‘পেটে গুলি থাকায় আমার বাবা কবরে কষ্ট পাইতাছে’
রাজধানীর উত্তরায় গত ১৯ জুলাই জুমার নামাজের পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে নিহত হন মাদরাসা শিক্ষার্থী সাদিকুর রহমান (২১)।
বুধবার (৪ আগস্ট) টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাগরদীঘি ইউনিয়নের ফুলমালীচালা গ্রামে সাদিকুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও শোক কাটেনি পরিবারে।
বিলাপ করতে করতে সাদিকুরের মা শাহানাজ বেগম বলেন, ‘আইজক্যা দেড় মাস অইলো আমার বাবা শহীদ অইছে। পুলিশের করা গুলি পেটে নইয়া (নিয়ে) আমার বাবা কবরে শুইয়া রইছে। আমার মুনে কয়, পেটে গুলি থাকায় আমার বাবা কষ্ট পাইতাছে।’
তিনি বলেন, ‘সাদিকুর কোরআনের হাফেজ ছিলেন। বড় মাওলানা হওয়ার আশায় ঢাকার আব্দুল্লাহপুরে ওই মাদরাসায় ভর্তি হয়েছিলেন ছেলে। তবে সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটে।’
জানা গেছে, সাদিক ঢাকার আব্দুল্লাহপুরে জামিয়া দ্বীনি ইসলামিয়া মাদরাসার কিতাব বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাবা লুৎফর রহমান কুয়েতপ্রবাসী। সাদিকুরকে না পেয়ে ওই দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে তার মাকে নিখোঁজের বিষয়টি জানায় মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতেও খোঁজাখুঁজি করা হয়। পরদিন খবর আসে, আন্দোলনে গিয়ে নিহত হয়েছেন সাদিকুর। পরে ২১ জুলাই সকালে তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে এনে দাফন করা হয়।
সাদিকুরের মামা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘সাদিকুর তার এক বন্ধুর সঙ্গে উত্তরায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেন। বিকেল পাঁচটার দিকে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। ওই সময় পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে সাদিকুর রাস্তায় ঢলে পড়েন। পরে আন্দোলনকারীরা একটি রিকশায় করে আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। স্বজনেরা কেউ না থাকায় মরদেহ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছিল।’
চাচা মোশারফ হোসেন বলেন, ‘গুলি পিঠ ভেদ করে নাভির পাশে আটকে ছিল। পেটে গুলির অস্তিত্ব (বুলেট) সবাই দেখেছে।’
সাগরদীঘি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ বাহার বলেন, ‘পরিবারটিকে সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে পরিবারটিকে বেশ কিছু নগদ অর্থ দেওয়া হয়েছে।’
মামলা করার বিষয়ে সাদিকুরের মা শাহানাজ বেগম বলেন, ‘অনেকেই তাকে কল করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে মামলা করতে বলছেন। তবে মামলা করবেন কি না, এখনো সিদ্ধান্ত নেননি।’
মন্তব্য করুন