• ঢাকা শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১
logo

নিজ গ্রামে মানবতার ফেরিওয়ালা ছিলেন আবেদ আলী

আরটিভি নিউজ

  ০৯ জুলাই ২০২৪, ১৯:৫৫
ফাইল ছবি

লাখ লাখ তরুণের স্বপ্ন বিক্রি করে পাহাড় সমান সম্পদ গড়ে ‘টক অব দ্যা কান্ট্রি’তে পরিণত হয়েছেন সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যানের গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী। বিসিএসসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় নিজের দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন তিনি।

জানা গেছে, ছদ্মবেশী ধার্মিক এই আবেদ আলী নিজ গ্রামে মানবতার ফেরিওয়ালা নামে পরিচিত ছিলেন। শুধু নিজগ্রামেই নয়, ডাসার উপজেলাজুড়ে বিচরণ ছিল তার। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হতে চেয়েছিলেন আবেদ আলী। অসহায় মানুষকে সাহায্য করে মন জয় করার আপ্রাণ চেষ্টার কমতি রাখেননি তিনি।

ঈদ ও পূজাকে ঘিরে কয়েক হাজার শাড়ি-লুঙ্গি, নগদ টাকাও বিতরণ করছেন তিনি। গত কোরবানির ঈদে দামি গাড়িতে চড়ে ১০০ জনের মধ্যে এক কেজি করে মাংস বণ্টন করেন। সেই ভিডিও শেয়ার করেন নিজের ফেসবুকে। আবেদ আলীর ছেলে সিয়াম শুধু একটি গাড়ি নয়, একাধিক দামি গাড়ি ব্যবহার করেন। সবই দামি, ঝকঝকে। পড়েছেন ভারতের শিলংয়ে। দেশের একটি ব্যয়বহুল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি পড়ালেখা করেন। তিনি ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। প্রভাব জাহির করার জন্য বড় বড় নেতা ও আমলাদের সঙ্গে ছবি তুলে বাবা-ছেলে ফেসবুকে বুস্ট করে ব্যাপকভাবে প্রচার করেন। আবেদ আলী নিজেই তার ফেসবুক পেজে একটি হোটেল নির্মাণের তথ্য তুলে ধরেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিত্ত-বৈভব ফুলেফেঁপে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আবেদ আলী মীর পদবি পাল্টে নামের আগে সৈয়দ পদবি ব্যবহার শুরু করেন। বাবার উত্থান নিয়ে ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামও সম্প্রতি একটি সমাবেশে বক্তব্য দেন।

বাবার উত্থানের গল্প বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমার বাবা একদম ছোট থেকে বড় হয়েছেন। আমার বাবার বয়স যখন ৮ বছর, তখন পেটের দায়ে তিনি ঢাকায় চলে গেছেন। ঢাকায় গিয়ে কুলিগিরি করে ৫০ টাকা রুজি দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। তিনি এখন একটি লিমিটেড কোম্পানির মালিক। তিনি কষ্ট করে বড় হয়েছেন।

সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে উঠে আসে আবেদ আলীর ভয়ংকর তথ্য। প্রায় একযুগ আগে থেকে পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসের চক্রের সঙ্গে জড়িত এই আবেদ আলী। এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

আবেদ আলীর গ্রামের বাড়ি এসে নেমে পড়েন উপজেলা নির্বাচনের প্রচারণায়। রাজনীতির মাঠে-ময়দানে কোটি টাকার গাড়িতে চড়ে গণসংযোগ করেন আবেদ আলী ও তার ছেলে ছাত্রলীগ নেতা সোহানুর রহমান সিয়াম। এলাকায় বাবা ছেলে দু-হাত ভরে দান-খয়রাত করতেন। নিজ গ্রামে কোটি টাকা খরচ করে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। বাড়ির পাশে করেছেন মসজিদ। এ ছাড়াও সরকারি জায়গা দখল করে তার গরুর খামার ও মার্কেট নির্মাণাধীন। উপজেলার পান্তাপাড়া ও পূর্ব বোতলা গ্রামে কিনেছেন বিপুল সম্পদ।

আবেদ আলীর আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার গল্প যেন সিনেমাকেও হার মানাবে। তিনি ৮ বছর বয়সে জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমান ঢাকায়। শুরু করেন কুলির কাজ। একসময় ফুটপাতে ঘুমিয়েছেন। কষ্টের পর কষ্ট করেছেন তিনি। এরপর গাড়ি চালানো শিখে চাকরি নেন পিএসসিতে। তারপর জড়িয়ে পড়েন পিএসসির প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে। আর ফিরে তাকাতে হয়নি। অর্জন করেন বিপুল সম্পদ, সঙ্গে ক্ষমতাও।

এলাকায় শিল্পপতি হিসেবে পরিচয় দিতেন সৈয়দ আবেদ আলী। স্থানীয়রা জানান, সৈয়দ আবেদ আলী মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামের মৃত আব্দুর রহমান মীরের ছেলে। আব্দুর রহমান মীরের তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে আবেদ আলী মেজ। রহমান মীরের বড় ছেলে জবেদ আলী কৃষিকাজ করেন। ছোট ছেলে সাবেদ আলী এখনও এলাকায় অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদের ভাই আবেদ আলী জীবন। এলাকার মানুষের কাছে তিনি পরিচয় দিতেন শিল্পপতি হিসেবে। আবেদ আলীর ছেলে সোহানুর রহমান সিয়ামও ব্যবহার করতেন দামি গাড়ি। আবেদ আলী নিজেও দামি গাড়িতে চড়তেন। অথচ এলাকার কেউ জানতেনই না তিনি গাড়িচালক। তিনি ঢাকায় রিয়েল স্টেটের ব্যবসা করতেন বলে এলাকায় প্রচার ছিল। কয়েক বছর ধরে এলাকায় ব্যাপক দান-খয়রাতও করেন প্রশ্নফাঁস চক্রের এই হোতা।

স্থানীয়রা আরও জানান, এত সম্পত্তির মালিক কীভাবে হলো সেই প্রশ্ন সবার। মানুষকে লাখ লাখ টাকা দান করতেছে। এলাকায় বাড়ি করছে, মসজিদ করেছে। কেউ সৎভাবে উপার্জন করে অল্পদিনে কোটি কোটি টাকার মালিক হতে পারে না। এর তদন্ত হওয়া দরকার। এলাকাবাসী হিসেবে আমরা এর তদন্ত চাই।

মন্তব্য করুন

Radhuni
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
৪৩তম বিসিএস ও ৮০৩ এসআই নিয়োগ বাতিল দাবি বিএনপির
৪৩তম বিসিএসে ২০৬৪ জনকে নিয়োগ, গেজেট প্রকাশ
৪৩তম বিসিএসের গেজেট প্রকাশ
৪৩তম বিসিএসে নন-ক্যাডারে সহকারী শিক্ষক পদে ১৩৮ জনের নিয়োগ