• ঢাকা মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১
logo

কিশোরগঞ্জে সাড়ে ৪ বছরে বজ্রপাতে ৫৭ জনের প্রাণহানি

মো. ফরিদ রায়হান, অষ্টগ্রাম প্রতিনিধি

  ২৮ আগস্ট ২০২৪, ১৯:২৭
কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরে একমাত্র কৃষক ও জেলে শেল্টার সেন্টার। ছবি : আরটিভি

কিশোরগঞ্জের ১৩ উপজেলায় গত সাড়ে ৪ বছরে বজ্রপাতে ৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন আরও ৩৫ জন। নিহতদের মধ্যে রয়েছে নারী-পুরুষ ও শিশু।

প্রতি বছর গ্রীষ্ম মৌসুমে দেশের নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়, পুকুরে মাছ ধরতে গিয়ে, কৃষি জমিতে চাষবাস, হাওরে গরু চড়ানো, নদী বা হাওরে নৌকা চালানো ও বাড়ির আঙিনায় গৃহস্থালি কাজ করার সময় বজ্রপাতে এসব মানুষ মারা গেছে। প্রতি বছর বজ্রপাতে হতাহতের মধ্যে কিশোরগঞ্জ অন্যতম।

সূত্র জানায়, সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত বজ্রপাতের আঘাত তুলনামূলক বেশি হয়। এ সময় সাবধানতা অবলম্বন করলে, নিরাপদে থাকা ও অকালমৃত্যু এড়ানো সম্ভব হবে।

জলবায়ু পরিবর্তন ও ভূমণ্ডলের তাপমাত্রা, বাতাসে সিসার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া, জনজীবনে ধাতব পদার্থের ব্যবহার বৃদ্ধি, মুঠোফোন নেটওয়ার্কের রেডিয়েশন, লোকালয়ে উঁচু গাছের সংখ্যা কমে যাওয়াসহ নানা কারণে বজ্রপাতে মৃত্যু সংখ্যা বাড়ছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় ২০২০ সালে জেলায় বজ্রপাতে মারা গেছেন ১১ জন, ২০২১ সালে ১৬ জন, ২০২২ সালে ১০ জন, ২০২৩ সালে ১৫ জন ও ২০২৪ সালে (২৭ আগস্ট পর্যন্ত) ৫ জন মারা গেছে।

তবে স্থানীয়রা জানান, মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি হবে। চলতি বছর শুধুমাত্র অষ্টগ্রাম ২ জন, ইটনা ২ জন, বাজিতপুরে ১ জন ও করিমগঞ্জ উপজেলায় ২ জনসহ ৭ জনের মৃত্যু হলেও, পুরো জেলার সরকারি তালিকায় রয়েছে ৫ জনের নাম।

বজ্রপাতে মারা যাওয়া ব্যক্তির পরিবারকে সরকারিভাবে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। কিন্তু সরকারি সাহায্যের বিষয়টি প্রচারণার অভাবে অনেক ভুক্তভোগী জানেই না, যেখানে এই সহায়তা বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক পরিবার।

অষ্টগ্রাম দেওঘর ইউনিয়নে বজ্রপাতে নিহত আয়দুল হকের ছেলে ইব্রাহীম মিয়া (২৩) বলেন, প্রথম প্রথম কয়েকজন এসে নাম-ঠিকানা লিখে নিয়ে গেছে। এখনও কিছু পায়নি। কীভাবে সহযোগিতা পাবো আমরা তা জানি না, জানলে দরখাস্ত করতে পারতাম।

নিকলী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র পর্যবেক্ষক আক্তার ফারুক বলেন, বজ্রপাত শুরুর ৪০-৪৫ মিনিট পূর্বে অবগত হওয়া যায়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে সাধারণ মানুষকে অবহিত করা খুবই কষ্টকর। অন্যদিকে, সতর্কবার্তা পেলেও নিরাপদ আশ্রয়ে চলে আসাও কখনও কখনও সম্ভব হয় না। টান্ডার অ্যারেস্টার (বজ্রনিরোধক যন্ত্র) স্থাপনের মাধ্যমে নিহতের সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব।

এই বিষয়ে অষ্টগ্রাম সদর ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ ফাইয়াজ হাসান বাবু বলেন, ঘর-বাড়ি ও গাছ-পালাহীন হাওরে বজ্রপাতে মৃত্যু বাড়ছে। হাওরাঞ্চলে এই প্রথম গত বছর আমি একটি দ্বিতল ‘কৃষক ও জেলে শেল্টার সেন্টার’ নির্মাণ করেছি। এতে কৃষক ও জেলেরা উপকৃত হচ্ছে। আমার ইউনিয়নে আরও ৪-৫টি বজ্রনিরোধদণ্ডসহ শেল্টার সেন্টার স্থাপনে সরকারি সহায়তা কামনা করি।

কিশোরগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান বলেন, বজ্রপাতকালীন সময়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। নিজেদের নিরাপত্তায় সচেতনতার বিকল্প নেই। কিশোরগঞ্জে ২৫টি বজ্রপাত নিরোধদণ্ড স্থাপন করা হয়েছে। আরও কি পরিমাণ বজ্রপাত নিরোধদণ্ড স্থাপন করতে হবে তা সার্ভে করে বলা যাবে।

মন্তব্য করুন

Radhuni
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
৬ অঞ্চলে ৮০ কিমি বেগে ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা
কিশোরগঞ্জের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ঢাকায় গ্রেপ্তার
গোসলের সময় বজ্রপাতে শিশুর মৃত্যু
সিরিয়ায় বিমান হামলায় ১৪ জনের প্রাণহানি