল পর্যায়ের একটি প্রতিযোগিতা। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সান দিয়েগোতে প্রথমবার এই আসর বসেছিল। সারাবিশ্বের শিক্ষার্থীদের যুক্ত করতে প্রতিযোগিতাটি পরে অনলাইনে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয় আইএমডিও ফাউন্ডেশন।
মন্তব্য করুন