নরসিংদী কারাগার থেকে যেভাবে পালালেন ৮২৬ বন্দি
গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) বিকেলে নরসিংদী কারাগারে হামলার পর পালিয়ে যান ৮২৬ বন্দি। হামলাকারীরা ইটপাটকেল ছুড়তে ছুড়তে কারাগারের দুই দিকের ফটক ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। এ সময় পেট্রোল বোমা মারা হয়। কারাগারের ভেতরে নানান জায়গায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
হামলাকারীরা কারারক্ষীদের থেকে ছিনিয়ে নেওয়া চাবি দিয়ে বন্দিদের অনেকগুলো কক্ষের তালা খুলে দেন। কিছু কক্ষের তালা ভেঙে ফেলা হয়। চারপাশ ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। এরপর একে একে ৮২৬ বন্দি পালিয়ে যান। এ সময় অস্ত্রাগার ও কারারক্ষীদের থেকে ৮৫টি অস্ত্র ও ৮ হাজার ১৫০টি গুলি লুট করা হয়।
ঘটনার চারদিন পর সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক লাগোয়া কারাগারের প্রধান ফটকের সামনের ক্যানটিন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তার ভেতরে অবশিষ্ট বলতে কিছু নেই। প্রধান ফটকের সামনে স্থানীয়দের ভিড়। কোনো নিরাপত্তাকর্মী না থাকায় কেউ কেউ ফটক টপকে ভেতরে প্রবেশ করছেন। এ ছাড়া কারাগারের ক্যানটিনের সবকিছু লুট করে সেখানে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
কারাগারের মূল ফটকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কারারক্ষী নাজিমুর রহমান বলেন, হ্যামার দিয়ে যখন মূল ফটকে সজোরে ধাক্কা দেয়, তখন ফটকের ছিটকিনি খুলে যায়। আমরা বস্তা ও টেবিল দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। আমাদের কেউ সহযোগিতা করেনি। আমরা যে অস্ত্র নিয়ে প্রতিরোধ করব, সেই পরিবেশ ছিল না। আমাদের প্রতিটি বন্দি লকারে ছিল। হামলাকারীরা তালা ভেঙে বন্দিদের নিয়ে গেছে।
এদিকে নরসিংদী কারাগার থেকে ৮২৬ বন্দির পালানোর ঘটনায় জেল সুপার আবুল কালাম আজাদ ও জেলার কামরুল ইসলামকে বরখাস্ত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ।
মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নরসিংদী জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম।
নরসিংদী জেলা প্রশাসক বলেন, কারাগারের জেল সুপার ও জেলারকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ। যারা জেলখানা থেকে বেরিয়ে গেছে, তারা যেন দ্রুত আত্মসমর্পণ করে, সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলার প্রতিটি গ্রাম ও ইউনিয়নে ব্যাপকভাবে মাইকিং করে প্রচার চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া গণবিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে নরসিংদী জেলা কারাগার পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। পরিদর্শন শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নরসিংদীর এই কারাগার ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগও করা হয়েছে। অস্ত্রাগার লুট করেছে, যেসব জঙ্গি আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল। আমাদের পুলিশ বাহিনী যাদের অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ফলো করে আটক করেছিল। এদের মধ্যে ৯ জন ছিল নরসিংদী কারাগারে। তাদের দুষ্কৃতকারীরা মুক্ত করে নিয়ে গেছে। তাহলে মূল উদ্দেশ্যটা কী, আপনারা বুঝতে পারছেন।
উল্লেখ্য, গত সোমবার ১০ জন ও মঙ্গলবার ১২৬ জনসহ মোট ১৩৬ জন পলায়নরত কারাবন্দি সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর মাধ্যমে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাকিবুল হকের আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন।
মন্তব্য করুন