বুলেটের সাহসিকতায় বাঁচল খামারের ২০ গরু

আর এস মাহমুদ হাসান, বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি

বুধবার, ১২ জুন ২০২৪ , ০৪:৪০ পিএম


বুলেটের সাহসিকতায় বাঁচল খামারের ২০ গরু
ছবি: সংগৃহীত

কোরবানির ঈদের আগ মুহূর্তে বিভিন্ন খামার থেকে গরু চুরির ঘটনা ঘটছে। গত ৬ জুন রাতে গাজীপুর সদরের জামতলা এলাকায় গরু চোরের একটি দল প্রবেশ করে। এর আগের দিনই জামতলার পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে চুরি হয় ১২ গরু। জামতলা এলাকার খামারটিতে যখন চোরেরা প্রবেশ করে তখন ওই এলাকা পাহারাতে ছিল বুলেট নামে এক প্রহরী কুকুর। 

বিজ্ঞাপন

বুলেটকে পালেন মো. সাজ্জাদ হোসেন নামে এক মুদি দোকানি। তার পাশের বাড়ির খামারে আছে ২০টি গরু। বুলেটকে ওই খামারের মালিক খাবার দেন মাঝেমধ্যে। গরু চোরেরা ওই গোয়ালে ঢুকলে টের পেয়ে যায় বুলেট। তখন চেঁচামেচি শুরু করে। বুলেটের চেঁচামেচি ও আক্রমণাত্মক আচরণের কারণে চোরেরা পালিয়ে যায়। সব চোর পালালেও রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকে বুলেট।

বিজ্ঞাপন

গরু নিতে না পেরে চোরের দল এলোপাতাড়ি কুপিয়েছে বুলেটকে, বুলেটের পুরো শরীরে জখম হয়েছে মারাত্মকভাবে, দুই ভাগ হয়ে যায় ওর নাক। 

এ অবস্থায় রোববার (৯ জুন) দুপুরে বুলেটের মালিক নিয়ে যায় গাজীপুর সদরের পেট অ্যানিমেল ক্লিনিক পেট পয়েন্ট গাজীপুরে। প্রায় ৩ ঘণ্টা ডাক্তারদের অক্লান্ত চেষ্টায় বুলেটের শরীরের ৭টি স্থানে মোট ৩৭টা সেলাই লাগে এবং জোড়া লাগানো হয় দুই ভাগ হয়ে যাওয়া নাক। সার্জারি শেষে চিকিৎসা দিয়ে বুলেটকে বাড়ি ফেরানো হয়। পরদিন পেট পয়েন্ট গাজীপুরের ডা. মো. মোহাইমিনুল হক পদ্ম ও ডা. মো. তাছমীর রাইয়ান লাবিব তাদের টিমের সদস্য রাকিবুল রায়হান, মো. আসাদুজ্জামান সজল, ইমন রহমান ও তানভীর মাহতাব তারিফসহ যান বুলেটের অবস্থা পর্যবেক্ষণে।

তারা জানিয়েছেন, বুলেট এখন কিছুটা দুর্বল হলেও অনেকটা সুস্থ। বিপদ কেটে গেলেও সম্পূর্ণ সুস্থ হতে আরও কদিন সময় লাগবে। বুলেটের এই সাহসিকতায় ওই রাতে জামতলা গ্রামের প্রায় প্রায় ৩০ লাখ টাকার সম্পদ বেঁচে গেছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। বুলেট এখন সকলের কাছে হিরো, সবাই বুলেটের শুশ্রূষা কামনা করছেন।

বিজ্ঞাপন

এ ঘটনায় পেট পয়েন্ট গাজীপুরের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও সার্জন ডা. মো. মোহাইমিনুল হক পদ্ম বলেন, বুলেটের শরীরের মোট ৭টি স্পটে আমরা খুব গভীর জখম পেয়েছি। খুবই ধারালো বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। এক কোপ খেয়েই পালায়নি বোঝা যায়, বারবার প্রতিহত করেছে। মেজর সার্জারির প্রয়োজন হয়েছে। সার্জারির চব্বিশ ঘণ্টা পর অবজারভেশন বলছে বুলেট অনেকটা স্বাভাবিকভাবেই হাটাহাটি করছে, খাবারের অ্যামাউন্ট কম হলেও মুখে যাচ্ছে, স্যালাইন ইঞ্জেক্ট করার প্রয়োজন হচ্ছে না। সম্পূর্ণ বিপদমুক্ত না হলেও অবস্থা আগের চেয়ে অনেকটাই ভালো। আমরা আশা রাখি বুলেট সকল ট্রমা কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে।

কনসালটেন্ট ও সার্জন ডা. মো. তাছমীর রাইয়ান লাবিব জানান, বুলেট খুবই শক্ত মানসিকতার কুকুর। প্রভু ভক্তির এক চমৎকার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে । আমরা রেগুলার চেকআপের মাধ্যমে বুলেটের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছি। এখন বুলেট আগের চেয়ে অনেকটাই ভালো। সব ঠিকঠাক থাকলে আশা করি খুব দ্রুতই বুলেট তার পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission