‘মাথায় গুলি লেগে আমার ছেলের মগজ বের হয়ে গেছে’
নিম্নবিত্ত পরিবারের একমাত্র ছেলে মো. মেহেদী। বাবা স্থানীয় একটি কারখানার তৃতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতেন। মেহেদীকে ঘিরেই সব স্বপ্ন ছিল বাবা- মায়ের। ছেলেকে একজন ইঞ্জিনিয়ার বানাবেন সেই আশায় পরিবারের অসচ্ছলতার মধ্যেও স্থানীয় একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি করেন। অসহায় বাবা-মার স্বপ্ন ছিল, একসময় ছেলে বড় ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বাবা-মার নাম উজ্জ্বল করবে। তবে সেই স্বপ্ন গুলিতে শেষ হয়ে গেছে। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা বাবা-মা। ছেলের কথা মনে পড়লেই বুকফাটা চাপা কান্না এবং চোখের পানিতে কাতর হয়ে পড়েন বাবা-মা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত মো. মেহেদী নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ঝাউচর গ্রামের মো. ছানাউল্লাহর ছেলে। তার পৈতৃক বাড়ি মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থানার বড়- রায়পাড়া। তবে তিনি তার পরিবারসহ জন্মের পর থেকে নানির বাড়িতেই থাকতেন।
নিহত মো. মেহেদীর বাবা ছানাউল্লাহ বলেন, আমার ছেলে খুবই মেধাবী ও শান্ত স্বভাবের ছিল। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে নিজেই সারাদিন টিউশনি করে পড়ালেখার খরচ আর সংসারের খরচ চালাত। আমার ছেলের স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হবে। ২০ জুলাই সন্ধ্যার পরও সে বাড়ি না আসায় আমি তার মোবাইলে ফোন দিই। কয়েকবার রিং হওয়ার পর এক ছেলে ধরে জানায়, আমাদের মেহেদী আর নেই। নারায়ণগঞ্জের চিটাগাংরোডে পুলিশের গুলিতে সে নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি রাস্তায় পড়ে আছে আমার একমাত্র ছেলের নিথর দেহ। মাথায় গুলি লাগায় মজগগুলো সব বের হয়ে গেছে। পলিথিনে ভরে ছেলের নিথর দেহটিকে অনেক কষ্টে বাসায় নিয়ে আসি।
এদিকে মেহেদীর মা শিল্পী বেগমের কান্না এখনো থামছেই না। ছেলের কলেজের আইডি কার্ড হাতে নিয়ে কান্নাকণ্ঠে বলেন, আমার স্বামী একটি ছোট চাকরি করেন। অনেক স্বপ্ন ছিল, একমাত্র ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হবে। আমার ছেলেটা দেশের জন্য আন্দোলন করতে গিয়েছিল আমাদের না জানিয়ে। সবার সঙ্গে আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে আমার বাবার মাথার মগজগুলো বের হয়ে গেছে। কেন মারল এমন করে আমার ছেলেকে? কী দোষ করেছিল। আমি আমার ছেলে হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
মন্তব্য করুন