বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ শিক্ষার্থী ও অংশগ্রহণকারীদের সম্মাননা
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনায় দোয়া ও অংশগ্রহণকারীদের সম্মাননা জানিয়েছে সাভারের আশুলিয়ার সাধারণ শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে আশুলিয়ার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে নিরিবিলি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ‘আশুলিয়ার সাধারণ শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী’র ব্যানারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ সাভারের ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাফওয়ান আক্তার সদ্য ও মানিকগঞ্জের রুপসা ওয়াহেদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রফিকুল আলম পরিবারের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়।
সাভারের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী গণবিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, নিটার, মির্জা গোলাম হাফিজ কলেজ, ধামরাই সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। এ সময় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষককেও সম্মাননা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী দেওয়ান ফয়সাল বলেন, ফ্যাসিস্টরা চলে গেছে কিন্তু তাদের দোসররা রয়ে গেছে। তাদের দোসরদেরও এই বাংলার মাটিতে আর জায়গা দেওয়া হবেনা। ছাত্র-জনতা এক হয়ে তাদের প্রতিহত করবে।
আন্দোলনে শহীদ সাভার ক্যান্ট পাবলিক স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাফওয়ান আক্তার সদ্যর বাবা আখতারুজ্জামান লিটন বলেন, যারা নিহত হয়েছেন সকলে যাতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পায় এটা আমার সকলের কাছে দাবি। যারা আহত আছে তাদের ইমার্জেন্সি ভিত্তিতে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে তাদের বিদেশে নিতে হবে। নতুন বাংলাদেশের সফলতা কামনা করি। সকল দিক থেকে বৈষম্যগুলো সংস্কার করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি নির্বাচন করে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
রুপসা ওয়াহেদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রফিক গত ৫ আগস্ট মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তার বাবা রহিজ উদ্দিন বলেন, আমার বেশি কিছু বলার নেই। আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চাই, ফাঁসি চাই। স্বৈরাচার ও খুনীর শেখ হাসিনার যেন বিচার হয়, ফাঁসি হয়।
এ আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধামরাই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস মো. রকিব দেওয়ান রকি। তিনি বলেন, অন্যান্য অনেক দল বিগত ১৭ বছর যাবত অনেক লড়াই সংগ্রাম করেছে কিন্তু আমাদের ঘরে কোন সফলতা আসেনি। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের যে কি বলে ধন্যবাদ জানাবো তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। এই ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করেছে বিধায় আমরা সফলতার মুখ দেখেছি এবং স্বৈরাচার হাসিনা দেশ থেকে বিদায় নিয়েছে।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালে যারা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে কাজ করেছে, মানবতাবিরোধী কাজ করেছে তাদের আপনারা কি বলবেন? তারা কি রাজাকার? তারা যদি অপরাধী হয়ে থাকে তাহলে তাদের বিচার হওয়া উচিত, তাদের ফাঁসি হওয়া উচিত। তাদেরকেও আমরা দেশ থেকে বিতাড়িত করব।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার পরিণতি আপনারা নিজ চোখে দেখেছেন। সে যে পরিমাণ ছাত্র এই বাংলাদেশে হত্যা করেছে। তার বিরুদ্ধে যতগুলো মামলা হয়েছে, তার প্রকৃত বিচার করতে গেলে তার কতবার জন্মগ্রহণ করতে হবে তা আমার জানা নেই। আমরা চাই এই স্বৈরাচারের বিচার হবে। আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মার শান্তির জন্য, যারা রক্ত দিয়েছেন তাদের জন্য অন্তত ২৪ এর রাজাকারদের বিচার হওয়া উচিত।
আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শাকিল আহমেদ। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মাহফুজ ইকবাল, ইসমাইল হাবীব, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী সেলিম রেজাসহ অনেকেই।
বিকেল ৫টায় জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরুর পর শহীদদের সম্মান জানানোর জন্য ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে বক্তব্য রাখেন আগতরা। বক্তব্যের পালা শেষে সম্মাননা স্মারক তুলে দেয়া হয় এবং সব শেষে দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন আয়োজকরা।
আরটিভি/এমকে/এআর
মন্তব্য করুন