• ঢাকা মঙ্গলবার, ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১৭ আশ্বিন ১৪৩১
logo

টাঙ্গাইলে একদিনে যা ঘটেছে 

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ০৫ আগস্ট ২০২৪, ১৫:২৯
টাঙ্গাইলে একদিনে যা ঘটেছে 
ছবি : সংগৃহীত

টাঙ্গাইলে অসহযোগ আন্দোলনে দিনব্যাপী হামলা, ভাঙচুর, গুলি, অগ্নিসংযোগ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধসহ দুই শতাধিক লোকজন আহত হয়। ওইদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে শহরের বিবেকানন্দ স্কুল অ্যান্ড কলেজের সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এ সময় দুজন গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়।

এ ঘটনায় আন্দোলনকারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বিদ্যালয়ের ভেতরে রাখা সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলামের ব্যক্তিগত প্রাইভেটকারে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এরপর তাদের মিছিলটি টাঙ্গাইল পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছালে সেখানেও আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়। পরে আন্দোলনকারীরা দুপুরের দিকে টাঙ্গাইল পৌরসভার পূর্ব আদালতপাড়ায় টাঙ্গাইল-২ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরের বাসায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়াও তাঁর মালিকানাধীন ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের দি টাঙ্গাইল ফিলিং স্টেশন ও রেস্তোরাঁয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

আন্দোলনকারীরা একত্রিত হয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভা কার্যাললে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকার তুহিন রোডের পাশে অবস্থিত টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল ইসলাম আলমগীরের বাসায় ভাঙচুর করা হয়। সাবেক সংসদ্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলামের বাসায় ভাঙচুর করা হয়। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুকের বাস ভবনের দিকে আন্দোলনকারীরা এগিয়ে গেলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এদিকে আন্দোলনকারীদের তাণ্ডবে স্থবির হয়ে পড়ে জনজীবন। উত্তাপ সৃষ্টি হয় পুরো শহরে। সকাল ও দুপুরে পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করলেও বিকালে অ্যাকশনে যায়। সারাদিন তাণ্ডবের পর আন্দোলনকারীরা টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সামনে নজরুল সরণি সড়ক, নিরালা মোড় ও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। আন্দোলনকারীরা অবরোধ না ছাড়ায় বিকাল ৪টার দিকে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছুড়েছে। আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এরপর বিকাল ৫টার দিকে পুরো শহর শান্ত হয়। সারাদিনের বিচ্ছিন্ন ঘটনায় আন্দোলনকারী ও পুলিশসহ শতাধিক লোকজন আহত হন।

মির্জাপুর

মির্জাপুর উপজেলার গোড়াইতে আন্দোলনকারীরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এসময় গোড়াই শিল্প এলাকায় তাৎক্ষণিকভাবে কারখানা বন্ধ ঘোষণা হয়। হাজার হাজার শ্রমিক আন্দোলনে অংশ নেয়। তারা বেশ কয়েকটি শিল্প কারাখানা ভাঙচুর, স্থানীয় আওয়ামী লীগ অফিসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায়। উপজেলার গোড়াই হাইওয়ে থানায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। পুলিশের চারটি গাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ওসিসহ সাত জন পুলিশ সদস্য আহত হন। অন্তত ৪০ জন আন্দোলনকারী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

গোড়াই হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আদিল মাহমুদ বলেন, আন্দোলনকারীরা হঠাৎ করে গোড়াই থানায় হামলা চালায়। তারা ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারগ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়। পরে থানা পুলিশের সহযোগিতায় পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে মির্জাপুর থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এতে তিনিসহ পুলিশের সাতজন সদস্য আহত হন।

ঘাটাইল

দুপুরের দিকে ঘাটাইল উপজেলায় পুলিশ বক্সে আগুন দেয় আন্দোলনকারীরা। এসময় তারা উপজেলা আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এর আগে ছাত্র লীগ ও যুবলীগের সাথে সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ৭ জন আহত হয়।

কালিহাতী

কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিসে ভাঙচুর করে আন্দোলনকারীরা। এ সময় তাদের ধাওয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদারসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।

সখিপুর

সখীপুর উপজেলায় পৌর শহর দখলে নেয় আন্দোলনকারীরা। আগেরদিন হামলার শিকার হওয়ায় তারা আক্রমনাত্মক হয়েই মাঠে নামে। তারা টায়ারে আগুন দিয়ে সড়ক অবরোধ করে। সেখানে পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করে।

মধুপুর

বিকাল ৩টার দিকে মধুপুরে আওয়ামী লীগ মিছিল সহকারে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। পরে আন্দোলনকারীরা জড়ো হয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেয়। শুরু হয় সংঘর্ষ। এ ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহত হন। পরে তারা পৌরসভা কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায়। পৌরসভার চারটি গাড়ি, আওয়ামী লীগ কার্যালয়, ট্রাক মালিক সমিতির কার্যালয়, বণিক সমিতির কার্যালয়, সিঙ্গার শোরুম, কাজী ডিজিটাল হসপিটাল, সিটি হাসপাতাল, মেটারনিটি ডায়াগনিক সেন্টার, রাসেল খান টাওয়ারসহ অন্তত ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। ১৬টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়।

ঘটনার বিষয়ে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শরফুদ্দীন বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়েছিল। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’

মন্তব্য করুন

Radhuni
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
আমরা সরকারকে দুটি রোড ম্যাপ দিয়েছি: জামায়াত আমির
কালিহাতীতে যুবককে কুপিয়ে হত্যা 
সখীপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ গেল গৃহবধূর 
সখীপু‌রে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ গেল ব্যাংক কর্মকর্তা‌র