উপকরণের দাম বাড়লেও পারিশ্রমিক বাড়েনি
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আগামী ৯ অক্টোবর মহা ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। রোববার (১৩ অক্টোবর) বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দুর্গাপূজা।
বুধবার (২ অক্টোবর) মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষের আগমন শুরু হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন টাঙ্গাইলের মৃৎশিল্পীরা। হাতের নিপুণ ছোঁয়া ও রং-তুলির আঁচড়ে মনের মাধুরি দিয়ে গড়ে তুলছেন দেবী দুর্গাকে। এ ছাড়া কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী ও সরস্বতী প্রতিমা তৈরি করছেন শিল্পীরা।
সরেজমিনে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের তারটিয়া পাল পাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রতিমাশিল্পীদের কেউ প্রতিমা তৈরিতে আবার কেউবা রং করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের। দিনরাত এর পেছনে সময় ব্যয় করছেন তারা।
প্রতিমাশিল্পীদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, আগের চেয়ে কাজ বেড়েছে। তবে সেই তুলনায় বাড়েনি পারিশ্রমিক। এছাড়াও প্রতিমা তৈরির উপকরণের দামও চড়া। উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয় এঁটেল মাটি, বাঁশ, কাঠ, খড়, পাটের আঁশ, যা গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ দাম গুণতে হচ্ছে।
প্রতিমা শিল্পী সুমন পাল বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এবার ভিন্ন রকম পরিবেশ চলছে। এ কারণে আমরা সেভাবে কাজ করতে পারছি না। প্রথমে কাজ ছিল না। এখন কিছু কাজ আসছে। গতবছর ১০টা মণ্ডপের কাজ করেছি। এবার ছয়টি বানিয়েছি। মজুরি অর্ধেকে নেমেছে। বাপ-দাদার পেশা টিকিয়ে রাখতেই আমরা এ কাজ করে যাচ্ছি।
প্রতিমাশিল্পী গোবিন্দ পাল বলেন, আমি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করে আসছি। মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করেছি। রঙের কাজও শেষ পর্যায়ে। এখন প্রতিমাগুলোকে অলংকার দিয়ে সাজিয়ে পূজারিদের বুঝিয়ে দিয়ে দিব।
তিনি আরও বলেন, আমরা আগে যে বাঁশ ২০০-২৫০ টাকায় কিনতাম, এখন তা ৫০- ৬৫০ টাকায় কিনতে হয়। আগে তিন হাজার টাকার খড় দিয়ে একটা মণ্ডবের প্রতিমা হয়ে যেত, আর এখন পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার খড় লাগে। খড়ের পরিমাণ একই কিন্তু দাম দ্বিগুণ। আগে যে প্রতিমা তৈরিতে খরচ হতো ৪০-৫০ হাজার টাকা। তা এখন খরচ হয় এক লাখ টাকার উপরে।
প্রতিমাশিল্পী সন্তোষ পাল বলেন, বংশপরম্পরায় আমি এই মৃৎশিল্পের কারিগর। আমার বাপ-দাদারা এই কাজ করে গেছেন। এই কাজ ছাড়া অন্য কোনও কাজও তেমন পারি না। বছরের এই সময়ে আমাদের খুব ব্যস্ততা বেড়ে যায়। আর বাকি সময় টুকটাক কাজ করি।
তিনি আরও বলেন, গতবছর প্রতিমা ১২টি তৈরি করেছিলাম। এবার পরিস্থিতি তেমন ভালো না দেখে ছয়টি প্রতিমা তৈরি করেছি। আমরা ভয়ে ছিলাম এবার পূজা হবে কি না। যে উপকরণ গত বছর ১২ হাজার টাকায় কিনেছি, সেটা এবার ২৫ হাজার। যে রঙ ১৫০ টাকায় কিনতাম, সেটা এখন ২০০-২৫০ টাকা। সেই হারে পারিশ্রমিক যদি বাড়তো, তাহলে পরিবার নিয়ে কষ্টে জীবন যাপন করতে হতো না।
কারিগর সজীব পাল বলেন, প্রতিমার কাজ শেষ করেছি চারদিন হলো। এখন চলছে রঙ ও সাজসজ্জার কাজ। অনেকে তাদের পছন্দের শাড়ি দিয়ে দেবী দুর্গাকে সাজাতে নামিদামি রং-বেরঙের শাড়ি, অলংকার ও মাথার মুকুট দিয়ে গিয়েছে। আমরা এখন আস্তে আস্তে সেগুলোর কাজ করতেছি।
তিনি আরও বলেন, প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর দাম বেড়েছে। প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহৃত এক বস্তা মাটির ৫০ কেজির দাম দুই হাজার টাকার সঙ্গে পরিবহন খরচ আছে। কিন্তু আমাদের পারিশ্রমিক বাড়েনি।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ গুণ ঝন্টু বলেন, ইতিমধ্যে পূজা উদযাপন কমিটি ও সর্বদলীয় লোকদের সাথে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের মিটিং হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে আমাদের দূর্গা উৎসব সুন্দর ও সার্থক হবে আশা করি। এর মধ্যে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতেছে সারাদেশে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য। কিছু কতিপয় দুষ্কৃতিকারী আমাদের কিছুটা ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। আমরা সমাজের সব লোক নিয়ে সঙ্গবদ্ধভাবে পাহাড়ার মাধ্যমে আমাদের দূর্গা পূজা যাতে সুন্দর ও সার্থক হয় সেটা আমরা করব।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতু বলেন, পূজা উপলক্ষে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। পুলিশ সুপারের অফিসে কন্ট্রোল রুম করতে যাচ্ছি। ১২৫ জনের মতো স্ট্রাইকিং পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। মোটরসাইকেলে প্রায় ৪৬৩ জন বিভিন্ন ডিউটিতে থাকবে। পুলিশের ২৮টি পিকআপ গাড়িতে ১১২ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়াও পুলিশের একটি টিম সাদা পোশাকে নজরদারি করবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা সিসিক্যামেরা স্থাপন করবো। ডোনের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছি। প্রত্যেকটা জায়গায় ছোট ছোট কন্ট্রোল রুম থাকবে। ধর্মীয় উৎসবে নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে যত ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন আমরা সর্বোচ্চ পরিমাণ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আমরা আশা করি, জেলায় শান্তিপূর্ণ ও সুন্দরভাবে পূজা উদযাপন করতে পারবো।
আরটিভি/এমকে
মন্তব্য করুন