‘সাহ্রি খাইছে, ইফতার করতে পারলো না আমার ছেলে-বউ’
‘আমার ফুতে-বউ (ছেলে-পুত্রবধূ) রোজা রাখছিল। সাহ্রি খাইছে, ইফতার করতে পারছে না তারা। এর আগেই আল্লাহই তাদের লইয়া গেলাগি।’
সোমবার (১০ জুন) সিলেটে পাহাড়ধসে মাটিচাপা পড়ে নিখোঁজ করিম উদ্দিন, তার স্ত্রী শামীমা আক্তার রোজী এবং তাদের দুই বছরের শিশুসন্তান তানির মরদেহ উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দল। জিলহজ মাস উপলক্ষে গত শনিবার থেকে রোজা রেখেছিলেন তারা। সোমবার সাহ্রি করে ঘুমানোর পর আর ইফতার খাওয়া হলো না তাদের। ঘুমের মধ্যে ঘরের ওপর টিলা ধসে পড়ে তিনজনেরই মৃত্যু হয়েছে। সন্তান, পুত্রবধূ ও নাতিকে হারিয়ে এভাবেই আহাজরি করছিলেন ইয়াছমিন বেগম।
শোকগ্রস্ত ইয়াছমিন বেগম বলেন, আমার দুই ছেলে, দুই মেয়ে। দুই ছেলের মধ্যে রহিম বড় এবং করিম ছোট। করিম সিলেট নগরের একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করে। দুই ভাই আলাদা থাকলেও দুই পরিবারের মধ্যে মিল ছিল। আমি বড় ছেলের ঘরে থাকলেও ছোট ছেলের ঘরে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতাম।
তিনি বলেন, সোমবার সকাল সাতটার আগে আমি বড় ছেলের ঘর থেকে দুই নাতিকে নিয়ে বাইরে বের হয়েছিলেন। ঘরে তখন বড় ছেলে রহিমের ছয় মাসের মেয়ে, রহিমের স্ত্রী তাহমিনা। অন্য ঘরে ছিলেন করিম, তার স্ত্রী শাম্মী ও দুই বছরের শিশু ঘুমিয়ে ছিল। সকাল সাতটার দিকে হঠাৎ ‘শাঁ শাঁ’ শব্দ পাই আমি। এ সময় ঘরে ঘুমিয়ে থাকা সবাইকে ডাকতে গেলে ঘরের ওপর টিলার মাটি ধসে পড়ে। তখন বড় ছেলের স্ত্রী অক্ষত অবস্থায় ঘর থেকে ছোট শিশুকে নিয়ে বেরিয়ে আসতে পারলেও আমার বড় ছেলে রহিম মাটির নিচে চাপা পড়েন। এ সময় আশপাশের বাসিন্দারা এগিয়ে গিয়ে রহিমকে উদ্ধার করেন। তবে ছোট ছেলে করিমের ঘরের কাউকেই উদ্ধার করতে পারেননি।
সকাল সাড়ে ৬টায় পাহাড়ধসের এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। তারা জানান, এ ঘটনায় আহত অবস্থায় আরও তিনজনকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় আহতরা হলেন– মাহমুদ উদ্দিন, বাবুল উদ্দিন, আগা বাচ্চু উদ্দিন, শফিক উদ্দিন।
ঘটনার পরপর ফায়ার সার্ভিস, স্থানীয়রাসহ সিসিকের কর্মীরা নিখোঁজদের সন্ধানে উদ্ধার তৎপরতা চালালেও সন্ধান মেলেনি। পরে উদ্ধার কাজে সেনাবাহিনী যোগ দিয়ে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে সিসিকের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ধসে পড়া বাড়িতে দুটি পরিবার থাকতো। টিলা ধসে চাপাপড়া ঘরের নিচে দুই পরিবারের ছয় জন আটকে পড়েছিলেন। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এবং আমরা এসে এক পরিবারের তিনজনকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাই। এ ছাড়াও টিলা ধসে মাটিচাপা পড়ে যাওয়া একই পরিবারের বাকিদের সন্ধানে ঘটনাস্থলে কাজ শুরু করে সেনাবাহিনীর একটি দল। একপর্যায়ে মাটিচাপা পড়া করিমসহ তার স্ত্রী ও শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে শাহপরাণ থানার ওসি মোহাম্মদ হারুনূর রশীদ চৌধুরী বলেন, বৃষ্টির কারণে পাহাড়ধসে একটি আধাপাকা ঘরের ওপরে পড়ে ওই ঘরের নিচে একই পরিবারের তিনজন চাপা পড়ে মারা গেছেন। তাদের মরদেহ উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য করুন