• ঢাকা শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪, ২২ আষাঢ় ১৪৩১
logo

পাথরঘাটায় বৃষ্টির পানিতে ভাঙছে ৭ কোটি টাকার রাস্তা

পাথরঘাটা প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ০৩ জুলাই ২০২৪, ২১:৫৪
সড়ক
ছবি: আরটিভি

বরগুনার পাথরঘাটায় ৬ কোটি ৭২ লাখ ৬৯ হাজার ৫২৫ টাকা ব্যয়ে নির্মিত চার কিলোমিটার সড়ক হস্তান্তরের আগেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই পিচ ঢালাই রাস্তাটির দু’পাশ দিয়ে ভাঙতে শুরু করেছে। তবে পাথরঘাটা এলজিইডির কর্মকর্তা বলছেন, রাস্তাটি এখনও হ্যান্ড ওভার করেনি ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে দেখা যায়, পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে থেকে হরিনঘাটা ইকোপার্কের আগে জাফরের দোকান নামক স্থান পর্যন্ত চার কিলোমিটার সড়কের কাজ শেষ হয়েছে গত তিন মাস আগে। এরমধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে রাস্তার পিচ ঢালাই উঠে ইট সুড়কি সরে গিয়ে রাস্তা ভেঙে গেছে। এতে যানবাহন চলাচল করতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

পাথরঘাটা উপজেলা এলজিইডি কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, সড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতকরণের জন্য ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে টেন্ডার দেওয়া হয়। এলজিইডির এই কাজটি করতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৬ কোটি ৭২ লক্ষ ৬৯ হাজার ৫২৫ টাকা। কাজটি ই-টেন্ডারের মাধ্যমে পটুয়াখালীর আবুল কালাম আজাদ নামে এক ঠিকাদার পান। সেখান থেকে সাব কন্ট্রাকের মাধ্যমে কাজের দায়িত্ব দেন বরগুনার দুই ঠিকাদার শাহিন ও শহিদুল ইসলাম মৃধাকে।

এ সড়কটির কাজের শুরু থেকেই নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছিলেন স্থানীয়রা। তবে এলাকার কিছু প্রভাবশালী সরকার দলীয় নেতাদের চাপে তারা কিছু করতে পারেনি। আর তাদের এই অনিয়মের কারণে এখন ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, কাজ করার সময় নিম্নমানের খোয়া দিয়ে দীর্ঘদিন ফেলে রাখা ছিল রাস্তার কাজ। এ সময় ঠিকাদাররা চুলার মাটির মতো ইট-সুড়কি ব্যবহার করেছে। পরে বিভিন্ন দপ্তর ম্যানেজ করে দ্রুত করে কাজ শেষ করে ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় বাসিন্দা ও সাবেক জাতীয় দলের ফুটবলার মজিবুর রহমান কালু জানান, ‘আগের বারও নিম্নমানের খোয়া ও বালু দিয়ে এ রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছিল। তখন অনেক জায়গা দিয়ে চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ভাঙা রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে অতিষ্ঠ ছিল এই এলাকার মানুষ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর রাস্তাটি নতুন করে হতে দেখে অনেকেই ভেবেছিল এই বুঝি কষ্টের দিন শেষ। কিন্তু একি হলো রাস্তাটির। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে রাস্তার দুইপাশ ক্ষয়ে ক্ষয়ে পড়তে আরম্ভ করেছে। এবার কষ্ট যেন আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।’

পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, এলজিইডির পাথরঘাটা উপজেলা প্রকৌশলী চন্দন কুমার চক্রবর্তী, উপসহকারী প্রকৌশলী আবুল বাশারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যোগসাজসে পাথরঘাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে হরিনঘাটা জাফরের দোকান পর্যন্ত ৬ কোটি ৭২ লক্ষ ৬৯ হাজার ৫২৫ টাকা ব্যয়ে ৪ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুত করণের কাজে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। যার কারণে মাত্র তিন মাসের মধ্যেই রাস্তাটি ভেঙে গেছে। রাস্তা নির্মাণের অনিয়মের বিষয়ে বেশ কয়েকবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন।

অভিযোগ রয়েছে সম্প্রতি বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়া নদীর ওপর নির্মিত ব্রিজ ভেঙে বরসহ ৯ যাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনার সেই ব্রিজটিও এই সাব কন্টাক্টর শহিদুল ইসলাম মৃধা দুর্নীতি করে নির্মাণ করেছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদারের প্রধান সাব-কন্ট্রাক্টর মোহাম্মদ শাহিনকে তার মুঠো ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করার পরেও তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি। একপর্যায়ে তিনি মোবাইল বন্ধ করে দেন। তবে সড়ক নির্মাণের সময় অভিযোগের ভিত্তিতে শহিদুল ইসলাম মৃধা কাছে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, সিডিউল মেনেই সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে পাথরঘাটা এলজিডির উপজেলা প্রকৌশলী চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের কাছে এখনও কাজ বুঝিয়ে দেয়নি ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ। তবে ঠিকাদার রাস্তার পাশে পর্যাপ্ত মাটি না দেওয়ায় রাস্তার দুইপাশ ভেঙে গেছে। রাস্তা হ্যান্ড ওভারের আগ পর্যন্ত রাস্তার সকল দায়ভার ঠিকাদারের। তারা রাস্তার ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরা জানান, সড়ক নির্মাণে অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। এই বিষয়টি পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যাবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলা প্রকৌশলীকে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত না করা পর্যন্ত ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ না করতে বলা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক অবরোধ শিক্ষার্থীদের
কোটা বাতিলের দাবিতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ
স্কুল ব্যাগে মিলল গাঁজা, আটক ২
কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