রংপুরে আকস্মিক বন্যা, দিশেহারা পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ
ভারত থেকে নেমে আসা ঢল আর কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে বেড়েছে রংপুর অঞ্চলের নদ-নদীর পানি। এতে দেখা দিয়েছে আকস্মিক বন্যা। রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও গাইবান্ধা জেলার নদ-নদীর কূলঘেঁষা চর ও চরদ্বীপসহ লোকালয়ের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। রাস্তাঘাট ডুবে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অনেক এলাকা। পানি বেড়ে যাওয়ায় ফুলে-ফেঁপে উঠেছে তিস্তা, ঘাঘট, যমুনেশ্বরী, করতোয়া, ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রসহ অসংখ্য নদ-নদী। পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলোও ঝুঁকিতে পড়েছে। এ ছাড়া ভাঙন-আতঙ্কে দিন পার করছেন নদীপাড়ের হাজারও মানুষ। এ নিয়ে অষ্টম বারের মতো বন্যার কবলে তিস্তাপাড়ের মানুষ। প্রভাব পড়েছে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি রেলপথেও।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে রংপুরে তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ২৯ দশমিক ৫৮ সেন্টিমিটার। যা (স্বাভাবিক ২৯ দশমিক ৩১ সেন্টিমিটার) বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর আগে একই পয়েন্টে সন্ধ্যা ৬টায় পানির প্রবাহ বিপৎসীমার ৩১ এবং বিকেল ৩টায় বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। এদিন দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ডালিয়া পয়েন্টে সন্ধ্যা ৬টায় পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৯৫ সেন্টিমিটার। যা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার) বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে হয়। বিকেল ৩টায় একই পয়েন্টে পানির প্রবাহ বিপৎসীমার ৮, দুপুর ১২টায় বিপৎসীমার ৩, সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার নিচ এবং সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র আরও জানিয়েছে, গত ৮ ঘণ্টায় (সন্ধ্যা ৬টার আগ পর্যন্ত) উজানে ও দেশের অভ্যন্তরে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি। রংপুর বিভাগের তিস্তা নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে, দুধকুমার নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে, অপরদিকে ধরলা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিস্তা নদীর পানি সমতল রংপুর জেলার কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, অপরদিকে ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তা নদীবেষ্টিত গংগাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী, কোলকোন্দ, গজঘণ্টা, আলমবিদির, নোহালী, কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া, মধুপুর, হারাগাছ, ঢুসমারা, শহীদবাগের গান্নার চর, পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ও পাওটানার প্রায় ৫০টি গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার বিভিন্ন জায়গায় গ্রামীণ রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। বন্যার আতঙ্কে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের মানুষের নির্ঘুম রাত কেটেছে। এমন আকস্মিক বন্যায় চরম দুর্ভোগে পড়ছে বানভাসিরা। এই নিয়ে অষ্টমবারের মতো বন্যার কবলে পড়ল তিস্তাপাড়ের মানুষ।
তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে রোববার সকাল থেকেই বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ উপজেলায় টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে তিস্তা। পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে উঠতি আমন ধান ও বিভিন্ন সবজিখেত ডুবে আছে বন্যার পানিতে। দীর্ঘ সময় ডুবে থাকলে এসব ফসলের মারাত্মক ক্ষতির শঙ্কা করছেন চাষিরা। একই সঙ্গে বন্যার পানিতে ভেসে গেছে বেশ কিছু পুকুরে মাছ। উপজেলার বালাপাড়া ও টেপামধুপুর ইউনিয়নের হরিচরণ শর্মা, আজমখাঁ, হযরত খাঁ, বিশ্বনাথের চর, চরগনাই, ঢুষমারা, চর রাজিব, গোপিঙ্গা, গদাই, পাঞ্জরভাঙ্গা, তালুক শাহবাজপুরসহ চরাঞ্চলে অস্থায়ীভাবে পানিবন্দি হয়েছে কিছু পরিবার।
উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টি ইউনিয়নের চরাঞ্চল ইতোমধ্যে তিস্তার পানি প্রবেশ করে বন্যা দেখা দিয়েছে। টেপামধুপুর ইউনিয়নের চরগনাই গ্রামে ১০টি বাড়ি তিস্তা নদীতে বিলীন হয়েছে। হারাগাছ, শহীদবাগ, বালাপাড়া ও টেপামধুপুর ইউনিয়নের প্রায় ২৫০ হেক্টর ফসলি জমি তলিয়েছে। শতাধিক পুকুর ও মৎস্য খামারের মাছ ভেসে গেছে।
বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আনসার আলী বলেন, রাতের মধ্যে পানি বেড়েছে। নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের মানুষদের মধ্যে দুর্ভোগ ও ভাঙনের আতঙ্ক রয়েছে। কোথাও কোথাও ধান, বাদাম, শাক-সবজিসহ উঠতি বিভিন্ন ফসল পানিতে ডুবে যাওয়ায় বিপাকে পরেছে মানুষ। এরপরও নদীপাড়ের মানুষজনকে সাবধানে থাকতে বলা হয়েছে। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি, কোথাও কোথাও বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয় কি না।
টেপামধুপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম জানান, চরগনাই গ্রামে নজরুল, সালাম, জলিল, সুজন, আজগর, সাঈদ, কাফি, আনিসুর, সুলতান, ও দুলু মিয়ার বাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। আরও ১১টি পরিবার ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে, যেকোনো সময় সেগুলোও নদীতে তলিয়ে যেতে পারে। এ ছাড়াও উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
রোববার দুপুরে ভাঙনকবলিত এলাকায় কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিদুল হক, জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আহসান হাবীব সরকারসহ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানরা পরিদর্শন করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিদুল হক বলেন, তিস্তা নদী এলাকায় বন্যা ও ভাঙনের বিষয়ে আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছি। কোথাও কোনো সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ভাঙনকবলিত ১০টি পারিবারকে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও ত্রাণ বিভাগ বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে।
গংগাচড়া উপজেলার ইউপি সদস্য মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক দিন থেকে যে বন্যা ও পানির আশঙ্কা করা হয়েছিল তাই হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের খুব বেশি তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। হয়তো এখন আসবে, খোঁজখবর নেবে। আমরা জনপ্রতিনিধি হিসেবে কী করতে পারি, প্রশাসন বরাদ্দ দিলে তখন আমরা বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, দুপুরের দিকে পানি সামান্য কমলেও সন্ধ্যা থেকে তিস্তার পানি আবারও বাড়ছে। তাই চরাঞ্চলবাসীকে সর্তক থাকতে বলা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সবাই এখন যে যার স্থানে দায়িত্ব, সেই স্থানে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহ হচ্ছে। যা রাতে আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া পানি বাড়ায় তিস্তা-সংলগ্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে সবসময় মনিটরিং করা হচ্ছে। যাতে রাস্তা ঘাট, ব্রিজ ভেঙে না যায় সেই বিষয়গুলো মাথায় রেখে কাজ করা হচ্ছে।
লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতি
লালমনিরহাটে আকস্মিক এ বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২৫ হাজার পরিবার। তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ বিপৎসীমার কাছাকাছি থাকায় আতংকিত হয়ে পড়ছে এখানকার মানুষেরা। নদী তীরবর্তী এলাকার বেশ কিছু রাস্তাঘাট ব্রিজ কালভার্ট পানির তোড়ে ভেঙে গেছে। আমন ধান ও বিভিন্ন সবজি ক্ষেত ডুবে আছে পানিতে। দীর্ঘ সময় ডুবে থাকলে এসব ফসলের মারাত্মক ক্ষতির শঙ্কা করছেন চাষিরা। একই সাথে বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে বেশ কিছু পুকুরের মাছ।
ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিষয়টি উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। মহিষখোচা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ হোসত বলেন, ৩ হাজারের অধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বাঁধগুলো রক্ষায় সাধারণ মানুষদের নিয়ে বস্তা ফেলে রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে লালমনিরহাট সান্তাহার রেলরুটের অর্ধকিলোমিটার পথ। ফলে দিনভর ঝুঁকি নিয়েও ধীরগতিতে ট্রেন চলাচল করেছে। একইসঙ্গে জরুরিভিত্তিতে সংস্কার করা হয় রেললাইন। আপাতত রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক রয়েছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনিল কুমার বলেন, রোববার সকাল ৬টায় তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ বেড়ে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর প্রবাহিত হয়। দুপুরে তা কমে গিয়ে বিপৎসীমার নিচে নেমে আসে। আশা করছি দ্রুতই বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, বন্যাকবলিতদের জন্য ১৩ লাখ টাকা ও ৯০ মেট্রিকটন জিআর চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আজকে স্বল্প পরিসরে বিতরণ শুরু করেছি। সোমবার সকলের কাছে পৌঁছে যাবে ত্রাণ। বন্যা বাড়লে তা মোকাবিলা করতে জেলা উপজেলা প্রশাসন আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
কুড়িগ্রামে বাড়ছে ভাঙন আতঙ্ক
