কুষ্টিয়ায় শেষ হলো লালন স্মরণোৎসব
লালন শাহ’র ১৩৪তম তিরোধান উপলক্ষে স্মরণোৎসব শুরু হয় গত বৃহস্পতিবার। শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে শেষ হয় এই উৎসব। এরপর গন্তব্যে ফিরতে শুরু করেন ভক্ত-অনুরাগীরা। তবে, শনিবারও আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণে তিন দিনব্যাপী বাউলমেলা চলবে বলে জানানো হয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, পুরো আখড়াবাড়িতে যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সাধু, বাউল, লালনভক্ত আর অনুসারীদের গান, আলোচনা আর ভাব বিনিময়ে আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণজুড়ে যেন বিরাজ করছে অন্যরকম এক পরিবেশ। দুপুর ২টার দিকে লালন একাডেমির প্রবেশপথ, লালন শাহর মাজার প্রাঙ্গণ, আখড়াবাড়ি, মেলার মাঠ হয়ে ওঠে লোকে লোকারণ্য। আখড়াবাড়ির ভেতরে হাজার হাজার বাউল ও লালন অনুসারী সাদা কাপড় পরা। অন্য পোশাকেও আছেন অনেকে। দুপুরে তাদের আয়োজকদের পক্ষ থেকে পুণ্যসেবার ভাত, ডাল, সবজি ও ইলিশ খেতে দেওয়া হয়। রীতি অনুযায়ী সাধু-গুরুরা সবাই একসঙ্গে দুপুরের খাবার গ্রহণ করেন।
এ বিষয়ে প্রবীণ সাধক নহির শাহ বলেন, 'বিভিন্ন মতের মানুষ একত্র হয়ে একমতে চলার নাম সাধুসঙ্গ। সেখানে সাধু-গুরুরা একই সুর, একই তাল, একই ভাবে সাধুসঙ্গে অংশ নেন।'
সিরাজগঞ্জ থেকে আখড়াবাড়ি আসা আবুল কালাম বলেন, ‘বছরে দুইবার আখড়াবাড়ির সাধুসঙ্গে আসার সুযোগ হয় আমাদের। এ সময়ে বহু মানুষের সঙ্গে আমাদের মতের লেনাদেনা চলে। খোