মোহাম্মদপুরে নানকের বাসায় অভিযান
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের বাসায় অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বুধবার (২১ আগস্ট) রাতে নানকের মোহাম্মদপুরের বাসায় এ অভিযান প্রথম শুরু করে শিক্ষার্থীরা। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাসাটির নিয়ন্ত্রণ নেন।
স্থানীয়রা জানান, বুধবার সন্ধ্যার পর নানকের উপস্থিতির সন্দেহে বাসাটিতে নজরদারি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তবে কোনো রকম লুটপাট যেন না হয়, সেজন্য সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
শিক্ষার্থীরা জানান, নানকের এই বাসায় অস্ত্র থাকতে পারে। তিনি বাসাটিতে লুকিয়ে থাকতে পারেন, এই সন্দেহে তারা তল্লাশি চালান। তবে বাসার ভেতরে কোনো অস্ত্র পাওয়া যায়নি। বাসায় অনেকগুলো চালের বস্তা, কম্বলের বস্তা পান শিক্ষার্থীরা। নানকের বাসায় এ সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ছবি দেখতে পান শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে, বিভিন্ন আলেমদের ছবি টাঙানো দেখেন তারা।
শিক্ষার্থীরা উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, সন্ধ্যার পর পর তল্লাশি শুরু হয়। আজ সকালে ও দুপুরে কয়েকটি গাড়িতে বস্তা থেকে শুরু করে অনেক কিছু নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা সন্দেহ করি, কিছু থাকতে পারে। সে জন্য সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় আমরা তল্লাশি শুরু করি।
শিক্ষার্থীরা বলেন, তল্লাশি করে আগ্নেয়াস্ত্র বা টাকা-পয়সা ছিল কি না আমরা নিশ্চিত না। যেহেতু সকালে ও দুপুরে গাড়ি ভরে বস্তা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা অনেক বাড়ির দলিল পেয়েছি, যেগুলো অন্যের নামে। চাকরির ক্ষেত্রে তিনি এবং আওয়ামী লীগের লোকজন যে সুপারিশ করতেন, সেই প্রমাণ আমরা তার বাড়ি থেকে পেয়েছি। তার স্বাক্ষরের ভিত্তিতে অনেক চাকরি পরীক্ষার্থীর রেজাল্ট বৃদ্ধি করা হয়েছে, সেই প্রমাণ আমরা পেয়েছি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের টাকা-পয়সা কোথায় থেকে আসতো, কোথায় যেত এবং কার কাছে কত টাকা যেত সেই লিস্ট ভেতরে পাওয়া গেছে।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, বাসার ভেতরে টিসিবির (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) অনেক মালামাল পাওয়া গেছে, যেমন—চাল, ডাল, তেল। দুস্থদের ভেতরে যে কম্বল বিতরণ করা হয়, অনেক সংখ্যক সেই কম্বল পাওয়া গেছে। ত্রাণসামগ্রী হিসেবে দেওয়া হয় যে বিস্কিট সেগুলোও অনেক পরিমাণে পাওয়া গেছে, যেগুলোর মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। ব্র্যান্ডের ঘড়ির খালি বক্স পাওয়া গেছে। দু-একটি ঘড়ি আমরা যেগুলো দেখেছি, প্রতিটিতে নৌকা প্রতীক ও আওয়ামী লীগের পতাকা এবং ভেতরে জয় বাংলা লেখা ছিল। অর্ডার দিয়ে বানিয়ে আনা হয়েছিল। প্রতিটি ঘড়ি মেয়েদের। প্রতিটি কাগজ আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখেছি, লকারে কিছু পাওয়া যায়নি। মাদরাসা শিক্ষার্থীদের কিছু ছবি পাওয়া গেছে বাসার ভেতরে।
ভবনের নিরাপত্তাকর্মী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ধানমন্ডির একটি বাসায় থাকতেন আওয়ামী লীগ নেতা নানক। মাঝে মাঝে মোহাম্মদপুরের এই অ্যাপার্টমেন্টে আসতেন। তবে গত ৫ আগস্টের পরে তিনি আর আসেননি।’
গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগের যত নেতা
গত ১৪ আগস্ট রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পরেরদিন ১৫ আগস্ট রাতে রাজধানীর নিকুঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে।
১৯ আগস্ট রাতে রাজধানীর বারিধারা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দীপু মনিকে।
একই রাতে আটক করা হয় আওয়ামী লীগ সরকারে সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আরিফ খান জয়কে।
২০ আগস্ট রাতে সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলামকে রাজধানীর বনশ্রী থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনকে।
সর্বশেষ ২১ আগস্ট রাতে কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদিকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে র্যাব।
মন্তব্য করুন