পুকুরে পড়ে আছে বিদ্যুতের খুঁটি, এক মাসেও নজরে আসেনি কর্তৃপক্ষের
শরীয়তপুরের সদর উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এক মাসের অধিক সময় ধরে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটি পুকুরের মধ্যে হেলে পড়ে আছে। হেলেপড়া বৈদ্যুতিক তারগুলো নিচু হয়ে পড়ে থাকায়, বাধ্য হয়ে নিচ দিয়েই চলাচল করছেন স্থানীয়রা। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা।
বুধবার (৩ জুলাই) সকাল ৮টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রুদ্রকর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটি পুকুরে হেলে পড়ে আছে।
জানা যায়, অন্তত ৮ বছর আগে ৪টি নতুন খুঁটির মাধ্যমে সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের আমতলী এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। যার মধ্যে ০.২ কেভি ও ২২০ ভোল্টের সঞ্চালন লাইন চালু রয়েছে। লাইনটিতে ৭টি মিটারের মাধ্যমে সুবিধা নিচ্ছে বেশ কয়েকটি পরিবার। খুঁটি এবং লাইনগুলো দেখভাল করছেন এম আর ট্রেড মার্ক নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত ২৭ মে (সোমবার) ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে সেই সঞ্চালন লাইনের একটি খুঁটির গোড়ার মাটি সরে গিয়ে মালেক ঢালীর পুকুরের মধ্যে পড়ে যায়। এ ছাড়াও তারগুলো একটি চলাচলের রাস্তার ওপর পড়ে থাকায় অন্তত ২০টি পরিবারের লোকজন ঝুঁকি নিয়ে তারের নিচ দিয়ে চলাচল করছেন।
ঝুঁকিপূর্ণ খুঁটিটি ঠিক করতে ২৮ মে (মঙ্গলবার) ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির শরীয়তপুরের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে আবেদন করেন স্থানীয় বাসিন্দা মালেক ঢালী। এরপর দীর্ঘ ১ মাস ৪ দিন পার হলেও ক্ষতিগ্রস্ত খুঁটিটি মেরামত করা হয়নি। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, খুঁটির দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারকে খুঁটিটি মেরামত করতে একাধিকবার বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে গৃহবধূ নিপা বলেন, আমাদের এই তারগুলো অনেকদিন আগে তুফানে পড়ে গেছে। আমরা এই রাস্তা দিয়েই বাড়িতে চলাচল করি। আমরা যখন বাড়ির কাজে ব্যস্ত থাকি, আমাদের শিশুরা বাচ্চারা না বুঝে এই তার এসে ধরে। প্লাস্টিকের কাভার বলে রিস্ক কম, কিন্তু দুর্ঘটনা হতে তো আর সময় লাগে না। আমরা চাই দ্রুত এই তার সরানো হোক।
কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী আফছানা বলেন, ‘আমাদের ২০টি পরিবারের যাওয়ার রাস্তা এই একটাই। দীর্ঘদিন ধরে খুঁটিটি পড়ে থাকলেও বিদ্যুৎ বিভাগ কোন মাথা ঘামাচ্ছে না। তাদের কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে তাও আমলে নিচ্ছে না। বড় ধরনের দুর্ঘটনা হলে এর দায় কে নেবে? আমরা চাই দ্রুত খুঁটির আগের জায়গায় স্থাপন করা হোক।’
ভুক্তভোগী খালেক ঢালী বলেন, ‘১ মাসের ওপরে হয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি উল্টে পড়েছে। আমরা বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে যাতায়াত করতে পারছি না। রিস্ক হয়ে গেছে। বিষয়টি বিদ্যুৎ বিভাগকে সঙ্গে সঙ্গে জানালেও তারা এখনও কাজ শুরু করেনি। আমাদের একটাই দাবি দুর্ঘটনা ঘটার আগে জরুরি ভিত্তিতে খুঁটিসহ লাইনটি সংস্কার করা হোক।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম আর ট্রেড মার্কের ঠিকাদার মজিবুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমরা অবগত আছি। তবে আমাদের লোকজন ঈদের ছুটিতে থাকায় মেরামত করা সম্ভব হয়নি। আজকে আমাদের লোকজন এসেছে। আশাকরি আজই খুঁটিটি ঠিক করা হবে।’
বিষয়টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি উল্লেখ করে শরীয়তপুর ওজোপাডিকোর উপসহকারী প্রকৌশলী মুহাম্মদ নবীদ আলী বলেন, ‘এ ব্যাপারে একটি অভিযোগ পেয়েছি। খুঁটিটি ঠিকাদারকে ঠিক করতে বলা হয়েছিল। তবে ঈদের ছুটিতে পড়ে যাওয়ায় লোকজন সংকটের কারণে ঠিক করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। আমরা এ নিয়ে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেছি। বুধবারের মধ্যে ঠিক করার কথা জানিয়েছেন ঠিকাদার।’
মন্তব্য করুন