ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা
দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে অল্প সংখ্যক জনবল দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বান্দরবান সদরের ১শ’ শয্যার হাসপাতাল। দিনদিন রোগীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি চিকিৎসা সেবার মান। নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও সেবার মান নিয়ে ক্ষুব্ধ রোগীরা। তবে জনবল সংকটকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতিদিন বান্দরবান সদরসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে শত শত রোগী সেবা নেওয়ার জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন বান্দরবান সদর হাসপাতালে। কিন্তু পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা।
জেলা সদরের একমাত্র সরকারি হাসপাতাল হওয়ায় বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রতিদিন শত শত দরিদ্র রোগী সেবা নিতে আসেন এ হাসপাতালে। কিন্তু চিকিৎসক সংকট, অকেজো যন্ত্রপাতি ও জনবল সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা।
সোমবার (১৫ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কর্তৃপক্ষের নানা অব্যবস্থাপনার কারণে হাসপাতালের টয়লেট থেকে শুরু করে রোগীদের থাকার ওয়ার্ড পর্যন্ত ভরে গেছে ময়লা আবর্জনায়। এর ফলে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে অনেক রুম। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে আলট্রাসনোগ্রাফির মতো জরুরি সেবা। শুধু তাই নয়, ময়লা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনরাও।
এদিকে রোয়াংছড়ি উপজেলা থেকে আসা ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত রোগী চিংম্রাসাং বলেন, ‘আমি দুদিন ধরে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি আছি। কিন্তু আসার পর থেকে হাসপাতালে পানি নেই। বাথরুমে যেতে পারতেছি না, গোসল করতে পারতেছি না।’
চিকিৎসা নিতে আসা আরেক রোগী ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘দাঁত ব্যথার কারণে সকাল থেকে সরকারি হাসপাতালে এসেছি। কিন্তু ডাক্তার পাচ্ছি না। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার জন্য একজন নার্স আমাকে তিনটি ওষুধ লিখে দিয়েছেন। একটি ওষুধ হাসপাতাল থেকে পেয়েছি, বাকি দুটি বাহির থেকে নিতে বলেছেন।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে আরেক রোগী কুলছুমা আক্তার বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, তাই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসি। কিন্তু এখানে যে পরিবেশ, আরও অসুস্থ হয়ে যাই। একটা রোগ নিয়ে এসে তিনটা রোগ নিয়ে বাড়ি যেতে হয়।’
অপরদিকে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে অব্যবস্থাপনার কথা স্বীকার করে সিভিল সার্জন মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে জনগণ হাসপাতালমুখী হচ্ছে। যার কারণে দিনদিন হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু আমার জনবল বাড়েনি। উল্টো ৫০ শয্যা হাসপাতালের সমান জনবল দিয়ে ১শ’ শয্যার হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা দিতে হচ্ছে। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যাতে করে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘জনবল সংকটের কারণে অনেক সময় রোগীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে গিয়ে কিছুটা ত্রুটি হতে পারে। চিকিৎসা সেবার মান আরও বাড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি আমরা।’
উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে ৫০ শয্যার হাসপাতাল থেকে ১শ’ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত হয় বান্দরবান সদর হাসপাতাল। তবে ১শ’ শয্যার হাসপাতাল হলেও ৫০ শয্যার কম জনবল ও চিকিৎসক দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবার কার্যক্রম।
মন্তব্য করুন