• ঢাকা শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১
logo

তিন জমজ ভাই যেন তিন টুকরা রত্ন

আরটিভি নিউজ

  ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০১:৩৬
জমজ তিন ভাই, মাফিউল হাসান, সাফিউল হাসান, রাফিউল হাসান ও মা আর্জিনা বেগম
মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়া জমজ তিন ভাই মাফিউল হাসান, সাফিউল হাসান, রাফিউল হাসান ও মা আর্জিনা বেগম/ ফটো সংগৃহীত

বগুড়ার ধুনট উপজেলার বথুয়াবাড়ি এলাকার স্কুলশিক্ষক গোলাম মোস্তফা। সুখেই চলছে গোলাম মোস্তফা ও আর্জিনা বেগমের সংসার। তাদের ঘর আলো করে আসে তিন জমজ সন্তান। কয়েক মিনিট ব্যবধানে জন্ম নেওয়া তিন শিশু আনন্দ-উচ্ছ্বাস ছড়ায় তাদের সংসারে।

কিন্তু সুখ বেশি দিন সইল না আর্জিনা বেগমের। মাত্র ৫ বছরের মাথায় স্বামীকে হারান তিনি। হঠাৎ স্বামীকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন আর্জিনা। তবে ভেঙে পড়েননি তিনি। জীবন যুদ্ধে হারবার পাত্র নন তিনি। সংকল্প করেন যে করেই হোক সন্তানদের পড়াশোনা করাবেন। মানুষের মত মানুষ করবেন।

স্বপ্নপূরণ হয়েছে এক জীবনযোদ্ধা মায়ের। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে তিন ছেলে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। সন্তানদের এমন সাফল্য আনন্দাশ্রুতে ভাসিয়েছে আর্জিনা বেগমকে। শুধু আর্জিনা নন। খুশিতে ভাসছে পুরো পুরো ধুনট।

মেডিকেলে সুযোগ পাওয়া তিন জমজ ভাই হলেন- মাফিউল হাসান, সাফিউল হাসান এবং রাফিউল হাসান।

ধুনট নবির উদ্দিন পাইলট হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক ও বগুড়ার সরকারি শাহ সুলতান কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন তিস ভাই। এর পর একসঙ্গে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় আসেন। তবে প্রথমবার সাফল্য পান মাফিউল। তিনি ভর্তি হন ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে। আর চলতি বছর সাফিউল দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে ও রাফিউল নোয়াখালী মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন।

মাফিউল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, তিন ভাই বগুড়ায় মেসে একই সঙ্গে থেকে সরকারি শাহ সুলতান কলেজে পড়েছি। মা কষ্ট করে এবং জমি বিক্রি করে পড়ালেখা করিয়েছে। কখনোই আমাদের কষ্ট করতে দেয়নি।

শাফিউল হাসান বলেন, ‘আজ বাবা থাকলে অনেক খুশি হত। বাবাকে হারিয়েছি শিশুকালে। এখন মাই বাবার অভাব পূরণ করছে। মানুষের সেবা করার জন্য যাতে চিকিৎসক হতে পারি এই দোয়া চাই সবার কাছে।

রাফিউল ইসলাম বলেন, অসুস্থ অবস্থায় বাবা মারা যান। যখন বুঝতে পারলাম বাবার সেই কথা তখন থেকেই তিন ভাই প্রতিজ্ঞা করি ডাক্তারি পড়ব। মানবতার তাগিদে গরিব মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে চিকিৎসা করব। এই গ্রাম থেকে কেউ আগে মেডিকেল চান্স পায়নি। আমরা এক পরিবার থেকে তিনজন মেডিকেলে চান্স পেয়েছি। এটা একদম অবিশ্বাস্য।

মা আর্জিনা বেগম বলেন, তিন ছেলের জন্ম হয়েছে ২০০৪ সালে। ২০০৯ সালে ওদের বাবা হৃদরোগের মারা যান। ওদের বয়স তখন পাঁচ বছর। ওরা বাবার স্নেহ-মমতা পায়নি। তিনি মারা যাওয়ার পর তিন সন্তানকে পড়ালেখা করানো নিয়ে বিপাকে পড়ি। নিজে কষ্ট করে এবং জমি বিক্রি করে ওদের পড়ালেখা করিয়েছি। প্রায় পাঁচ বিঘা জমি ছিল। ওদের পড়াশোনার খরচের জন্য বাবার বাড়ির জমিও বিক্রি করেছি। বাকি যা আছে তাও প্রয়োজনে বিক্রি করব। তবুও ওদের চিকিৎসক বানাব। যাতে আমাদের মত গরিব মানুষদের সেবা করতে পারে।

তাদের এই সাফল্য ছুঁয়ে গেছে স্থানীয়দের। তিনভাইকে নিয়ে এখন গর্বের শেষ নেই এলাকাবাসীর। তাদের নিয়ে গর্ব করছেন শিক্ষকরাও। কান্না জড়িত কণ্ঠে শিক্ষক গোলাম রব্বানী বলেন, এরা তিন ভাই মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করি। আমি চাইব তারা যেন দেশ ও দশের কল্যাণে দাঁড়াতে পারে এই দোয়া করি।

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বোনের বিয়েতে এসে ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার
ট্রাকের পেছনে ট্রাকের ধাক্কা, প্রাণ গেল ২ জনের
বগুড়ায় ইজতেমায় যৌতুকবিহীন বিয়ে
বগুড়ার সাবেক এমপি রাগিবুল গ্রেপ্তার