‘জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে’
জাতির আকাঙ্ক্ষা পূরণ ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতায়ন এবং জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
শনিবার (২০ জানুয়ারি) সকালে কুমিল্লার লাকসাম পৌর মিলনায়তনে কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ মন্তব্য করেন তিনি।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বিশ্বাস করেন, জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তারাই সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের মূল চালিকাশক্তি। তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তারা একসঙ্গে প্রচেষ্টা নিলে যেকোন অসাধ্য কাজও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশে গড়ার যে লক্ষ্যমাত্রা আমাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন তা সফল করতে গেলে জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
তাজুল ইসলাম বলেন, সভায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে নিয়মিত বাজার তদারকি জেলার স্বাস্থ্য খাতে নারী শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠদের চিকিৎসা সেবার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর সেবার মান উন্নতকরণ, শিক্ষা খাতে সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয় নিয়মিত শিক্ষাদানের সাথে সাথে গুণগত মান উন্নয়ন, কৃষি খাতে কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ, রাস্তাঘাট সহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং স্যানিটেশন সেবায় গুণগত মান বজায় রেখে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। সভায় কুমিল্লা জেলাকে মাদকমুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। মাদক সমাজ ও পরিবারকে ধ্বংস করে দেয় উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, কুমিল্লাকে একটি অনন্য জেলা হিসাবে গড়ে তুলতে হলে একে অবশ্যই মাদকমুক্ত করতে হবে।
সরকারি যেকোন কাজে গুণগত মান নিয়ে ছাড় নয় উল্লেখ করে নিম্নমানের কাজ করলে শাস্তি ও ঠিকাদারদের লাইসেন্স বাতিলের নির্দেশনা দেন মন্ত্রী। এ ছাড়াও ঠিকাদার ও নির্মাণ শ্রমিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সল্প সময়ে কাজের গুনগত মান বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করেন মন্ত্রী। শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার কারণ নিয়ে অনুসন্ধান ও তার প্রতিকারে ব্যবস্থা নিতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন তিনি। এছাড়াও দ্রুত সময়ে লাকসাম মডেল মসজিদের কাজ শেষ করার নির্দেশনা দেন তিনি।
তাজুল ইসলাম বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হলে আমাদের সবাইকে যে যার জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। প্রতিটি সেক্টরে আমরা যাতে সফলভাবে এগিয়ে যেতে পারি সেজন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এরই মধ্যে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি। বর্তমানে আমাদের মাথাপিছু গড় আয় ২৮০০ ডলারের বেশি। এখন আমাদের মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে গেলে সাড়ে চার হাজার ডলার এবং উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছাতে হলে সাড়ে বারো হাজার ডলার মাথাপিছু আয় অর্জন করতে হবে। এ লক্ষ্যমাত্রা তখনই অর্জন সম্ভব যখন আমরা সরকারি কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের সর্বোচ্চটুকু উজাড় করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাব।
পরে একইদিন বিকেলে মন্ত্রী লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে কুমিল্লা-৯ নির্বাচনী এলাকা থেকে পঞ্চমবারের মতো নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য এবং পুনরায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় শুভেচ্ছা নিবেদন ও মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন। এতে লাকসাম উপজেলা ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে পুনরায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করায় ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এ অর্জন শুধু আমার একার নয়, লাকসাম মনোহরগন্জ্ঞবাসীর সন্তান হিসেবে এ কৃতিত্ব আপনাদের সবার। মতবিনিময় সভার শেষে লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা লীগ, ছাত্রলীগ এবং স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচছা গ্রহণ করেন মন্ত্রী।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক আ. গাফফার খাঁন, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক মো. হারুন অর রশিদ মোল্লা, সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম, কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. নাছিমা আকতারসহ জেলা পর্যায়ের সকল সরকারি দপ্তরের দপ্তর প্রধানগণ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন লাকসাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইউনুস ভূঁইয়া, মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন, লাকসাম পৌরসভার মেয়র মো. আবুল খায়ের প্রমুখ।
মন্তব্য করুন