বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন
একটি বুলেট কেড়ে নিল তানভীরের পরিবারের স্বপ্ন
তানভীর সিদ্দিকি। তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল পরিবারের। কারণ তিনি ছিলেন দরিদ্র পরিবারের বড় ছেলে। মা-বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলে পড়াশোনা শেষ করে ভালো একটা চাকরি করবে। সংসারের দুঃখ ঘুচবে। কিন্তু ঘাতকের নির্মম বুলেট কেড়ে নিয়েছে পরিবারের স্বপ্ন। একদিকে তাকে হারিয়ে শোকে পাগলপ্রায় তার মা-বাবা। অন্যদিকে মনে শঙ্কা, সংসারে সুদিন কি আর কখনো আসবে না?
নিহত তানভীর সিদ্দিকির বাবা বাদশাহ মিয়া। তিনি পান বিক্রি করে সংসার চালান। বাড়ি কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমার ছড়া ইউনিয়নে। পাঁচ জনের সংসারের খরচ জোগাড় করতে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরানোর’ অবস্থা। তারপরও সন্তানদের পড়াশুনার ব্যাপারে অনড় খেটে খাওয়া মানুষটি।
তানভীর নগরীর পাঁচলাইশ আশেকানে আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। চারটি পরীক্ষা দেয়ার পর কোটাবিরোধী আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে আর পরীক্ষা হয়নি। তানভীর যুক্ত হয়ে পড়েন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে। গত ১৮ জুলাই বিকেলে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের দ্বিমুখী আক্রমণে শহীদ হন কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমার ছড়া ইউনিয়নের বাদশাহ মিয়ার বড় ছেলে তানভীর সিদ্দিকি। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আন্দোলনের সহযোদ্ধারা মেডিকেলে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় তার।
তানভীরের বাবা বাদশাহ মিয়া বলেন, ‘তানভীর ১৮ জুলাই দুপুরে আমাকে ফোন দিয়ে জানায়, বৈষম্যের জালে আটকে থাকা শিক্ষার্থীদের মুক্তির জন্য আন্দোলনে আছেন তিনি। বাদশাহ মিয়া তাকে বাসা থেকে বের হতে বারণ করেন। কিন্তু ছেলে আমার কথা রাখলো না। সে বিবেকের তাড়নায় ওইদিন বিকেলে বহদ্দারহাটে শিক্ষার্থীদের সমাবেশে যোগ দেয়। এক পর্যায়ে সরকারের লেলিয়ে দেওয়া সন্ত্রাসী ও পুলিশ শিক্ষার্থীদের সমাবেশে হামলা করে। বেধড়ক মারধরের সঙ্গে বৃষ্টির মতো গুলি করা হয় ছাত্রজনতার ওপর। গুলি এসে লাগে তানভিরের বুকে। মুহূর্তেই তানভীর লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। আন্দোলনের সহযোদ্ধারা তানভীরকে নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে রওয়ানা হন। কিন্তু পথেই মৃত্যু হয় তার।
বাদশাহ মিয়া বলেন, ‘আমি চন্দনাইশে শ্বশুর বাড়িতে একটি কুড়ে ঘরে থাকি। ২০১৩ সালে স্থানীয় প্রভাবশালীরা তার বসতভিটা দখলে নেওয়ার পর শ্বশুর বাড়িতে চলে আসি। পানের বরজে কাজ এবং পান বিক্রি করে কোন মতে চলে সংসার।’ অশ্রুসিক্ত নয়নে বাদশাহ মিয়া বলেন, আমার আশা ছিল, ‘তানভীর বড় হয়ে একটি ভালো চাকরি করবে। সেই স্বপ্নটি শেষ হয়ে গেল।’
আরটিভি/এআর-টি
মন্তব্য করুন