• ঢাকা রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
logo

চলছে সাঁড়াশি অভিযান, যাত্রাবাড়ী-বাড্ডার অবস্থা যেমন

আরটিভি নিউজ

  ২৪ জুলাই ২০২৪, ০৩:৫১
চলছে সাঁড়াশি অভিযান, যাত্রাবাড়ী-বাড্ডার অবস্থা যেমন
ছবি: সংগৃহীত

টানা পাঁচদিন সহিংসতার পরে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা মঙ্গলবার তুলনামূলকভাবে শান্ত ছিল। যেসব জায়গায় বেশি সহিংসতা হয়েছে, সেগুলোর শতভাগ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনাবাহিনী ও পুলিশ। তবে সোমবার রাত ও মঙ্গলবার ভোররাতে শহরের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ ব্যাপক ধরপাকড় চালিয়েছে। খবর বিবিসি বাংলার।

ঢাকা শহরের বেশ কয়েকটি থানা এবং আদালতে গিয়ে দেখা গেল, সহিংসতার অভিযোগে যাদের আটক করা হয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই ছাত্র, বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী ও শ্রমজীবী মানুষ।

মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) সকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এখনও পর্যন্ত ৬১৪ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে সরকার-বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মী কতজন রয়েছেন সেটি তারা জানাতে পারেননি।

সূত্র বলছে, দেশের বিভিন্ন জায়গায় আটককৃতদের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। শুধু ঢাকাতেই গত দুদিনে ১ হাজার ১১৭ জনকে আটক করা হয়েছে।

যাত্রাবাড়ী থানার সামনে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে দাঁড়িয়ে ছিলেন দুজন নারী। একজন মমতাজ বেগম, অপরজন সালমা বেগম। থানার সামনে ব্যাপক পুলিশ, র‍্যাব ও সেনা সদস্যরা তখন প্রহরারত রয়েছেন। দুজনই জানালেন মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে বাসা থেকে তাদের কিশোর ছেলেকে পুলিশ আটক করে থানায় এনেছে।

এরপর থেকে একটানা ১০ ঘণ্টা থানার সামনে তাদের অপেক্ষা। মঙ্গলবার যাত্রাবাড়ী থানার আওতাধীন বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে পুলিশ ও র‍্যাব।

মমতাজ বেগম এবং সালমা বেগমের বাসা যাত্রাবাড়ী থানার আওতাধীন ধোলাইপাড় এলাকায়।

সালমা বেগম জানালেন তার ছেলের বয়স ১৬ বছর এবং সে স্থানীয় একে উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

সালমা বেগম গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘রাত চারটার দিকে বাসার দরজা নক করছে। বলছে আমরা পুলিশের লোক, আপনার ছেলের সঙ্গে কথা বলবো। দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে সাত-আটজন হুড়মুড় করে আমার বাসায় ঢুকলো। ঢুকে আমার ছেলেকে একটা থাপ্পড় মারলো। আমি বলছিলাম, মাইরেন না, ওরে নিয়া যান। পুলিশ বাসায় ঢুকে জিজ্ঞেস করছে, তোর কান্ধে গুলি লাগছে। তুই পুলিশ মারছস। তুই আন্দোলনে গেছিলি। নাইলে গুলি লাগছে কেমনে? আমি বললাম, স্যার আমার ছেলেটা অসুস্থ। আমরা ডাক্তারের কাছে গেছিলাম, কাগজপত্র সব আছে। পুলিশ কোন কথাই শুনে নাই।’

সালমা বেগমের ছেলে তামিম রহমান শনিবার কাঁধে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তিনি দাবি করেন, ছেলে অসুস্থ ছিলেন। মৌচাকের একটি হাসপাতাল থেকে ডাক্তারের কাছ থেকে ফেরার সময় রাস্তায় সংঘাতের মধ্যে পড়ে যান। তখন তামিম রহমান গুলিবিদ্ধ হন।

ঘটনা প্রসঙ্গে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে গণমাধ্যমকর্মীদের ভেতরে ঢুকতে দেননি গেটে প্রহরারত পুলিশ।

‘থানায় পরিস্থিতি খুব গরম। সাংবাদিক-টাংবাদিক কাউরে ঢুকতে নিষেধ করছে। ভেতরে ডিসি স্যারও আছেন,’ বলছিলেন গেটে প্রহরারত একজন পুলিশ সদস্য।

কোটা বিরোধী আন্দোলনে যেসব জায়গায় সবচেয়ে বেশি সহিংসতা হয়েছে তার মধ্যে যাত্রাবাড়ী ও শনির আখড়া এলাকা ছিল অন্যতম।

