আমার স্বামীকে কেন গুলি করে মারা হলো, বিচার চাইব কার কাছে?
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতার সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন আবদুল গণি। তিনি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। তাকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন তার স্ত্রী লাকি আক্তার, ছেলে এইচএসসি পরীক্ষার্থী আলামিন শেখ ও ছয় বছর বয়সী মেয়ে জান্নাত।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের নতুন বাজার এলাকায় তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে শোকের মাতম চলছে।
কাঁদতে কাঁদতে আবদুল গণির স্ত্রী লাকি আক্তার আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘আমার স্বামী কোন রাজনীতি করতেন না। তিনি তার অফিসের কাজে বাইরে বের হয়েছিলেন। কেন তাকে গুলি করে মারা হলো? কার কাছে স্বামী হত্যার বিচার চাইব? আমার দুই ছেলেমেয়েকে এখন কে দেখবে?’
আহাজারি করতে করতে লাকি আক্তার বলেন, ‘শুক্রবার সকাল ৯ টার দিকে আমার স্বামী ফোন করে জানতে চান, বাড়ির সবাই নাশতা করেছে কি না। তিনি (আবদুল গণি) বললেন, ‘জরুরি ফোন পেয়ে অফিসে যাচ্ছি। ঢাকার পরিস্থিতি ভালো না। আমার জন্য দোয়া কোরো। জান্নাতকে দেখে রেখো। বলেই ফোন রেখে দেন। এরপর বেলা ১১টার দিকে ঢাকা থেকে এক স্বজন ফোন করে জানান যে গুলিবিদ্ধ হয়ে আমার স্বামী মারা গেছেন।’
আবদুল গণির বড় ভাই আবদুল রাজ্জাক শেখ বলেন, ‘আমার ভাই কোনও রাজনীতি করতো না। ওর দুটি সন্তান এতিম হয়েছে। পরিবার চলার মতো আয়ের কোনও পথ নেই। সরকারের কাছে দাবি, আবদুল গণির ছেলে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। অন্তত তাকে কোনও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিলে পরিবারটি বাঁচবে।’
জানা গেছে, গত ১৯ জুলাই গুলশান-২ এর সিক্সসিজন নামের আবাসিক হোটেলের কারিগরি বিভাগের আবদুল গণিকে অফিস থেকে ফোন দিয়ে ডাকা হয়। ওই দিন সকালে ঢাকার উত্তর বাড্ডার গুপীপাড়ার বাসা থেকে কর্মস্থলের দিকে রওনা হন আবদুল গণি। শাহজাদপুর বাঁশতলা এলাকায় সংঘর্ষ চলাকালে তার মাথার ডান পাশে গুলি লেগে আরেক পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিনি মারা যান। রোববার (২১ জুলাই) বিকেলে তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি খানখানাপুর আনা হয়। ওই দিন রাত সাড়ে আটটার দিকে স্থানীয় কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
মন্তব্য করুন