• ঢাকা শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১
logo

পূজামণ্ডপে ইসলামি সংগীত বিতর্কে গ্রেপ্তার আরও ১

আরটিভি নিউজ

  ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৯
বিতর্ক
সংগৃহীত

চট্টগ্রাম নগরে দুর্গাপূজার একটি মণ্ডপের অনুষ্ঠানে ইসলামি সংগীত পরিবেশনের ঘটনায় আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মোট দুইজনকে গ্রেপ্তার করলো পুলিশ। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) রাতে এ দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানা যায়। তাৎক্ষণিক ভাবে গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিস্তারিত জানায়নি পুলিশ।

একই ঘটনায় পূজা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তকে বরখাস্তের ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য।

গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) লিয়াকত আলী খান জানান, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী তারেক আজিজ জানান, পূজামণ্ডপের অনুষ্ঠান মঞ্চে ইসলামি সংগীত পরিবেশনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় নগরের দামপাড়া পুলিশ লাইনসে নগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।

জানা যায়, বিতর্কের ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে নগরের রহমতগঞ্জের জে এম সেন হলের পূজামণ্ডপে। পূজা কমিটির অনুমতি নিয়ে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি নামের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের ছয় সদস্য মঞ্চে বাদ্যযন্ত্র ছাড়া দুটি গান পরিবেশন করেন। যা পরে বিতর্কের জন্ম দেয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সভাপতি সেলিম জামান বলেন, পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তের আমন্ত্রণেই সেখানে সংগীত পরিবেশন করতে গেছেন তারা। সেখানে দুটো গান পরিবেশন করা হয়েছে, দুটোই সম্প্রীতির সংগীত। কেউ কেউ ভিডিও এডিট করে ভিন্ন গান বাজিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

এদিকে, ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই অনুষ্ঠানের ভিডিও যাচাই করে ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার তাদের ফেসবুক পেজে জানিয়েছে, পূজামণ্ডপে গানের ভিডিওটি আসল, এডিটেড নয়।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, ওই দুটি গানের মধ্যে একটি গান ছিল ‘গ্রামের নও জুয়ান হিন্দু-মুসলমান’ অপরটি হচ্ছে ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম’। এর কিছুক্ষণের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ভিডিওটি। ছড়িয়ে পড়া তিন মিনিটের একটি ভিডিওটিতে দেখা যায়, মণ্ডপের অনুষ্ঠানের মঞ্চে গান পরিবেশন করছেন ছয়জন তরুণ।

পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্র বলছে, সন্ধ্যায় মঞ্চে নাচের অনুষ্ঠান হচ্ছিল। এ সময় কয়েকজন তরুণ সেখানে উপস্থিত হয়ে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করবেন বলে মঞ্চে ওঠেন। পরে তারা দুটি গান পরিবেশন করেন। এরপর তারা ‘ধন্যবাদ’ দিয়ে নেমে চলে যান।

চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের অর্থ সম্পাদক সুকান্ত মহাজন বলেন, ওই তরুণেরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তকে বলেছেন, তারা মঞ্চে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করবেন। পরে তারা উঠে গান শুরু করেন এবং দুটি গান পরিবেশন শেষে তারা চলে যান।

পরে পূজা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তকে বরখাস্তের ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য। রাতেই নগরের জে এম সেন হলের পূজামণ্ডপের মঞ্চে তাকে বরখাস্তের ঘোষণা দেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে সজল দত্তের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ঘটনার সময় সেখানে চট্টগ্রামের আদালত ঘোষিত সিটি মেয়র ও নগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম নগরের আমির শাহজাহান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

অবশ্য, এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে শাহাদাত হোসেন ফোন ধরেননি। আর জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী বলেছেন, তিনি এদিন কোনো পূজামণ্ডপে যাননি।

পূজামণ্ডপে ইসলামি সংগীত পরিবেশনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে যান চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। এ সময় তিনি বলেন, এ ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক না কেন, তাদের ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করা হবে। এ বিষয়ে রাতের মধ্যেই মামলা নেওয়ার জন্য পুলিশ কমিশনারকে জানানো হবে।

এ ঘটনায় ছাত্রশিবিরকে জড়ানোর প্রতিবাদ জানিয়েছে সংগঠনটি। একইসঙ্গে এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (১১ অক্টোবর) রাতে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এক পোস্টের মাধ্যমে ইসলামী ছাত্রশিবিরের অবস্থান তুলে ধরে এ দাবি জানান তিনি।

ওই পোস্টে জাহিদুল ইসলাম লিখেন, ‘এই ঘটনার সঙ্গে অনেকেই ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখছেন। আমি দায় নিয়ে বলছি, এর সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। শিবির কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে, এমন কাজ কখনোই সমর্থন করে না। তাই এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে স্পষ্ট দাবি জানাচ্ছি, একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে প্রকৃত সত্য সবার সামনে উঠে আসুক। কেউ দোষী হলে তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে এসে শাস্তি দেওয়া হোক।’

সত্যতা যাচাই না করেই বিভিন্ন সময় শিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হয় জানিয়ে ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেন, সত্যতা যাচাই না করেই যারা শিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালায়, তারা একটা সময় গিয়ে নিজেদের বিবেকের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ হবেন। এ ধরনের কাজ থেকে ভবিষ্যতে বিরত থাকার অনুরোধ করছি।

আরটিভি/এএইচ/এআর

মন্তব্য করুন

Radhuni
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
পূজামণ্ডপে গীতার শ্লোক পাঠ করে ভাইরাল জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা
পূজামণ্ডপে নজরদারিতে ববি ছাত্রদল
পূজামণ্ডপে ইসলামিক গান: ক্ষমা চেয়ে যা বলল চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি
বিজিবির সেক্টর কমান্ডারের পূজামণ্ডপ পরিদর্শন