সাঁথিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় অজ্ঞাত নারী নিহত
পাবনার সাঁথিয়ায় পাবনা-ঢাকা মহাসড়কের কাশিনাথপুর পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের সামনে দুর্ঘটনায় এক অজ্ঞাত নারী (৬৫) নিহত হয়েছেন। তার মরদেহ সাঁথিয়া থানা হিমাগারে রয়েছে। থানায় ইউডি মামলা হয়েছে।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাধপুর হাইওয়ে থানার এসআই শাহাদত হোসেন।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, গত ১৮ সেপ্টেম্বর বুধবার রাত ১০টার দিকে কাশিনাথপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে হাইওয়ে রাস্তায় দুর্ঘটনায় অজ্ঞাত মহিলা গুরুতর আহত হয়েছেন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বেড়া হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার রাতে তিনি মারা যান।
তিনি আরও বলেন, হাইওয়ে থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে সাঁথিয়া থানা হিমাগারে রেখেছে। মরদেহের পরিচয় জানতে বিভিন্ন চেষ্টা চলছে।
আরটিভি/এমকে-টি
মন্তব্য করুন
আগে থেকেই খোলা ছিল ফারাক্কার সব গেট, বন্যার আশঙ্কা নেই
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহীসহ ফারাক্কার ভাটি এলাকায় আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড। এমনকি ফারাক্কার ১০৯টি গেট আগে থেকেই খোলা ছিল বলে জানানো হয়েছে।
সোমবার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় এসব তথ্য নিশ্চিত করেন রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুর।
তিনি জানান, যে হারে পানি বাড়ছে, এতে আগামি দু-তিন দিনে অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা নেই। এখনও পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচে রয়েছে।
প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুর আরও বলেন, বর্ষার শুরু থেকেই ফারাক্কার গেটগুলো খোলা ছিল। এখন পদ্মায় পানির যে স্তর, গত ১৫ দিন আগে যা ছিল, তার চেয়ে কম। কাজেই বড় ধরনের প্লাবনের কোনো শঙ্কা নেই।
একাধিক বিশেষজ্ঞ জানান, বর্ষা মৌসুমে ফারাক্কা বাঁধের প্রতিটি গেট খোলা থাকে। তবে তার পরিমান ৬ ইঞ্চির মতো। বাঁধ খোলা থাকলেও উজানে আর ভাটি এলাকায় (নদীতে) পানির উচ্চতার তারতম্য থাকে। যখন উজানে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পায় এবং ফিডার ক্যানেলে পানি পরিপূর্ণ হয়, বন্যার অবস্থা তৈরি হয় তখন ফারাক্কার গোটগুলো ৬ ইঞ্চির থেকে বাড়িয়ে পুরোটা খোলা হয়। এতে ভাটিতে বিপদের শঙ্কা বাড়ে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মা নদীতে গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পাংখা পয়েন্টে পানি বেড়েছে ৩ সেন্টিমিটার। পদ্মায় বিপৎসীমা ২২ দশমিক ৫ মিটার। বর্তমানে পানির স্তর রয়েছে ২০ দশমিক ৪৮ মিটার। পদ্মা নদী ছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জে অন্য দুই নদী মহানন্দা ও পুর্নভবায় পানি বৃদ্ধির হার একই।
মহানন্দায় বিপৎসীমা ২০ দশমিক ৫৫ মিটার। বর্তমানে মহানন্দা নদীতে পানির স্তর রয়েছে ১৮ দশমিক ৪৯ মিটার। পুর্নভবায় বিপৎসীমা ২১ দশমিক ৫৫ মিটার। বর্তমানে এই নদীতে পানির স্তর রয়েছে ১৮ দশমিক ৫৫ মিটার।
নারায়ণগঞ্জে যুবদল নেতার মরদেহ উদ্ধার, ছেলে-মেয়েসহ আটক ৭
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার মাসদাইর এলাকা থেকে আনোয়ার হোসেন আনু নামে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সোমবার (২৬ আগস্ট) রাত ৮ টার দিকে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় ঈদগাহের পশ্চিম পাশে হেলেনা সেঞ্চুরি এ্যাপার্টমেন্টের লিফটের ফাঁকা জায়গার নীচতলা থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়।
জানা গেছে, আনোয়ার হোসেন আনু ছেলে-মেয়ে নিয়ে ওই ভবনের নবম তলায় থাকতো। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে, মেয়ে ও শ্বশুর বাড়ির স্বজনসহ ৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ।
পুলিশ ও নিহতের বড় ভাই বোন জানান, আনোয়ার হোসেন আনুর স্ত্রী পরকীয়া প্রেমিকের হাত ধরে চলে গেছে। সেই প্রেমিক, সাবেক স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে সম্পত্তির লোভে তাকে হত্যা করে লিফটের ফাঁকা জায়গায় ফেলে দিয়েছে।
ঘটনাস্থলে যাওয়া এসআই আনোয়ার হোসেন জানান, নিহতের ভাই বোন হত্যাকান্ডের অভিযোগ তুলেছে। এ ঘটনায় ৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে।
নিখোঁজের ৪ দিন পর ২ মাদরাসাছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিখোঁজের চার দিন পর দুই মাদরাসাছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) ভোরে জেলার সদর উপজেলার সাদেকপুর সড়কের পাশে তাদের মরদেহ পাওয়া যায়।
নিখোঁজ দুই ছাত্রীরা হলো- সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের কালিসীমা গ্রামের বিল্লাল মিয়ার মেয়ে নাইমা (১৩) ও সাদেকপুর ইউনিয়নের উত্তর পাড়ার আব্দুল বারেক মিয়ার মেয়ে ময়মুনা (১৫)। তারা দুজন নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের পয়াগ ময়না মহিলা মাদরাসার শিক্ষার্থী ছিল।
জানা গেছে, ওই দুই মাদরাসাছাত্রী শুক্রবার রাতে মাদরাসায় ছিল। এরপর থেকে তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ করা হয়নি। আজ সড়কের পাশে তাদের মরদেহ পাওয়া যায়। কীভাবে তারা নিখোঁজ হলো এ বিষয়ে পরিবার ও মাদরাসা কর্তৃপক্ষ কিছু জানে না বলে জানায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, দুই মাদরাসাছাত্রী চার দিন আগে নিখোঁজ হয়। তাদের মরদেহ ভোরে সড়কের পাশে দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেওয়া হলে গিয়ে উদ্ধার করি। তবে তাদের মৃত্যুর কারণ এখনই বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে বলা যাবে।
উল্টোপথে গাড়ি যেতে না দেওয়ায় ট্রাফিক পুলিশকে মারধর
চট্টগ্রাম নগরের খুলশী থানার ১ নম্বর সড়কে উল্টোপথে গাড়ি চালানোর সময় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল সোহরাব হোসেন বাধা দিলে তাকে মারধর করার ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দুপুর দেড়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
আহত সোহরাব হোসেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ঘটনায় গাড়ির চালক মো. রফিকুল আলমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গাড়িটিও থানায় জব্দ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ডিসি (ট্রাফিক-উত্তর) অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত জয়নুল আবেদীন বলেন, উল্টো দিক থেকে এসে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে কর্তব্যরত কনস্টেবল সোহরাব হোসেন তাকে সংকেত দেন। তখন কিছু বুঝে ওঠার আগেই গাড়িচালক মো. রফিকুল আলম সোহরাবের শার্টের কলার ধরে মুখে ঘুষি ও মারধর করেন। মারধরের ফলে নাকের হাড় ভেঙে অনবরত রক্ত বের হয় ও মুখমণ্ডলে আঘাতপ্রাপ্ত হন।
তিনি বলেন, সোহরাবের পুলিশের ইউনিফর্ম ছিঁড়ে যায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা এগিয়ে আসলে চালক গাড়ি রেখে পালিয়ে যায়। পরে গাড়ির মালিকের সহযোগিতায় চালক মো. রফিকুল আলমকে খুলশী থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় খুলশী থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। গাড়ির মালিক চালককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে।
মালিবাগ ফ্লাইওভারে পুলিশের গাড়িতে আগুন
রাজধানীর মালিবাগে পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) রাত সাড়ে ১১টার দিকে গাড়িটিতে আগুন লাগার সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাকিবুল হাসান বলেন, মালিবাগ ফ্লাইওভারের উপরে পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন লাগার সংবাদ পেয়েছি আমরা। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হঠাৎ করেই পুলিশের গাড়ি জ্বলতে দেখেন তারা। গাড়ির বানেট খোলা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পুলিশের গাড়িতে আগুন লেগেছে। আগুন লাগার ফলে গাড়ির ভেতর এবং সামনের অংশ দাউ দাউ করে জ্বলছে।
ডিপজলের মৃত্যুতে শেখ হাসিনার নামে হত্যা মামলা
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৬১৪ জনের নামে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় হত্যা মামলার অভিযোগ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) সন্ধ্যায় মামলাটি করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ডিপজল সরদারের নানি শেফালী বেগম।
গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মুন্সীগঞ্জ শহরের সুপারমার্কেট চত্বরে কৃষি ব্যাংকের সামনে গুলিতে নিহত হন ডিপজল সরদার। মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) হারুনুর রশিদ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানা সূত্রে জানা যায়, ৩১৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরো তিন শতাধিক অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে একটি হত্যা মামলার অভিযোগ করা হয়েছে। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মহিউদ্দিন, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব, সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আনিছউজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমানসহ ৩১৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে আরো ৩০০ জনকে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ৪ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারকে পদত্যাগের এক দফা দাবিতে সুপারমার্কেট চত্বরে ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলছিল।
সে সময় মুন্সীগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন সাগরের হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ডিপজলকে গুলি করেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করেন। মামলার অন্য আসামিরা তাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর জখম করেন। পরে তার মৃত্যু হয়।
শরীরে বুলেট নিয়ে ৩৯ দিন পর সোহানের মৃত্যু, হয়েছেন আসামি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার শোহান শাহ (২৯)। দীর্ঘ ৩৯ দিন বুকে বুলেট নিয়ে অবশেষে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে শ্রীপুর সদরে আলতাফ হোসেন মহিলা কলেজ রোডে শোহানদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাড়িতে মাতম চলছে। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন শোহানের মা। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন বাবা। শোহানের স্ত্রীর বিলাপ কিছুতেই থামছে না।
শোহানের স্ত্রী শম্পা বেগম বলেন, তাদের বিয়ে হয়েছিল ২০১৭ সালের ১৯ নভেম্বর। এরপর মধ্যে তিন বছর দুজন একসঙ্গে ঢাকায় সংসার পেতেছিলেন। বাকি সময় স্ত্রীকে গ্রামে পরিবারের সঙ্গে রেখে ঢাকায় চাকরি করেছেন শোহান। আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবার। অর্থসংকটের কারণে ও একা ঢাকায় থাকত। অর্থের কারণে দুজন একসঙ্গেও থাকতে পারিনি। গত এক বছর বাড়িতে একটা নতুন ঘর দিচ্ছিল। সে আমাকে বলেছিল, শম্পা, আমি আর তুমি এই ঘরে থাকব।
মঙ্গলবার ঢাকায় সিএমএইচে শোহান শম্পাকে বলেছিলেন, তুমি কেঁদো না। আমার কিছুই হবে না। তবে শোহান আর ফেরেননি। অস্ত্রোপচার করে শরীর থেকে বুলেট বের করা গেলেও রক্ত বন্ধ করা যায়নি। ১৮ ব্যাগ রক্ত দিয়েও বাঁচানো যায়নি শোহানকে। সংসারে অভাব থাকলেও ভালোবাসার কমতি ছিল না। স্বামী ছাড়া কেউ ছিল না আমার। সে সবসময় সব ধরনের পরিস্থিতিতে আমার পাশে থেকেছে। সে বলত, চিন্তা করো না, আমি তোমার পাশে আছি। আল্লাহ আমাকে একটা সন্তানও দেননি। আমি এখন কীভাবে বাঁচব?
