• ঢাকা বুধবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১
logo

সন্তানের মুখ দেখতে পাননি গুলিবিদ্ধ সাজু, ফিরলেন লাশ হয়ে

আরটিভি নিউজ

  ২৫ আগস্ট ২০২৪, ১৩:৫৬
সন্তানের মুখ দেখতে পাননি গুলিবিদ্ধ সাজু, ফিরলেন লাশ হয়ে
ছবি : সংগৃহীত

গেল ২৪ জুলাই, সন্তান সম্ভবা স্ত্রীকে রেখে জীবিকার তাগিদে গাজীপুরে যান পঞ্চগড়ের সাজু মিয়া (২৬)। একই মাসের ২৭ জুলাই তার স্ত্রী এক ফুটফুটে ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। সেসময় সাজু তার সন্তানের নাম রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম শহীদের নামানুসারে আবু সাঈদ।

ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস মাত্র ১৬ দিনের মাথায় সাজু মিয়া নিজেও গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করবেন তা কেউ ভাবতেও পারেননি। সন্তানের মুখ না দেখেই তাকে চলে যেতে হয়েছে না ফেরার দেশে। গত ১২ আগস্ট বিকেলে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয় সাজু মিয়াকে।

এর আগে রোববার (১১ আগস্ট) দিবাগত রাতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

পরিবার জানায়, গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা যেদিন পালিয়ে যান সেদিনই সাজু মিয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। তার মৃত্যুতে গ্রামের বাড়িতে বইছে শোকের মাতম। নবজাতক সন্তান নিয়ে দিশেহারা তার স্ত্রী শারমিন আক্তার।

সাজু মিয়ার বাড়ি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের টোকরাভাষা মিরপাড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে। চার ভাই-বোনের মধ্যে সাজু ছিল সবার বড়। তিনি গাজীপুরের একটি টেক্সটাইল মিলে চাকরি করে পরিবার চালাতেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনদের আহাজারিতে সাজু মিয়ার বাড়ির পরিবেশ এখনও ভারি। এখনও বিলাপ করে কান্না করেন তার দুই বোনসহ বাবা-মা। ঘরের ভেতর ১৬ দিন বয়সি ছেলেকে নিয়ে অনবরত চোখের পানি ফেলছেন শারমিন আক্তার। স্বজনদের সমবেদনা যে কারও হৃদয় ছুঁয়ে যাবে।

গণমাধ্যমকর্মীদের দেখে বারবার শারমিন আক্তার বলছিলেন, ‘এই ছোট বাচ্চাকে নিয়ে কোথায় যাবো আমি, আমার ছেলেরে কে মানুষ করবে? আমি বিচার চাই, আমার স্বামীর খুনিদের বিচার চাই।’

শারমিন আক্তার জানান, তার স্বামী সাজু মিয়া ২০১৫ সালে স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর অভাবের সংসারের হাল ধরতে টেক্সটাইল মিলে কাজ শুরু করেন। তিনি ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের গণঅধিকার পরিষদের অঙ্গসংগঠন শ্রমিক অধিকার পরিষদের পঞ্চগড় জেলা কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বেও ছিলেন।

জানা গেছে, শেখ হাসিনা সরকার পতনের দিন সরকারের পদত্যাগের দাবিতে গাজীপুরের মাওনা হতে একটি মিছিল বের হয়েছিল। সেই মিছিলে ছাত্রজনতার সেই ঢলে যোগ দিয়েছিলেন সাজু মিয়া। মাওনা থেকে ছাত্রজনতা মিছিলটি নিয়ে গণভবনের দিকে রওনা হয়। ওই সময় ময়মনসিংহ থেকে ৭টি পিকআপে করে বিজিবি ও কিছু পুলিশ এসে গুলি করতে থাকে। এ সময় পুলিশের গুলি দুই দফা সাজুর পিঠে লাগে, এতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সাজুর বাবা আজহার আলী বলেন, ‘আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। আমার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিল আমার ছেলে। এখন কে এই পরিবার চালাবে। আমার ছেলে তার সন্তানের মুখ দেখার জন্য হাসপাতালে ছটফট করেছিলো, কিন্তু দেখতে পারল না। বার বার বলেছিল, আমি বাঁচবোনা আমার ছেলেকে একবার দেখতে চাই। আমরা তাকে তার ছেলের মুখ দেখাতে পারিনি।’

এসব কথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

সাজুর মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘হাসপাতালে থেকে ফোনে আমার ছেলে আমাকে বলেছিলো, কান্না করিও না মা, তোমার ছেলে শহীদ হবে। তুমি শহীদের মা হবা। শুধু আমার ছেলেকে দেখে রেখো, মানুষের মত মানুষ করো।’

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
সাবেক প্রেমিকের ছুরিকাঘাতে বর্তমান প্রেমিক নিহত
মাটির নিচ থেকে ভেসে আসছিল নবজাতকের কান্না, নাড়িও কাটা হয়নি
আড়াইশ বছরের পুরনো মাছের মেলায় জামাই-শ্বশুরের ভিড়
টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওসির বিরুদ্ধে, প্রত্যাহার ৩ এসআই!