জনবান্ধব সরকারের আইনবান্ধব প্রশাসন, মৎস্যজীবীদের ক্ষতি ৬৬ লাখ টাকা!
বর্তমান সরকারকে বলা হয় জনবান্ধব সরকার। অথচ সরকারের চালিকাশক্তির অবিচ্ছেদ্য অংশ খ্যাত প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা যেন আইনবান্ধব। উন্নয়নের নামে আইনের বিভিন্ন ধারা উপধারার দোহাই দিয়ে ঘোষণা করা তাদের নানা পদক্ষেপে অনেক সময়ই ক্ষতি,হুমকি আর সমস্যার মুখে পড়েন দেশের সহজ সরল কিছু মানুষ। তেমনি একটি ঘটনা নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার নগর ইউনিয়নের আটাই গ্রামে। সেখানে প্রশাসনের আইনবান্ধব সিদ্ধান্তে ক্ষতির মুখে পড়েছেন দুই মৎস্যজীবী সমিতির ২৪৫ জন সদস্য। ওই সিদ্ধান্তের ফলে তারা এখন ৬৬ লাখ টাকা ক্ষতির মুখে।
তথ্যমতে,নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার নগর ইউনিয়নের আটাইগ্রামের পাশেই ৩৫ একর আয়তনের পাঙ্গিয়ার দিঘী ৬ বছরের জন্য স্থানীয় মালিপাড়া উত্তরপাড়া মৎস্যহীজী সমবায় সমিতির অনুকূলে ইজারা দেওয়া হয় নাটোর ডেপুটি কালেক্টর রেভিনিউ শাম্মী আক্তার গত ২০২৩ সালের ২ মার্চে বিষয়টি নিশ্চিত করে লীজ গ্রহীতাকে লিখিতভাবে জানান, ২০ ফেব্রুয়ারি ওই ইজারা অনুমোদন করা হয়। আরো জানানো হয়, প্রথম ৪ বছর ৩ ১০ হাজার টাকা এবং পরের দুই বছর ওই টাকার ২৫ ভাগ বর্ধিত ইজারা জমা দিতে হবে। পরবর্তি ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে লীজ গ্রহীতাকে ১ম বছরের সাকুল্য ইজারা মূল্য, ভ্যাট ও আয়করসহ মোট ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়। নির্দেশ অনুযায়ী, ওই টাকা জমা দেন ওই সমিতির সভাপতি আব্দুল হাই। কিন্তু একই বছরের ১৮ জুন বড়াইগ্রাম এসিল্যান্ড বোরহান উদ্দিন মিঠুর প্রতিবেদনের আলোকে জেলা প্রশাসক আবু নাচের ভুঁঞা ১৭ আগস্ট ভূমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠান। ওই চিটির আলোকে ৪ সেপ্টেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচীব দেলোয়ার হেসেন মাতুবর ওই জলমহালের ইজারা বাতিলের ঘোষণা দেন।
ওই বাতিল আদেশে বলা হয় ইজারা প্রস্তাব অনুমোদনের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সমুদয় টাকা পরিশোধের বিধান থাকলেও ১১ জুন ২০২৩ তারিখে ১ বছরের টাকা পরিশোধ করায় তা নীতিমালা লঙ্ঘন। এছাড়া ওই বাতিল আদেশে লীজ গ্রহীতার সাথে দুটি পৃথক চুক্তিনামায় সাবলীজ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।এছাড়া বিএমডিএ কর্তৃক ওই দিঘীটি পুন:খনন,ওই দিঘীকে কো ট্যুরিজম,পশু পাখির অভয়াশ্রম, ক্রীড়াপল্লী নির্মাণসহ উন্নয়নমূলক কাজের কথা বলা হয়। আব্দুল হাই জানান,ওই দিঘীতে বিভিন্ন প্রজাতি মাছের পোনা ছাড়া হয়। এতে সবমিলিয়ে তাদের ৬৫ লাখ টাকার ইনভেস্ট ছিল। লীজ বাতিলের পর মামলা মোকদ্দমা চালাতে গিয়ে গত কয়েকদিনে তাদের আরো প্রায় ১ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। সর্বশেষ গত ৯ মে উচ্চ আদালত ওই লীজ বাতিল কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানাতে চার সপ্তাহের সময় দিয়েছে প্রশাসনকে। মৎস্যচাষী মকলেছ দাবী করেন, ছোট আটাই গ্রামের ২৮ জন কার্ডধারী মৎস্যজীবীসহ ১৯৫ জন আর আব্দুল হাইয়ের অনুসারী আরো ৫০ জন মৎস্যজীবীসহ মোট ২৪৫ জন মৎস্যজীবী ওই মাছ চাষে জড়িত। এছাড়া নগর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান নিলুফার ইয়াসমি (ডালু) ও বড় আটাই গ্রামের মাছ চাষী রাজ্জাককে সাথে নিয়ে একরকম জোর করেই তাকে একটি চুক্তিনামায় সাক্ষর করান। যাতে ওই মৎস্যজীবীরা ওই দিঘীর মাছ চাষে শরীক থাকতে পারেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,। লীজ বাতিলের সময় বার বারই মৌখিকভাবে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে তারা অনুরোধ করেছিলেন যাতে তাদের অবমুক্ত করা মাছগুলো অন্তত তুলে বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু তাদেরকে ওই সুযোগ না দিয়ে দুই দিন প্রশাসনের আয়ত্বে জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়েছে। এরপরও লাখ লাখ মাছ মারা গেছে।
মাছ চাষী মতলেব ও খলিল দাবী করেন, মাছগুলো চাষে তারা গ্রামবাসী হিসাবে ৫৮ ভাগ আর আব্দুল হাইরা ইনভেস্ট করে ৪২ ভাগ খরচ। মাছ বিক্রির লাভও তারা ওই ভাবে পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে হাসি খুশিতে থাকতে পারতেন।। তারা দাবী করেন,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দরিদ্র মাছ, চাষী, কৃষক, শ্রমিক সকলের উন্নয়নে নানা ভর্তুকি, ভাতা ও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করছেন। অথচ প্রশাসনের কিছু মানুষ আইন দেখানোর অজুহাতে তাদের কর্মসংস্থানই শুধু নষ্ট করেনি বরং তারা এখন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। বিষয়টি জানতে চেয়ে বার বার ফোন দেওয়া হলেও জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভুঁঞা ফোন রিসিভ করেন নি।
আব্দুল হাই ও মকলেছের দাবী, তাদের যে টাকা ইনভেষ্ট হয়েছে সেই টাকা উত্তোলনের জন্য ওই ইজারা বাতিল রদ করা হোক। অন্যথায় পরিবার পরিজন নিয়ে তাদের ২৪৫ জন মুৎস্যজীবীকে আবারও ঋণে জর্জরিত হতে হবে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু পদক্ষেপ কামনা করেন তারা।
মন্তব্য করুন