• ঢাকা মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১
logo

আ.লীগের প্রভাব খাটিয়ে বিধিবহির্ভূত ৩ প্রকল্প দেন চেয়ারম্যান

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫২
আ.লীগের প্রভাব খাটিয়ে বিধিবহির্ভূত ৩ প্রকল্প দেন চেয়ারম্যান
ছবি : সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে সাগরদিঘীতে অবস্থিত মদিনাতুল উলুম মাদরাসাটি একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। যার প্রতিষ্ঠাতা এবং পরিচালক সাগরদিঘী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. হাবিবুল্লাহ্। ওই প্রতিষ্ঠানে একই অর্থবছরে চেয়ারম্যান তিনটি সরকারি উন্নয়ন বরাদ্দের প্রকল্প দিয়েছেন। টাকায় যার অঙ্ক ৭ লাখ ২৮ হাজার। উন্নয়ন প্রকল্পের আইনে একই অর্থবছরে একইস্থানে বা প্রতিষ্ঠানে একাধিক প্রকল্প দেওয়ার নিষেধাজ্ঞা থাকলেও আইনের কোনো তোয়াক্কা করেননি চেয়ারম্যান। অবশ্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বলছেন, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রভাব খাটিয়ে প্রকল্প দিয়েছেন চেয়ারম্যান।

জানা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টি আর সাধারণ ১ম পর্যায়) কর্মসূচির উন্নয়ন প্রকল্পে সাগরদিঘী ইউনিয়নে প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়, ‘সাগরদিঘী মদিনাতুল উলুম মাদরাসায় রাস্তা এইবিবি করণ।’ এতে বরাদ্দ দেওয়া হয়, ৩ লাখ টাকা। একই কর্মসূচির টিআর দ্বিতীয় পর্যায়ে এই ইউনিয়নে প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়, ‘সাগরদিঘী (হাতিমারা) মদিনাতুল উলুম মাদরাসার মসজিদের টাইলস্ করণ।’ যার ব্যয় ধরা হয়, ১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা এবং একই কর্মসূচির টিআর তৃতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের নাম, ‘মদিনাতুল উলুম মাদরাসার মাটি ভরাট।’ এই কাজে বরাদ্দ ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা।

সরেজমিনে দেখা যায়, চেয়ারম্যান তিন নামে যে প্রকল্প দিয়েছেন নাম ভিন্ন ভিন্ন হলেও প্রতিষ্ঠান একটাই ‘মদিনাতুল উলূম মাদরাসা।’ মাদরাসাটির মালিক ও পরিচালক চেয়ারম্যান মো. হাবিবুল্লাহ্। এটি কোনো অবৈতনিক মাদরাসা নয়, শিক্ষাক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান।

এলাকাবাসীর দেওয়া তথ্যের বিষয়ে কথা হয় সাগরদিঘী গ্রামের রাসেল ভূঁইয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, তার সন্তান মদিনাতুল উলূম মাদরাসার প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। মাস শেষে বেতন দিতে হয় এক হাজার টাকা। মাসুম মিয়ার সন্তান পড়ে প্লে-তে। তিনি জানান, তার মাসিক বেতন দিতে হয় ৮০০ টাকা। পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া শিক্ষার্থীর বেতন এক হাজার ৫০০ টাকা বলে জানান হিমেল মিয়া নামে অপর অভিভাবক।

এ দিকে একই অর্থবছরে একই প্রতিষ্ঠানে বেআইনিভাবে প্রকল্প দিয়ে ক্ষান্ত হননি চেয়ারম্যান। অভিযোগ উঠেছে, গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারি যে নির্দেশনা রয়েছে, তাও মানা হয়নি। সরকারি নির্দেশনায় কর্মসূচির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যে বলা আছে, গ্রামীণ এলাকায় অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও দরিদ্র জনগণের কর্মসংস্থান সৃষ্টি। গ্রামীণ এলাকায় খাদ্যশস্য সরবরাহ ও জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দারিদ্র্য বিমোচনে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করা। কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায়, ভরাট কাজে ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও তা মাটি কাটার কাজে ব্যবহার করা হয়নি। শ্রমিক দিয়ে নয়, কাজ হয়েছে যন্ত্র দিয়ে।

প্রকল্পের সভাপতি ছিলেন নারী ইউপি সদস্য মনোয়ারা বেগম। তাকে প্রকল্পের কাজের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে উল্টো প্রতিবেদককে বলেন, কাজের হিসেব উপজেলায় লেখা আছে সেখান থেকে নেন। এই কথা বলে মোবাইল ফোনের সংযোগ কেটে দেন তিনি।

একইস্থানে একই অর্থবছরে একাধিক প্রকল্প দেওয়ার বিষয়ে উপজেলার একাধিক চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, এটা অন্যায় অনিয়ম। একইস্থানে এক অর্থবছরে শুধু টিআর নয়, কাবিখা, কাবিটাসহ যেকোনো সরকারি বরাদ্দ দেওয়া আইন পরিপন্থী।

সাগরদিঘী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাবিবুল্লাহকে প্রকল্প দেওয়ার বিষয়ে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। মোবাইলে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি।

এ বিষয়ে ঘাটাইল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রভাব খাটিয়ে একইস্থানে প্রকল্প দেন চেয়ারম্যান। এভাবে প্রকল্প দেওয়া যায় না। বিষয়টি তাকে বারবার বুঝানোর চেষ্টা করলেও তিনি মানতে রাজি হননি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরতিজা হাসান বলেন, একই অর্থবছরে একই প্রতিষ্ঠানে একটার বেশি প্রকল্প দেওয়া বিধিবহির্ভূত। বেনামে ব্যবহার করে প্রকল্প দিয়ে থাকলে তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

Radhuni
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
কিশোরগঞ্জের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ঢাকায় গ্রেপ্তার
নিখোঁজের ৩ দিন পর ডোবায় মিলল কিশোরের মরদেহ 
আমাদের সংগ্রাম আরও বাকি রয়েছে: মামুনুল হক
আইন মেনে রাজস্ব আদায় করা হবে: এনবিআর চেয়ারম্যান