মঙ্গলবার বিকেলে যাত্রাবাড়ী, মাতুয়াইল, রায়েরবাগ, শনির আখড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেল পরিস্থিতি পুরোপুরি শান্ত। কিছু দোকানপাটও খুলেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বেশ কিছু অটোরিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেল বিকেল চারটার দিকে।

যাত্রাবাড়ী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের একটি টোল প্লাজায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। এছাড়া মহাসড়কের পাশে পোড়ানো কয়েকটি গাড়ির ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, গত দুদিনে রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সহিংসতার বিভিন্ন চিহ্ন সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রবাড়ি ও শনির আখড়া এলাকায় সেনা সদস্য, র‍্যাব ও পুলিশ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

বাড্ডা এলাকার চিত্র

কোটা বিরোধী আন্দোলনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘাতের অন্যতম কেন্দ্রস্থল ছিল বাড্ডা ও রামপুরা এলাকা। বুধবার এসব এলাকার বিভিন্ন অলি-গলি ঘুরে ভিন্ন রকম এক চিত্র দেখা গেছে। এসব এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে এবং এখনও চলছে।

উত্তর বাড্ডার তেতুলতলা এলাকা থেকে সোমবার দুপুরে পুলিশ ১২জনকে আটক করেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। এদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়।

স্থানীয় একটি হোটেলের কর্মচারী মো. সোহেলও ছিলেন আটকৃতদের মধ্যে অন্যতম। তিনি জানান, দুপুর দুটার দিকে তাকে আটক করা হয় এবং জ্ঞিজ্ঞাসাবাদ শেষে মঙ্গলবার ভোররাত চারটার দিকে তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

বাড্ডার হোসেন মার্কেট এলাকা থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে ২৫ বছর বয়সী আহাদুল ইসলাম বাদলকে। তার মা লিপি আক্তার দাবি করেন, তার ছেলে কোনও বিক্ষোভ কিংবা সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।

তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। চারদিন ধইরা যে গ্যাঞ্জাম চলছে আমার ছেলে ওখানে যায় নাই।’

বাড্ডা এলাকার বিভিন্ন মহল্লা ঘুরে দেখা গেল, স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ‘পুলিশ আতঙ্ক’ বিরাজ করছে। কখন, কাকে আটক করা হয় সেটি নিয়ে অভিভাবকরা দুশ্চিন্তায় আছেন।

বাড্ডা থানার ডিউটি অফিসার মঙ্গলবার দুপুর দুটার দিকে বলেন, ‘সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রতিটি মামলায় চার থেকে পাঁচ হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। গতরাতে ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করে সকালে আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।’

ডিউটি অফিসার বলেন, ‘আমাদের থানায় পাঁচবার আসছিল অ্যাটাক করার জন্য। আমরা যে বেঁচে আছি এটাই বেশি’।

এ দিকে আদালত চত্বরের বাইরে কথা হচ্ছিল শাহিনা খানের সঙ্গে। তিনি মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা।

তার ছেলে সামসুল হক খান রনিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। শাহিনা খান বলেন, তার ছেলে বিএনপির ‘সমর্থক’ ছিল। আগে একাধিক মামলায় তিনি জামিনে ছিলেন। গ্রেপ্তারের পর তিনি জানতে পারেন যে, তার ছেলের বিরুদ্ধে ‘সহিংসতা ও জ্বালাও-পোড়াও’-এর মামলা দেওয়া হয়েছে।

শাহিনা খান বলেন, ‘আমার ছেলে তাজমহল রোডে শ্বশুরবাড়িতে গেছিল। ওখান থেকে র‍্যাব ওরে ধরে নিয়ে গেছে। আমার ছেলে বিএনপি করে এইটা ঠিক। ও তো কোনও কিছুতে জড়িত ছিল না।’

পুলিশ বলছে, কোটা বিরোধী আন্দোলনের সময় যেসব জায়গায় সবচেয়ে বেশি সংঘাত হয়েছে সেখানে গ্রেপ্তারের সংখ্যা বেশি।

পুলিশ দাবি করছে, যাদের আটক করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।

প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত এই সাঁড়াশি অভিযান চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন থানার পুলিশ কর্মকর্তারা।

মন্তব্য করুন

Radhuni
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
হত্যায় জড়িতদের বিচার চায় জাতিসংঘ
ফেনী পৌরসভায় সহিংসতায় ক্ষতি সাড়ে ৫ কোটি টাকা
জাতিসংঘকে সহিংসতার সব ঘটনা তদন্তের আহ্বান আইসিএসএফের
সহিংসতার প্রতিবাদে ঝিনাইদহে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