কুড়িগ্রামে ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। প্লাবিত হয়েছে তিস্তার তীরবর্তী রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা, বিদ্যানন্দ, উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া, বজরা, থেতরাই, গুনাইগাছ এবং চিলমারী উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের আংশিক অংশ। এসব ইউনিয়নের চর ও নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৪ শতাধিক পরিবার, গ্রামীণ কাঁচা সড়কসহ ১৫৯ হেক্টর জমির রোপা আমন এবং মৌসুমি ফসলের খেত নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) হৈমন্তি রানী বলেন, শনিবারের তথ্য মতে চরাঞ্চলে ৪০ হেক্টর জমির ধান, বাদাম, মরিচখেত তলিয়ে গেছে। যেভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে আরও কয়েক শত হেক্টর ফসলের খেত তলিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ জানায়, ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বৃদ্ধি পেলেও তা বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, খিতাব খাঁ মাঝের চরের প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। পানিবন্দি পরিবারদের জন্য ১ কেজি মুড়ি, আধা কেজি চিড়া, খাবার স্যালাইন, মোমবাতি, দিয়াশলাই ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাদিজা বেগম।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার খাদিজা বেগম বলেন, এ উপজেলায় বন্যা হতে পারে তাই আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করে চরাঞ্চলের মানুষজনকে নিরাপদ স্থানে ও আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া পানিবন্দিদের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
গাইবান্ধার বন্যা পরিস্থিতি
গাইবান্ধার প্রধান চার নদ-নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। এতে জেলার ১৬৫টি চরের নিম্নাঞ্চলে পানি উঠতে শুরু করেছে। তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও গাইবান্ধার প্রধান তিন নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আপাতত জেলায় বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে পাউবো।
গাইবান্ধা পাউবোর নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক দিন থেকে ধীর গতিতে প্রধান চার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখঘাট পয়েন্টে ৭৪ সেন্টিমিটার, ঘাঘট নদীর পানি জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ৫৭ সেন্টিমিটার ও করতোয়ার পানি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার চকরহিমাপুর পয়েন্টে ৭৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা নদী। হঠাৎ পানি বাড়ায় তারাপুর, হরিপুর, শ্রীপুর, কাপাসিয়া, বেলকা, গাইবান্ধা সদর উপজেলার মোল্লারচর, কামারজানি, সাঘাটার হলদিয়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে ফের পানি ঢুকে পড়ার শঙ্কায় রয়েছে। ইতোমধ্যে নিম্নাঞ্চলের চরগুলোতে পানি প্রবেশ করেছে। এতে স্থানীয়দের মাঝে নতুন করে বন্যা আতঙ্ক বিরাজ করছে। চরের নিম্নাঞ্চলে আবারও পানিবন্দি হওয়ার শঙ্কা করছে সাধারণ মানুষ।
কাপাসিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মঞ্জু মিয়া বলেন, নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল স্রোত দেখা দিয়েছে। আমার ইউনিয়নের ৩ ও ৪ নং ওয়ার্ডের অবস্থা খুবই খারাপ। ফসিল জমিসহ ভাঙছে ঘরবাড়ি। এ পর্যন্ত ৩টি বসতবাড়ি নদীতে গেছে।
হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাহারুল ইসলাম বলেন, আমার ইউনিয়নের পাড়া সাদুয়া ও লখিয়ার পাড়া গ্রামের ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ পর্যন্ত ২টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। পানির তীব্র স্রোতে ফসিল জমিও ভাঙতে শুরু হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ভয়াবহ রূপ নেবে তিস্তা নদী।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ওয়ালিফ মন্ডল বলেন, তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা ব্যাপক তৎপর আছি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি এবং আমরা নিজেরাও যাচ্ছি।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ সহকারী প্রকৌশলী রায়হানুল ইসলাম বলেন, উজান থেকে পানি আসছে এবং গত কয়েকদিনের বৃষ্টির পানিতে জেলার সব নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। চরের কিছু নিচু অঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেলেও করতোয়া, ঘাঘট ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আপাতত এ পানিতে বন্যার আশঙ্কা নেই। আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ বলেন, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দুই একটি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। করতোয়া, ঘাঘট, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
আরটিভি/এমএ
মন্তব্য করুন