সোনারগাঁয়ে গাছে গাছে লিচুর সোনালি মুকুল
চারদিকে লাল, হলুদ আর সবুজের সমাহার। পলাশ, শিমুলের রক্তিম সৌন্দর্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সবুজ পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে লিচুর সোনালি মুকুল। মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে মুগ্ধ হয়ে উঠছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন এলাকা। বাগানচাষিরা গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সোনারগাঁয়ের ১টি পৌরসভা ও ৩টি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট, বাগানে দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিটি লিচুগাছের সবুজ পাতার ফাঁকে বের হয়েছে মুকুল। প্রতিটি বাগানের গাছে গাছে মুকুল আর মুকুল। বাগানচাষি কিংবা গাছ মালিকদের সোনালি স্বপ্ন উঁকি মারছে সবুজ পাতার ফাঁকে।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী মাসে লিচুর মৌসুমে প্রচুর লিচু বাজারজাত করতে পারবেন, এমনটিই আশা করছেন বাগানচাষিরা।
এরই মধ্যে ভালো ফল পাওয়ার আশায় লিচুগাছের পরিচর্যা শুরু করেছেন লিচুচাষিরা। মুকুল আসার শুরু থেকেই গাছের গোড়ায় পানি দিয়ে যাচ্ছেন। কীটনাশকসহ বিভিন্ন ভিটামিন স্প্রে করছেন কৃষকরা। ফুল ঝরে গিয়ে তা থেকে লিচুর গুটি বের হচ্ছে।
সোনারগাঁয়ে যেসব জায়গায় লিচু বাগান আছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- পানাম, সনমান্দী, গোয়ালদী, বৈদ্যেরবাজার, ভট্টপুর, গাবতলী, হাড়িয়া, অর্জুন্দী, দুলালপুর, গোবিন্দপুর, কৃষ্ণপুরা, বাগমুছা, হাতকোপা, দত্তপাড়া, আদমপুর, খাগুটিয়া, খাসনগর দীঘিরপাড়, চিলারবাগ, দৈলরবাগ, দরপত, টিপরদী, হরিশপুর, তাজপুর, সাদীপুর, ইছাপাড়া, বারদী, সেনপাড়া, বালুয়াদীঘির পাড় ইত্যাদি। পাতি, কদমী আর বোম্বাই- এই তিন প্রজাতির লিচুর ফলনই সোনারগাঁয়ের বাগানগুলোতে বেশি হয়ে থাকে। তবে এর মধ্যে পাতি লিচুর চাষই সবচেয়ে বেশি হয়। তা ছাড়া এ প্রজাতির লিচু সবচেয়ে আগে বাজারে আসে। এ ছাড়া কদমী চাষ করছেন অনেকেই।
সোনারগাঁ সনমান্দী এলাকার লিচু চাষি বীরমুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস জানান, বাগান কয়েক ধাপে বিক্রি হয়। গাছে মুকুল আসার আগে এবং লিচু গুটি হওয়ার পরে বাগান বিক্রি হয়। লিচু পাকার আগেই বেশ কয়েকবার পরিবর্তন হয় বাগানের মালিকানা। তবে অনেক বাগান মালিকরা লাভের আশায় নিজেই শ্রম দেন। অনেক সময় খরার কারণে লিচুর আকার ছোট হয়ে যায়। আবার অনেক সময় বৈশাখী কালবৈশাখী ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয় লিচু বাগান। তখন ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হন লিচুচাষি ও ব্যবসায়ীরা।
লিচু ব্যবসায়ি মিজানুর রহমান বলেন আমি সোনারগাঁওয়ের ১২ টা লিচু বাগান ক্রয় করেছি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছর লিচুর ফলন বেশী হবে বলে আমরা আশাবাদী। তবে পোকার কারনে অনেক লিচুর মুকুল ঝরে যাচ্ছে অথচ আমরা কোনো সরকারি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি না।
সোনারগাঁ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আফরোজা সুলতানা জানান, উপজেলার বিভিন্ন বসতবাড়িসহ নানা স্থানে ১০৫ হেক্টর জমিতে ৬৭৩ টি বাগান রয়েছে এবং ২৫২৫০ টি লিচুর গাছ রয়েছে। আমরা লিচুচাষিসহ বসতবাড়িতে থাকা লিচুর উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গাছ মালিকদের সেবা দিয়ে আসছি।
তিনি আরও বলেন, এখন লিচুর মুকুল এসেছে। তাই গাছের গোড়ায় পানি দেওয়াসহ বাগানে কীটপতঙ্গ, মাকড়সা দূর করার জন্য বালাইনাশক স্প্রে করাসহ গাছ ও মুকুলের যত্ন নেওয়ার বিষয়ে গাছ মালিকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া উপজেলা কৃষি উপসহকারী লোকজন নিয়ে লিচুর উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য মাঠে কাজ করছেন।
মন্তব্য করুন