‘গুলিসহ ভাইকে কবর দেওয়া হয়েছে’
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় নিহত হয়েছেন কুষ্টিয়ার কুমারখালীর উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কসবা গ্রামের মুদি দোকানি মো. ইজারুল হকের ছেলে মো. আলমগীর শেখ।
বৃহস্পতিবার (২৫) জুলাই দুপুরে সরেজমিন আলমগীরের বাড়িতে যেয়ে দেখা যায়, তার বাড়ি মাতম চলছে। কাঁদতে কাঁদতে মূর্ছা যাচ্ছেন তার মা আলেয়া খাতুন। বৃদ্ধ বাবা ইজারুল হক কাঁদতে পারছেন না, তাকিয়ে আছেন অপলক। স্ত্রী রিমা খাতুনের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে চারিদিক।
এ সময় আলমগীরের ছোট ভাই আজাদ হক বলেন, ‘বন্ধুরা ভাইকে হাসপাতালে নিলেও ডাক্তার ছিল না। চিকিৎসা পায়নি। শরীর থেকে গুলিও বের করা হয়নি। গুলিসহ ভাইকে কবর দেওয়া হয়েছে।’
কাঁদতে কাঁদতে মা আলেয়া খাতুন বলেন, ‘আমার ছেলে খুব ভালো, ধার্মিক ছিল। গুলি খেয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা লোকদের পানি খাওয়াতে গিয়েছিল। তখন হেলিকপ্টার থেকে পুলিশ তিনটি গুলি করে ছেলেকে মেরে ফেলেছে। আমার বেটা তো আর ফিরে আসবে না। এখন ওর বউ -ছোয়ালপাওয়াল দেখবি কিডা? বাড়িছাড়া জাগা-জমি কিচ্ছু নাই। ক্যাম্বা (কীভাবে) চলব? সরকার যদি একটু দেখতে তবেগা বাঁচতাম।’
স্ত্রী রিমা খাতুন বলেন, ‘চাকরির টাকায় সংসার চলতো না। সেজন্য ও (আলমগীর) অবসরে পাঠাও মোটরবাইক চালাতো। এখন তো সব শেষ। শ্বশুর-শ্বাশুড়ি, ছেলে, মেয়ে নিয়ে কি করে খাব?’ কোম্পানি ও সরকারের কাছে সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তিনি।
বাবা ইজারুল হক বলেন, ‘আমি বুড়ো মানুষ। বড় ছেলেই ছিল সকলের ভরসা। ঘরের সঙ্গে ছোট দোকানে তেমন বেচাকেনা হয় না। খুব দুশ্চিন্তায় আছি পরিবার নিয়ে।’
জানা গেছে, প্রায় ২০ বছর আগে ঢাকায় পাড়ি জমান মো. আলমগীর শেখ। গত ৮ বছর ধরে ঢাকার রামপুরা এলাকায় হেলথকেয়ার ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেডের একটি গাড়ির চালক ছিলেন। এতে যা বেতন পেতেন, তা দিয়ে তার ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা, বাসা ভাড়াসহ সংসার চলতো না। সেজন্য তিনি অবসরে অ্যাপসভিত্তিক পাঠাও মোটরবাইক চালাতেন। তবে ১৯ জুলাই বিকেলে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে রামপুরা বিটিভি ভবন এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তিনি। ময়নাতদন্ত ছাড়াই ২০ জুলাই গভীর রাতে অ্যাম্বুলেন্সে গ্রামের বাড়িতে মরদেহ পৌঁছে দেয় কোম্পানির লোকজন। আর ২১ জুলাই সকালে গ্রামের বাড়িতে সামাজিক কবরস্থানে মরদেহটি দাফন করা হয়।
স্বজনদের দাবি, ১৯ জুলাই জুমার নামাজ শেষে স্ত্রীকে রান্নার কথা বলে রামপুরা এলাকায় নিজ কর্মস্থলের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন আলমগীর। সেদিন হেলিকপ্টার থেকে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে কিছু আন্দোলনকারী আহত হয়ে সড়কে লুটিয়ে পড়েন। তখন তিনি পানির বোতল নিয়ে আহতদের পানি পান করাতে যান। সে সময় হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া তিনটি গুলি লাগে তার শরীরে। এতে আহত হন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত স্বজনদের খোঁজখবর নেওয়াসহ তালিকা করা হচ্ছে। সরকারিভাবে কোনো নির্দেশনা আসলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মন্তব্য করুন