• ঢাকা রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
logo

মালচিং পদ্ধতিতে মরিচ চাষে সাফল্য

অষ্টগ্রাম (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ০৩ জুন ২০২৪, ১৭:৪৬
মালচিং পদ্ধতিতে মরিচ চাষে সাফল্য
ছবি : আরটিভি

শহরে করতেন ব্যবসা। বিশাল পুঁজি বিনিয়োগ করেও নেই আশানুরূপ লাভ। তখন ইউটিউব দেখে দেখে শেখেন চাষবাস। পরে ব্যবসা ছেড়ে গ্রামে শুরু করেন সবজি চাষ। জমি লিজ নিয়ে মালচিং ও আধুনিক পদ্ধতিতে সবজি ও মসলা চাষ করে মিলে দ্রুত সাফল্য। কৃষকদের ভালো ফলনের পরামর্শ দিয়ে পান জনপ্রিয়তা। তাই গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কৃষকদের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মেম্বার নির্বাচিত হন কৃষি উদ্যোক্তা মোহাম্মদ রেখন মিয়া।

ইউপি সদস্য নির্বাচিত হলেও সকাল-সন্ধ্যা কাজ করেন জমিতে। জরুরি কাজ ছাড়া যান না পরিষদে, ভোটারদের দরকারি কাজ সারতে সঙ্গে রাখেন কলম ও সিল। জমিতে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে স্বাক্ষর ও কৃষিবিষয়ক পরামর্শ দেন। চাষিরা কৃষি পরামর্শ নিতে ভিড় করেন তার বাড়িতে। ডাকে ‘কৃষি ডাক্তার’ বলে।

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম সদর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য (মেম্বার) নির্বাচিত হওয়া রেখন মিয়া সবজি ও মসলা চাষ করে বছরে আয় করেন কয়েক লাখ টাকা। ইতোমধ্যে ময়মনসিংহ অঞ্চলে ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের অধীনে ‘তৃতীয় সেরা কৃষক’ পুরস্কার ২০২৩ সালে পেয়েছেন।

কৃষি উদ্যোক্তা রেখন মিয়ার ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন, তার বাবা প্রয়াত আবদুস সালাম। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান রেখন সিলেট শহরে করতেন সবজির ব্যবসা, রোদেপুড়ে কৃষি কাজ ছিল তার বিরক্তির কারণ। ২০১০ সালে বাবার মৃত্যুর পর গ্রামে শুরু করেন ডেকোরেশন ব্যবসা। অনেক পুঁজি বিনিয়োগ করেও মেলেনি সাফল্য।

২০১৪ সালে ইউটিউব দেখে আধুনিক পদ্ধতিতে জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন সবজি চাষ। শুরু হয় সাফল্যের পথ চলা। ২০২২ সালে ৮৫ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে বর্ষাকালীন টমেটো চাষ করেন, খরচ শেষে আয় করে ৬ লাখ টাকা। ময়মনসিংহ অঞ্চলে ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের অধীনে ‘তৃতীয় সেরা কৃষক’ পুরস্কার পান।

চলতি বছর ৬মাসের জন্য ৭৫ শতাংশ জমি লিজ নেন ১২ হাজার টাকায়। মালচিং পদ্ধতিতে ৫৫ শতাংশে মরিচ ও ২০ শতাংশে চাষ করেন টমেটো এবং শিংনাথ বেগুন। ইতোমধ্যে ৭৫হাজার টাকার টমেটো ও বেগুন বিক্রি করেন। আর ৫৫ শতাংশ জমির কাঁচা ও শুকনো মরিচ বিক্রি করেন সাড়ে তিন লাখ টাকার।

প্রায় সোয়া চার লাখ টাকার সবজি ও মসলা উৎপাদনে খরচ করতে হয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। জমিতে ব্যবহৃত মালচিং পেপার ও বাঁশের খুটি ব্যবহার করতে পারবেন আগামী মৌসুমে। তার এই সাফল্য দেখে তরুণের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে কৃষি উৎপাদনে।

কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও ইউটিউব দেখে অর্জিত অভিজ্ঞতা ও কৃষি বিষয়ক পরামর্শ কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দিতে নিজ বাড়িতে খোলেন ‘আধুনিক কৃষি তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্র।’ যেখানে ভিড় করেন এলাকার কৃষকরা।

মোহাম্মদ রেখন মিয়া বলেন, আমার নিজস্ব জমি নেই। কম পুঁজিতে বেশি লাভবান করতে কৃষির বিকল্প নেই। সরকারি খাস জমি লীজ পেলে বারোমাস সবজি ও মসলা চাষ করে দেশের চাহিদা পূরণ ও বেকার যুবদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারতাম। এই বিষয়ে সরকারের সহযোগিতা কামনা করি।

উপজেলা উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা প্রদীপ চন্দ্র সরকার বলেন, রেখন মিয়া একজন কৃষি উদ্যোক্তা। আমরা তাকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনী প্লট দিয়ে সহযোগিতা করি। তিনি প্রশিক্ষণ ও ইউটিউব দেখে কৃষি উৎপাদনে যে অভিজ্ঞতা ও সাফল্য অর্জন করেছেন তা সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে।

অষ্টগ্রাম সদর ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ ফাইয়াজ হাসান বাবু বলেন, আমার এ সহকর্মী অত্যন্ত কৃষি বান্ধব একজন মানুষ। তিনি ইউপি সদস্য নির্বাচিত হলেও দিনরাত চাষবাস নিয়ে থাকেন। কৃষকদের কল্যাণে কৃষি পরামর্শ বিলিয়ে বেড়ান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অভিজিৎ সরকার বলেন, ফ্লাড রিকনস্ট্রাকশন ইমারজেন্সি এসিস্ট্যান্স প্রজেক্ট (ফ্রিপ) প্রকল্পের আওতায় রেখন মিয়াকে ৩৩ শতাংশ জমির জন্য মালচিং পদ্ধতিতে মরিচ চাষের একটি প্রদর্শনী ও প্রশিক্ষণ দেয় উপজেলা কৃষি অফিস। এতে উদ্বুদ্ধ হয়ে এবার ৫০শতাংশ জমিতে হাইব্রিড ‘বিজলী প্লাস’ জাতের মরিচ চাষ করে লাভবান হন। স্থানীয় ইউপি সদস্য ও একজন অগ্রগামী কৃষক, রেখনকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে এলাকায় মরিচ চাষের আবাদ বাড়ছে।

মন্তব্য করুন

Radhuni
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
লাল মরিচ চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন সারিয়াকান্দির কৃষক
মরিচ চাষে ব্যস্ত উপকূলের কৃষকরা