• ঢাকা মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১
logo

থোকায় থোকায় ঝুলে আছে রসালো আঙুর

  ২২ জুন ২০২৪, ১০:৪০
ছবি : আরটিভি

সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে রসাল আঙুর। সুতা ও বাঁশের মাচায় ঝুলে থাকা মিষ্টি এই রসালো ফলের পরিচর্যায় ব্যস্ত যুবক সবুজ। বিদেশি ফল আঙুর দেশে চাষ করলে টক হয় এমন ধারণাকে বদলে দিতে ইউটিউবে দেখে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুরের যোগীহুদা গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদের কাছ থেকে আঙুরের চারা সংগ্রহ করে আবাদ শুরু করেন তিনি। এ নিয়ে রঙিন স্বপ্ন বুনছেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের উপজেলার সাতখামাইর (পশ্চিমপাড়া) গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা সবুজ।

সবুজের ফল বাগানের মাচায় থোকায় থোকায় ঝুলছে আঙুর। আঙুরের লতায় পেঁচানো গেট সাদৃশ্য মাচার ভেতর দিয়েই প্রবেশ করতে হয় তার ফল বাগানে। গাজীপুরের লাল মাটিতে আঙুর আবাদ করে ফলিয়ে সফলতা পাওয়া যায় তা প্রমাণ করলেন শ্রীপুরের যুবক সবুজ। তার ফল বাগানে মাচা তৈরি করে তিনি সুপার সনিকা জাতের আঙুর চাষ শুরু করেন। প্রথমবার পরীক্ষামূলকভাবে প্রায় বছর খানেক আগে ২৫টি আঙুর গাছ লাগালেও ২১টি গাছে ফলন আসছে। গাছের একেকটি থোকায় ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম আঙুর ঝুলে আছে। তার বাগানে আঙুরের আকার এবং ফলন ভালো হওয়ায় আশপাশের এলাকা থেকে কৃষকেরা আঙুর চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তার বাগানের আঙুর বিদেশ থেকে আমদানিকৃত আঙুরের তুলনায় বেশি রসালো মিষ্টি ও সুস্বাদু হবে বলে তিনি আশা করছেন। শখের বসে চাষ করে সফল হলে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের পরিকল্পনা রয়েছে তার।

ঢাকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন পাশের টেংরা গ্রামের মনিরুজ্জামান। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখে তিনি সবুজের আঙুর বাগান দেখতে এসেছেন। তিনি বলেন দেশের মাটিতে এত সুন্দর বিদেশি ফল! একটি খেয়ে বলেন এই আঙুর অনেক মিষ্টি হবে।

শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আবু বকর সিদ্দিক আকন্দ আঙুর বাগান দেখতে এসেছেন। তিনি বলেন, যুবক সবুজ তার ফল বাগানে যেসব ফলের চাষ করেছে সবগুলোই ঝুঁকিপূর্ণ। এর আগে সে কমলা চাষ করে এলাকায় সারা ফেলে দিয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সে পারে এটা দেখিয়েছে। তার এ সফলতা অন্যান্য যুবক ও কৃষকদের প্রেরণা দিবে। বাংলাদেশের যুবকেরাও বিদেশি ফল এদেশের মাটিতে ফলাতে পারে সবুজ তার প্রমাণ।

সরেজমিনে সাতখামাইর (পশ্চিমপাড়া) গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল এরিয়া নিয়ে কাটা তারের বেড়া দিয়ে ঘেরা। বাগানে প্রবেশ করতেই সুতা দিয়ে মাচা তৈরি করে আঙ্গুর চাষ করেছেন। তার ফল বাগানে ঢুকতেই দেখা মেলে থোকাই থোকাই ঝুলে আছে রসালো আঙুর। বাগানের সমস্ত কাজ খুটে খুটে দেখছেন সবুজ নিজে। আঙুরের পাশাপাশি মিশ্র ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন। তার বাগানে আছে কমলা, কুল, পেয়ারা, পেঁপে, চায়না কমলা, কলা, করমচা ও আম চাষ করেন। তার বাগান দেখতে প্রতিদিন ছুটে আসছে চাষি ও দর্শনার্থী।

