বাগেরহাটে মুছে দেওয়া হচ্ছে গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখন
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাগেরহাটে শিক্ষার্থীদের আঁকা গ্রাফিতি, দেয়াল চিত্র ও লিখন মুছে দেওয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুরে শহরের বাগেরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দেয়ালে লেখা ও আঁকা গ্রাফিতি মুছে ফেলতে দেখা যায় ৮-১০ জনকে। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকও।
স্থানীয়রা জানান, দুপুর ১২টার দিকে বিদ্যালয়টির দেয়ালে লেখা ও আঁকা গ্রাফিতি মুছতে শুরু করেন কয়েকজন। সেখানে পুরো দেয়ালে রং করা হচ্ছে না। তুলি-ব্রাশের সাহায্যে কেবল যেসব স্থানে লেখা ও আঁকা ছিল শুধু রং দিয়ে তা ঢেকে দেওয়া হচ্ছে। এই কাজে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা নিজেদের বাগেরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের কর্মচারী পরিচয় দিয়ে বলেন, প্রতিষ্ঠান প্রধানের নির্দেশে এগুলো মুছে ফেলা হচ্ছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংগঠিত হত্যাকাণ্ড ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদসহ বিভিন্ন দাবিতে শনিবার (২৭ জুলাই) দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতি অঙ্কন কর্মসূচির ঘোষণা দেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। এর প্রেক্ষিতে রোববার থেকে এই বিদ্যালয়ের দেয়ালসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতি অঙ্কন করেন শিক্ষার্থীরা।
দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘ছাত্র হত্যার’ প্রতিবাদে ও আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে বাগেরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী নিজ বিদ্যালয়ের দেয়ালে নানা স্লোগান লিখে প্রতিবাদ জানান। ‘বুকের ভেতর দারুণ জড়, বুক পেতেছি গুলি কর’, ‘দমায় রাখতে পারেনি, পারবে না’, ‘বিদ্যালাভে লোকসান, নাহি অর্থ নাহি মান, হীরক রাজা বুদ্ধিমান’, ‘রক্তের দাম চাই’সহ ১৯ জুলাইয়ের লেখার পাশাপাশি গল ২-৩ দিনে আঁকা গ্রাফিতিগুলোও মুছে ফেলতে দেখা যায়।
ওই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করা কয়েকজন পথচারী বলেন, মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে ৮-১০ জন তরুণী বিদ্যালয়ের দেয়ালে ‘আমার ভাই মরল কেন?’, ‘দিনে আটক, রাতে নাটক’, ‘গুলি করে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না’সহ বিভিন্ন স্লোগানের পাশাপাশি দেওয়াল চিত্র আঁকতে শুরু করেন। এর কিছু সময়ের মাঝে সাদা পোশাকে আসা পুলিশের এক সদস্য সেখানে দেয়ালের ছবি তোলেন। সে সময় কয়েক জন তরুণী পাশে লুকিয়ে যান। একটু অপেক্ষার পর মোটরসাইকেলে আসা পুলিশের আরেক সদস্য তাকে নিয়ে যান। পরে ওই তরুণীরা আবারও সেখানে এসে কিছু সময় আঁকা আঁকি করে। এরই মাঝে বেলা ১১টার দিকে পুলিশের একটি গাড়ি সেখানে আসে। তবে তারই আগে দেয়াল চিত্র আঁকা ও লেখা তরুণীরা ওই এলাকা ত্যাগ করেন।
জানতে চাইলে বাগেরহাট সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইদুর রহমান বলেন, বিষয়েটি তার জানা নেই।
দেয়ালে লেখা-আঁকা মুছতে থাকাদের একজন নিজেকে বালিকা বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী পরিচয় দেয়া মো. তহিদুল ইসলাম। দেওয়াল লিখন ও গ্রাফিতি মোছার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তো আমার প্রতিষ্ঠান প্রধান ভালো জানে। তিনি আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন ওয়ালের লেখনী মুছতে।
বাগেরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমতা রানী বিশ্বাস বলেন, দেয়ালে কোনো কিছু লেখাই নিষেধ। অনেক আগে থেকেই বারণ।’ একুশে ফেব্রুয়ারিসহ বিভিন্ন সময়ে সেখানকার দেয়ালে যে লেখা হয়-এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘এখানে কেবল রাস্তায় আল্পনা হয়, দেয়ালে লেখা হয় না। কেউ লিখলেও আমাদের অজানা।
‘দেয়াল লেখা নিষেধ’ এমন কোনো লিখিত নোটিশ আছে কি না জানতে চাইলে মমতা রানী বিশ্বাস বলেন, না, মুখে মুখে বলে দিছি। এর আগে ওই ভাবে কোনো দিন তদারকি করিনি। দেয়ালে লেখা থাকলে তা অপরিষ্কার দেখায়, এই জন্য মুছে দেওয়া হচ্ছে।
মন্তব্য করুন