হাইকোর্টে স্থিতাবস্থা থাকলেও সেতুর ইজারা তুলছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

সোমবার, ১৫ জুলাই ২০২৪ , ১১:১৩ এএম


হাইকোর্টে স্থিতি অবস্থা থাকলেও সেতুর ইজারা তুলছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান
ছবি : আরটিভি

চলতি বছরের বিগত ৩০ জুন ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ চীনমৈত্রী সেতুর তিন বছর মেয়াদি ইজারার মেয়াদ শেষ হয়েছে। এর আগে গত ২৭ জুন একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এই সেতুর টোল ইজারা কার্যাদেশ পরবর্তী চুক্তিসহ সব ধরনের কার্যক্রমে স্থিতি অবস্থা জারি করেন। কিন্তু স্থিতাবস্থা বহাল রেখেই বিগত ১৬ দিন ধরে সেতুটির ইজারা আদায় করছেন মেসার্স মোস্তফা কামাল এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১৪ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সরেজমিনে শম্ভুগঞ্জ সেতুর টোল আদায় বক্সে গিয়ে দেখা যায় এ চিত্র।

এ সময় যানবাহন থেকে ইজারা আদায় করা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা জানান, সড়ক ভবন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমাদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে আগের মতোই টোল আদায় করতে বলা হয়েছে। তাই আমরা ইজারা নিচ্ছি। 

বিজ্ঞাপন

হাইকোর্টের স্থিতাবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, হাইকোর্ট দেখবে সড়ক কর্তৃপক্ষ, আমরা মালিকের নির্দেশে আমাদের কাজ করছি।  

খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ময়মনসিংহ সড়ক ভবনের নির্বাহী প্রকৌশলী খাইরুল বাশার মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, হাইকোর্টের স্থিতাবস্থা মেনেই আপাতত ইজারা আদায়ে মেসার্স মোস্তফা কামাল এন্টারপ্রাইজকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে হাইকোর্ট যে সিদ্ধান্ত দেবেন, আমরা সে মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

সূত্র জানায়, টানা ১৪ বছর ধরে একটি প্রভাবশালী চক্র কারসাজির মাধ্যমে সমঝোতা করে শম্ভুগঞ্জ সেতুর ইজারা নিচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা মূল্যের এই সেতুর ইজারা নিচ্ছে তারা অর্ধেক মূল্যে। এতে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। এরই মাঝে বিগত ইজারার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় গত বছরের ২১ নভেম্বর সেতুটির নতুন ইজারা দরপত্র আহ্বান করা হয়। দফায় দফায় দরপত্র আহ্বান করে সর্বশেষ চলতি বছরের ৯ মে সপ্তম দফায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে ১৫ জন ঠিকাদার সিডিউল ক্রয় করলেও শেষ পর্যন্ত ১৪ জন ঠিকাদার সিডিউল জমা দেয়নি। তবে মেসার্স সৌরভ ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী মো. মাহাবুবুল হক প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ১ কোটি ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বেশি মূল্য দিয়ে দরপত্র জমা দিতে গেলে বাধা দেয় সন্ত্রাসীরা। বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগীরা একাধিক অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ আমলে না নিয়ে তড়িঘড়ি করে মেসার্স মোস্তফা কামালকে ৫৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকায় ইজারার কার্যাদেশ দেয়।

বিজ্ঞাপন

রিটকারী ঠিকাদার মেসার্স সৌরভ ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী মো. মাহাবুবুল হক বাবলু বলেন, হাইকোর্টের স্থিতাবস্থা অমান্য করে মেসার্স মোস্তফা কামালকে ইজারা আদায় করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে আদালত অবমাননা করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ঠিকাদারদের অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকার সব ধরনের টেন্ডার ইজিপি করলেও সড়ক কর্তৃপক্ষ এই সেতুর ইজারা ম্যানুয়েলি করেছেন। মূলত বিপুল অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে ওই প্রভাবশালী সিন্ডিকেটকে সমঝোতার সুযোগ দিতেই তারা এই প্রক্রিয়া বহাল রেখেছেন।
     
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমঝোতার সত্যতা স্বীকার করেছেন মেসার্স মোস্তফা কামাল এন্টাপ্রাইজের প্রভাবশালী অংশীদার ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. এমদাদ হক মন্ডল। তিনি বলেন, ‘ঠিকাদারি কাজে সব জায়গাতেই নিকু (নেগোসিয়েশন) হয়, আমরাও করেছি। এতে দোষের কিছু নেই।’

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission