জামায়াত নেতা হত্যায় সাবেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা
মেহেরপুরে তারিক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম (৩৫) নামে জামায়াতে ইসলামীর এক নেতাকে হত্যার অভিযোগে সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনসহ ১৯ জনের নামে মামলা দায়ের হয়েছে।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নিহতের ভাই তাওফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মেহেরপুর সিনিয়র চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
নিহত তারিক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মেহেরপুর জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি জেলা জামায়াতের সাবেক আমির আলহাজ ছমির উদ্দীনের বড় ছেলে।
এ মামলায় সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ছাড়াও ২০১৪ সালে মেহেরপুর জেলায় কর্মরত পুলিশ সুপার একেএম নাহিদুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, এএসসি আব্দুল জলিল, ওসি ডিবি বাবুল আক্তার, সদর থানার ওসি রিয়াজুল আলম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোমিন মজুমদার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফরিদ হোসেন, র্যাব-৬ গাংনী ক্যাম্প কমান্ডার ক্যাপ্টেন আশরাফ হোসেনসহ ১৯ জন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত আরও ২০ থেকে ৩০ জন আসামি রয়েছেন। এতে প্রধান আসামি করা হয়েছে তৎকালীন পুলিশ সুপার একেএম নাহিদুল ইসলামকে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি মেহেরপুর শহরের ইসলামী ব্যাংকের প্রধান ফটকের সামনে থেকে তারিক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামকে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের সদস্যরা তৎকালীন এসপি নাহিদুল ইসলামের নির্দেশে অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখে পরিবারের কাছে তার আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেন পুলিশ সুপার নাহিদুল ইসলাম ও সদর থানা পুলিশ। পরে ওইদিন রাত ১১টার দিকে বামনপাড়া শ্মশানঘাটে তারিকের ওপর অমানসিক নির্যাতন ও বুকে-পেটে গুলি করে হত্যা করা হয়। বিষয়টি তারিকের পরিবারকে অবহিত না করে লাশ মর্গে নিয়ে সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন করে হত্যার ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে আসামিরা। পরে সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পরিবারের লোকজন দাবি করলেও তা দেয়নি পুলিশ। আবার দাবি করলে সপরিবারে তাদেরকে খুন করার হুমকি দেয় আসামিরা।
এদিকে নিহতের বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পৃথক আরেকটি মামলা হয়েছে দ্রুত বিচার আইনে। মামলার এজাহারে বাদী তাওফিকুল ইসলাম উল্লেখ করেন, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা, ধারালো অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে বুনো উল্লাস সহকারে জামায়াত নিধনের স্লোগান দিয়ে শহরে মিছিল বের করে। মিছিলটি তারিক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের বাড়ির সামনে দিয়ে অতিক্রমকালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার দোকান মেসার্স তাওহিদ অটোতে হামলা চালায়। সে সময় দোকানের সার্টার ভেঙে নগদ টাকা ও মালামাল লুট করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে দোকানের সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আসামিরা দোকানের দোতলায় অবস্থিত তারিকের বাড়িতেও হামলা চালিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে। কয়েকটি পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে বাড়ির সামনে।
এ ঘটনায় মেহেরপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রসুলকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বাদী তাওফিকুল ইসলাম বলেন, অসহনীয় নির্যাতনের শিকার পরিবারের লোকজন দীর্ঘদিন অসহায় সময় পার করেছেন। ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিচার পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় মামলা করা হয়েছে। আসামিদের যদি দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয়, তাহলে আমাদের মতো আর কোন পরিবারের সন্তান হারাতে হবে না।
এদিকে বাদীপক্ষের আইনজীবী মারুফ আহম্মেদ বিজন বলেন, বিরোধী মত দমনের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতারা রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে নৃশংসভাবে গুলি করে তারিককে হত্যা করেছিল।
তিনি আরও বলেন, বিজ্ঞ আদালত মামলা দুটি গ্রহণ করে এফআইআর হিসেবে নথিভুক্ত করার জন্য সদর থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
আরটিভি/আইএম-টি
মন্তব্য করুন