মর্গে পোড়া মরদেহ দুটি কি আন্দোলনে নিখোঁজ আসিফ ও শাহিনের
সিরাজগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেওয়া নিখোঁজ কলেজ ছাত্র আসিফ ও শাহিনের দুই মাস পার হলেও খোঁজ মেলেনি। তারা বেঁচে আছেন, নাকি মারা গেছেন তা-ও জানেন না পরিবারের সদস্যরা।
এই ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
এদিকে মর্গে পোড়া দুটি মরদেহ আছে। যার দাবিদার চার পরিবার। এই দুটি মরদেহ হতে পারে আসিফ ও শাহিনের—এমনটাই ধারণা পরিবারের। ইতোমধ্যে মরদেহ দুটির ডিএনএ টেস্ট করা হয়েছে।
নিখোঁজ কলেজছাত্র আসিফ হোসেন সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার একডালা পুনর্বাসন এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে। তিনি সিরাজগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী।
নিখোঁজ স্কুলছাত্র শাহিন শেখ সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার জানপুর মহল্লার বাবু শেখের ছেলে। তিনি এবার এসএসসি পাস করেছেন। কলেজে ভর্তি হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন।
নিখোঁজ কলেজছাত্র আসিফের পরিবার জানায়, গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের অন্যান্য ছাত্রদের সঙ্গে মিছিলে অংশ নেয় আসিফ। যাওয়ার সময় মাকে বলে যান, মা আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের মিছিলে যাচ্ছি। দুপুরের পর থেকে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর থেকে তাকে বিভিন্ন স্থানে খুঁজেও পাইনি। দুই মাস পার হয়ে গেলেও বাড়ি ফিরে আসেনি আসিফ।
আসিফের পরিবার আরও জানায়, গত ৪ আগস্ট আন্দোলন চলাকালে সিরাজগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীর বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। সেখানে আগুনও দেওয়া হয়েছে। ওই বাড়িতে আটকা পড়তে পারে আসিফ। পরে আমরা জান্নাত আরা হেনরীর বাড়ির বিভিন্ন কক্ষে আসিফকে খুঁজেছি। মর্গে আগুনে পোড়া দুটি লাশ আছে। কিন্তু চেনার উপায় নাই। শরীর পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। বিষয়টি আমরা পুলিশকে জানিয়েছি।
অপরদিকে গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে অংশ নেয় স্কুলছাত্র শাহিন শেখ (১৬)। এরপর থেকে তাকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পড়ে থাকা দুটি লাশের একটি শাহিনের বলে দাবি পরিবারের। ওই লাশের দাবিদার আরও কয়েকজন থাকায় তাদের ডিএনএ পরীক্ষা করাতে পরিবারের সদস্যদের ঢাকায় নিয়ে যায় পুলিশ।
শাহিনের পরিবার জানায়, চলতি বছর সিরাজগঞ্জের ভিক্টোরিয়া স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেছে শাহিন। গত ৪ আগস্ট সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে অংশ নেয় শাহিন। ওই দিন দুপুর ১২টার দিকে শহরের চৌরাস্তা এলাকায় ছাত্রদের মিছিলে দেখা যায় শাহিনকে। এরপর থেকে শাহিন বাড়ি ফেরেনি। দুই মাস পার হয়ে গেলেও কোথাও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি।
সিরাজগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার আতাউর রহমান বলেন, গত ৫ আগস্ট ভোরে খবর পেয়ে আমরা সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীর বাসায় যাই। সেখান থেকে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করি। তাদের শরীর পুরোটাই আগুনে পুড়ে গেছে। চেনার উপায় নাই। পরে লাশগুলো মর্গে পাঠিয়ে দিই।
সিরাজগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ুন কবীর বলেন, মর্গে যে দুটি লাশ রাখা আছে তার দাবি করছে চারজন। যে কারণে ডিএনএ টেস্ট ছাড়া লাশ হস্তান্তর করা যাচ্ছে না। ডিএনএ টেস্ট করা হয়েছে। টেস্টের প্রতিবেদন হাতে পেলে লাশ হস্তান্তর করা হবে।
আরটিভি/এএএ
মন্তব্য করুন