রাসেলস ভাইপার কামড় দিয়েছিল গালে, এখন পুরোপুরি সুস্থ হেফাজুল
গত ৩১ মে জমিতে ঘাস কাটার সময় একটি রাসেলস ভাইপার সাপ দেখতে পান রাজশাহীর চারঘাটের পিরোজপুর গ্রামের কৃষক হেফাজুল হক। এ সময় সাপটিকে মারতে নিচু হয়ে কাঁচি দিয়ে আক্রমণ করেন তিনি কিন্তু সাপটি তার ডান চোয়ালে ছোবল দেয়। এরপর সাপটিকে মেরে ব্যাগে ভরে মোটরসাইকেলের পেছনে বসে হাসপাতালে এসেছিলেন হেফাজুল। তিন দিনের চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান তিনি।
রোববার (২৩ জুন) সপরিবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন হেফাজুল।
সুস্থ হওয়া হেফজুল বলেন, ‘আমার মনে একটা বিশ্বাস ছিল যে সর্প দংশনের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা হলে সাপের বিষ লাগবে না। আমার ধারণা অ্যান্টিভেনম দিলে আমার শরীরের বিষ পানি হয়ে যাবে। তাই কোনো ওঝার কাছে না গিয়ে সাপ নিয়ে সরাসরি রাজশাহী মেডিকেল গিয়েছি। আমার ধারণা ছিল চিকিৎসকরা সাপ দেখলে সঠিক অ্যান্টিভেনমটা দ্রুত দিতে পারবে। তাই সাপ সঙ্গে ধরে নিয়ে গেছি হাসপাতালে। রাসেলস ভাইপার যখন ছোবল দিয়েছে আমি এক সেকেন্ডের জন্য নার্ভাস হইনি। সাপে ছোবল দিয়েছে মারা যাব, আমার একবারের জন্যও মনে হয়নি। আমি ও আমার পরিবার মনে করি হাসপাতালের দ্রুত চিকিৎসা সেবাই এ থেকে বাঁচতে সর্বোত্তম পন্থা।’
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, রাসেলস ভাইপারে আক্রান্ত হয়ে দেড় ঘণ্টার মধ্যে হেফাজুল হক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে আসেন। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাৎক্ষণিকভাবে তাকে আইসিইউতে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। দ্রুত সময়ে আইসিইউতে আমরা নিয়ম মাফিক চিকিৎসা দেওয়ায় তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যান।
তিনি বলেন, ‘২০১২ সাল থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে প্রতি বছর রাসেলস ভাইপার সাপে ছোবল দেওয়া অসংখ্য রোগী চিকিৎসা পেয়ে আসছে। যারা সাপের ছোবল দেওয়ার ২ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের এখানে আসতে পেরেছে তাদের প্রায় সবাই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছে। তবে দেরিতে চিকিৎসা পাওয়া রোগীদের প্রায় সবার ডায়ালাইসিস লেগেছে। অনেকের আক্রান্ত স্থানে পচন ধরেছে।’
আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আপনার আশেপাশের সকল ওঝাদের বলুন তারা যেন অতিদ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন। রাসেলস ভাইপার সাপ নিয়ে আতংকিত না হয়ে সঠিক তথ্য জানুন। আমরা যারা দীর্ঘদিন রাসেলস ভাইপার আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে চলেছি এবং প্রাণিবিদ্যা নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে সঠিক তথ্য জানুন।’
তিনি বলেন, ‘রাসেলস ভাইপার নিজে আক্রান্ত না হলে সে সাধারণত কাউকে কামড় দেয় না। আমাদের আইসিইউর সকল ভর্তি রোগীরা এ তথ্য দিয়েছে। সুতরাং, ভয় বা ঘাবড়ানোর কিছু নেই। সাপে ছোবলের যে কোনো রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে আনুন। নদীর তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের কৃষক ভাইদের গামবুট পায়ে মাঠে কাজ করতে উৎসাহিত করুন। রাসেলস ভাইপারকে নিজে থেকে আক্রমণ-বিরক্ত করবেন না। ওকে ওর মতো থাকতে দিন। আপনিও নিরাপদে থাকবেন।’
মন্তব্য করুন