উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার, ইসিতে অভিযোগ
কুমিল্লার হোমনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী এ কে এম সিদ্দিকুর রহমানের পক্ষে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মাহবুব আলম এবং তার ছোট ভাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নজরুল ইসলাম প্রভাব বিস্তার করছেন বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী রেহানা বেগম।
এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন রেহানা বেগম। যার অনুলিপি দিয়েছেন মন্ত্রীপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও হোমনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে।
অভিযোগকারী রেহানা বেগম সদ্য বিদায়ী হোমনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। অভিযুক্ত মাহবুব আলম ও তার ছোট ভাই নজরুল ইসলাম উপজেলার খোদেদাউদপুর গ্রামের মরহুম উসমান গনি সরকারের ছেলে।
অভিযোগে বলা হয়, সম্প্রতি বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি মাহবুব আলম এবং তার ছোট ভাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে কতিপয় উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা হোমনা উপজেলা নির্বাচনে মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী এ কে এম সিদ্দিকুর রহমানের পক্ষে সম্ভাব্য সকল উপায়ে প্রভাব বিস্তারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। চেয়ারম্যান পদে মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী একেএম সিদ্দিকুর রহমানের প্ররোচনায় তাদের সরকারি অফিস ও বাসায় হোমনা উপজেলার সকল ইউনিয়ন চেয়ারম্যানসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ডেকে নিয়ে সাইকেল প্রতীকের পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দিচ্ছেন।
এ ছাড়া নিয়মিত হোমনা এসে হোমনা সদরে এবং তাদের নিজ বাড়িতে রাজনীতিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে সভা করা, হোমনা উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ফোন করে একেএম সিদ্দিকুর রহমানের পক্ষে কাজ করা ও ভোট প্রদানের জন্য নির্দেশ দেওয়ার মতো কাজ করে যাচ্ছেন। এমনকি ডিআইজি মাহবুব আলম নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রেহানা বেগমকেও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করেছেন, যার মধ্যে এক ধরনের প্রচ্ছন্ন হুমকি ছিল।
অভিযোগে রেহানা বেগম বলেন, তাদের এসব কর্মকাণ্ড সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ (৩০/১২/২০০২ তারিখের সংশোধনীসহ)-এর ২৫(৩), উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা বিধিমালা, ২০১৬ (বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ২১ এপ্রিল ২০২৪ তারিখের পরিপত্র ৮ এর হালনাগাদসহ)-এর ২(৩) (খ) [বিধি-৫] ও ১৯(১) এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ২০১৩-এর বিধি-৭৩(১) ও (২) (উ)-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এমন পরিস্থিতিতে হোমনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সার্বিকভাবে প্রশাসনযন্ত্র প্রভাবমুক্ত থেকে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচলনা করতে পারবে কি-না এ বিষয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন রেহানা বেগম। নির্বাচনের অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
এ প্রেক্ষিতে হোমনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক করার স্বার্থে উল্লিখিত অভিযোগের বিষয়ে অনতিবিলম্বে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার আবদেন জানান রেহানা বেগম।
অভিযোগকে কাল্পনিক আখ্যায়িত করে মাহবুব আলম বলেন, এলাকার অনেকেই তার অফিসে যান। যে প্রার্থী অভিযোগ করেছে সে প্রার্থী নিজেই আমার অফিসে এসে আমাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে। যখন প্রভাবিত করতে পারেনি তখনই তিনি ভেবেছেন অন্য কোনো প্রার্থীর দ্বারা আমি প্রভাবিত হয়েছি। এজন্য হয়তো তিনি অভিযোগ করেছেন। অন্য কোনো প্রার্থী কিন্তু আমার অফিসে আসেনি। তাদের অভিযোগ সঠিক নয়।
লিখিত অভিযোগের অনুলিপি সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও হোমনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ক্ষেমালিকা চাকমা পেয়েছেন। তিনি জানান, বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তা দেখছেন। তিনি যে নির্দেশনা দেবেন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, আগামী ৫ জুন চতুর্থ ধাপে হোমনা উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আনারস প্রতীকে অংশগ্রহণ করছেন রেহানা বেগম, সাইকেল প্রতীকের এ কে এম সিদ্দিকুর রহমান এবং ঘোড়া প্রতীকের মো. শহীদ উল্লাহ।
মন্তব্য করুন