বাগানের কাজে সাহায্য করা সাইফুল ইসলাম বলেন, দেশ থেকে অনেক মানুষ বিদেশে যায় ফলের বাগান বা আঙুর বাগানে কাজ করতে। আমি কখনো কল্পনাও করতে পারিনি যে আঙুরের বাগানে কাজ করব। এই আঙুর খেতে খুব রসালো এবং মিষ্টি হবে মনে হচ্ছে।

আঙুর চাষি সবুজ মিয়া বলেন, ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার যোগীহুদা গ্রামের কৃষকের কাছ থেকে আঙুর চারা সংগ্রহ করি। রোপণের সাত মাসের মাথায় ফলন পাওয়ার কথা থাকলেও তার বাগানে আঙুরের ফলন আসে ১০ মাসে। পরিচর্যায় ঘাটতির কারণে ফলন আসতে তিন মাস দেরি হয়েছে বলে দাবি তার। আমার মতো আরও উদ্যোক্তা আঙুরে চাষে এগিয়ে আসলে বাইরে থেকে দেশে লাখ লাখ টন আঙুর আনতে হবে না। এই আঙুর চাষ করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করতে পারব। পাশাপাশি একদিকে যেমন আমাদের দেশ উন্নত হবে, সামনের দিকে এগিয়ে যাবে, অপরদিকে আমাদের আর্থিক অবস্থাও অনেক উন্নত হবে। যদি কেউ আমার বাগানে আসতে চান অবশ্যই আসবেন আঙ্গুর খেয়ে যাবেন। এখনো গাছে আঙুর আছে। নিজেকে সফল উদ্যোক্তা বলে মনে হচ্ছে। কৃষি বিভাগ ও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষে সফল হওয়া সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

আঙুর চাষ সম্পর্কে তিনি বলেন, চৈত্র, বৈশাখ, জৈষ্ঠ্য ও আষাঢ় মাসে আঙুরের চারা রোপণ করলে প্রথম বছরেই ফল পাওয়া যাবে। আর যদি আরও দেরিতে লাগাই তাহেল ফল কম আসবে। একেবারেই সহজ পদ্ধতিতে আঙুর চাষ করা যায়। জমিতে ৭-৮ ফুট উচ্চতার পিলার লাগবে। চারা লাগানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে এক লাইন থেকে আরেক লাইনের ৯ ফুট দূরত্ব এবং গাছের থেকে গাছের দূরত্ব ৬ ফুট রাখতে হবে। এভাবে রোপণ করলে ফলন ভালো হবে। চারা লাগানোর আগে জৈব সার, টিএসপি ও জিপ-সার দিয়ে যেখানে চারা লাগাবে সেখানে ভালোভাবে খুড়ে সার দিতে হবে। চারা গালানো পর ১০-১২ দিন ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। একবার ফল আসা শুরু করলে নিয়মিত পরিচর্যায় অনেক দিন যাবত আঙুর পাওয়া সম্ভব।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন, আঙুর একটি উচ্চমূল্য ফল। আমাদের দেশে আঙুরের চাষ নেই বললেই চলে। শ্রীপুরের মাটি আঙুর চাষের জন্য উপযুক্ত। সাতখামাইর (পশ্চিমপাড়া) গ্রামের যুবক সবুজ প্রাথমিকভাবে আঙুর চাষ করে দেখিয়েছে। আমরা তাকে সার ব্যবস্থাপনা ও ওষুধ প্রয়োগের ব্যাপারে কৃষি বিভাগ সবসময় তার পাশে থেকে পরামর্শ দিয়ে আসছে। যদি আঙুরের মান ভালো হয় তাহলে কৃষকদের নিয়ে আঙুর চাষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেব। সে লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ কাজ করছে।

মন্তব্য করুন

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
শ্রীপুরে ট্রাকচাপায় তুলা গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তা নিহত
গৃহকর্মীকে ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ, চিকিৎসক গ্রেপ্তার 
শ্রীপুরে রসালো লটকনের সফল চাষ
চাচার মৃত্যুর খবর শুনে বাড়ি যাওয়ার পথে প্রাণ গেল ভাতিজার