বেঁচে যাওয়া গুলিবিদ্ধ সালেহ আহমদের চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ
ছাত্রজনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট গুলিবিদ্ধ সালেহ আহমদ (৫৫) প্রাণে বেঁচে গেলেও তিনি এখন অন্ধকার দেখছেন। কৃষি কাজ করে সামান্য আয়-রোজগারে মা, স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে কোনো রকমে সংসার চালাতেন তিনি। এখন ওষুধ কিনেই তার জমানো টাকা শেষ। বাকি ওষুধের টাকা কোথায় পাবেন, সংসারইবা কীভাবে চালাবেন—তা নিয়ে দুশ্চিন্তার যেন শেষ নেই তার।
এখন তিনি সিলেটের দক্ষিণ সুরমার নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের পঞ্চম তলার ৫১৫ নম্বর কেবিনে শয্যায় শুয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। তার পেট ব্যান্ডেজ করা।
সালেহ আহমদ চোখের পানি ফেলতে ফেলতে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ওই দিন (৫ আগস্ট) হবিগঞ্জ শহরের আনোয়ারপুর পয়েন্টে দুধ বেচতাম গেছলাম। আতকা শুনি হইহুল্লোড়। দেখার লাগি একটু আগাই যাই। এরপরই গুলি লাগে পেটে। ভাবছিলাম মইরা যামু। আল্লাই বাঁচাই রাখছে।’
সালেহের বাড়ি হবিগঞ্জ সদরের রাজনগর গ্রামে। বাড়িতে দুটি গরু লালনপালন করে দুধ বিক্রি করে সংসার চালাতেন। এ ছাড়া অন্যের জমিতে বর্গা চাষ করেন। চিকিৎসার জন্য এরই মধ্যে দুটি গরু বিক্রি করেছেন। জমানো সঞ্চয়ও শেষ। এখন প্রতিদিন কেবল ওষুধ বাবদই তার খরচ হচ্ছে ১৫ হাজার টাকা।
সালেহর স্ত্রী হালিমা চোখ মুছতে মুছতে বলেন, ‘আমরার সম্বল বলতে আছিল দুইটা গরু। গরুর দুধ বেইচাই সংসার চলত। উপায় না দেইখা এই দুইটা গরু দেড় লাখ টাকায় বেচছি। ঘরে সঞ্চয় আছিল ৫০ হাজার টাকা। সেই টাকাও চিকিৎসাত লাগাইছি। এখন মাইনষের দান-খয়রাতে চিকিৎসা কুনুমতে চলতাছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখনো হাসপাতালে আমরার কাছে পায় ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা। সামনে তো আরও দিন রইয়া গেছে। প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজার টাকার ওষুধ লাগে। এ মুহূর্তে হাতে আছে ৪-৫ হাজার টাকা। ওষুধ ক্যামনে কিনমু, সেই চিন্তায় আছি। চিকিৎসা শেষে বাড়ি গিয়া ক্যামনে সংসার চলব দুশ্চিন্তায় আছি।’
নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মাহাদী জানান, সালেহ আহমদের শারীরিক অবস্থা এখন অনেকটাই ভালো। তার খাদ্যনালি কেটে অস্ত্রোপচার করায় তাকে প্রথম ১০ দিন আইসিইউতে রাখতে হয়। এখন তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত।
মন্তব্য করুন