শোহানের বাবা শাহ সেকেন্দার বলেন, আমার ছেলে ছোটবেলা থেকেই স্মার্ট, কর্মঠ আর দায়িত্বশীল। ছোটবেলা থেকেই ইনকাম করে। বিশেষ করে বিয়ের পর একদিনও বসে থাকেনি। চাকরি না থাকলে বাড়িতে এসে রাজমিস্ত্রির কাজও করেছে। আমার পকেটখরচও সে দিত। যেদিন মারা গেল সেদিন সকালেও বিকাশে আমাকে এক হাজার টাকা পাঠিয়ে বলল, এই টাকাটা তুলে চলে আসেন।
ছেলে হারানোর শোকে বিলাপ করতে করতে শোহানের মা সুফিয়া বেগম বলেন, আমার ছেলে আমার মনের কথা বুঝত। কোনো কথা লুকালে ও বুঝে ফেলত। টাকা পাঠিয়ে বলত, মা তুমি আঁচলে গুঁজে রেখো না, যা লাগে কিনে খাও আমি আছি তো। আমার ইনকাম না খেয়ে তোমাদের মরতে দেব না। সুফিয়া বেগম বলেন, এখন এই কথা আমাকে কে বলবে? সবাই আছে শুধু আমার ছেলে নেই।
জানা গেছে, মাগুরার শ্রীপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে প্রায় ১০ বছর আগে সংসারের হাল ধরতে চাকরিতে যান শোহান। সবশেষ ঢাকার রামপুরা এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি। তার বাবা শাহ সেকেন্দার এক দশকের বেশি সময় আগে নিজের ব্যবসা গুটিয়ে বেকার হয়ে পড়েন। তার একমাত্র ছোট ভাই অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। মা-বাবা, স্ত্রী ও স্কুলছাত্র ছোট ভাইয়ের সব খরচের জোগান আসত একজনের বেতন থেকেই। অর্থ সাশ্রয়ের জন্য স্ত্রীকে বাড়িতে মা-বাবার কাছে রেখে ঢাকায় মেসে থেকে চাকরি করছিলেন তিনি। গ্রামের বাড়িতে নতুন ঘর নির্মাণ করা হচ্ছিল। যেখানে স্ত্রীর সঙ্গে সুখের সংসার পাততে চেয়েছিলেন শোহান। তবে তাদের সেই স্বপ্ন আর পূর্ণ হলো না। গত ১৯ জুলাই ঢাকার রামপুরা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন শোহান। এর ৩৯ দিন পর ২৭ আগস্ট ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। গত বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শোহানের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে ওই দিন বিকেলে শ্রীপুর গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ জুলাই শ্রীপুর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি মামলা করেন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবদুল খালেক। সেখানে আসামি হিসেবে ৯৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাতনামা আসামি দেখানো হয় ১৫০ থেকে ২০০ জনকে। মামলার এজাহারে ১৮ নম্বর আসামি হিসেবে নাম রয়েছে শাহ সেকেন্দারের (এজাহারে সেকেন্দার শাহ লেখা হয়েছে) ছেলে শোহানের। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ওই দিন (২৪ জুলাই) সকাল ৬টার দিকে শ্রীপুরের আলতাফ হোসেন মহিলা কলেজ মাঠে জড়ো হয়ে ককটেল বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির করছিলেন আসামিরা।
এ বিষয়ে শাহ সেকেন্দার বলেন, আমার ধারণা, ওর গুলি লেগেছে, এটা জেনেই এলাকার লোকজন ও পুলিশ ষড়যন্ত্র করে মামলায় তাকে আসামি করেছে। আমার ছেলেকে গুলি করা থেকে শুরু করে চিকিৎসায় বাধা দেওয়া, মিথ্যা মামলা দেওয়া সব অপরাধের ন্যায়বিচার চাই আমি।