সম্প্রীতির অপূর্ব মেলবন্ধন, পাশাপাশি মসজিদ-মন্দির
পথ একটাই। মাঝে ৩ ফিটের একটা ছোট্ট ইটের দেয়াল। এই দেয়াল জমির সীমানা নির্ধারণ করলেও মনের দেয়ালে রেখা টানেননি। একই পথ দিয়ে মুসলমানরা মসজিদে যায় সেজদায় আর সনাতনীরা মন্দিরে যায় পূজা অর্চনায়। সময় করে চলে ধর্মীয় আচার-আচরণ। সময়মতো আজান ও নামাজ, নিয়ম করে পূজা অর্চনা। একপাশে ধূপকাঠি অন্য পাশে আতরের সুঘ্রাণ। এক পাশে কোরআনের সুমধুর অমিয় বানী অন্য পাশে গীতা পাঠ। এক পাশে জিকিরের ধ্বনি অন্য পাশে উলুধ্বনি। এমনভাবেই যুগ যুগ ধরে সম্প্রীতির আলো ছড়াচ্ছে পটুয়াখালীর কুয়াকাটার সমুদ্রের তীর ঘেঁষে দাড়িয়ে থাকা প্রতিষ্ঠিত মসজিদ ও মন্দির।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, সৈকত লাগোয়া শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৯৬ সালে আর তার সাথের ‘সাগর সৈকত জাম মসজিদ’ প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৯৭ সালে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি হয়নি কেউই। বরং একে অপরের পরিপূরক হিসেবে আজ পর্যন্ত চলে আসছে। এমনিতে কুয়াকাটা সনাতনী ধর্মের কাছে তীর্থ স্থান হওয়ায় এখানে মতুয়া মিশনের মহা মিলন, রাসপূর্ণিমায় হাজারও হিন্দু সম্প্রদায়ের তীর্থদের উপস্থিতিতে কেউ কোনদিন বিরক্তের ছাপ দেখেনি।
সম্প্রতি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা শেষ হলো। এ পূজা আয়োজন করার আগে পূজা কমিটি, মসজিদ কমিটির সঙ্গে আলোচনা করেছে। এমনটাই নিশ্চিত করেছে মসজিদের মুয়াজ্জিন হাফেজ মো. হারুনুর রশিদ।
তিনি বলেন, আমরা প্রতিষ্ঠার পর থেকেই একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেই ধর্মীয় আচার-আচরণ পালন করি। এতে আমাদের সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়। কখনো কেউ আজানের সময় তবলা বাজায়নি।
এ বিষয়ে শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দিরের উপাধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার নিহার রঞ্জন বলেন, মসজিদ কমিটি কখনো কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নেয়। আমরা একে অপরের সঙ্গে আলাপ করেই ধর্মীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাই।
কুয়াকাটায় ঘুরতে আসা পর্যটক মো. সাইদুর রহমান বলেন, এক পথের শেষ মাথায় দুই ধর্মের ২টা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দেখে আমার কাছে ভালো লাগছে। সাম্প্রদায়িক মনোভাবের পরিচয় দিয়েছে। এমন সম্প্রীতির নজির হাতেগোনা।
স্থানীয় বাসিন্দা জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের কুয়াকাটা শাখার আমির আলহাজ মাওলানা মাইনুল ইসলাম বলেন, ধর্ম নিয়ে কখনো বাড়াবাড়ি হয়নি। যে যার মতো ধর্মীয় কালচার পালন করে আসছে। আমরা তাদের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিই। তারাও আমাদের দাওয়াত দেয়। আমরা সুখে-দুঃখে পাশাপাশি থাকি।
শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দিরের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) কাজল বরণ দাশ বলেন, যুগ যুগ ধরে এই সম্প্রীতির উদাহরণ চলে আসছে। আগামীতেও থাকবে এমন সৌহার্দ্যতা।
কুয়াকাটা পৌর সভার সাবেক মেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার বলেন, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এখানে মানুষের বসবাস। সবাই মিলে মিশেই থাকি। শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক নয়, এখানে পাশাপাশি বৌদ্ধদের প্রার্থনা করার প্যাগোডাও আছে।
আরটিভি/এএএ/এসএ
মন্তব্য করুন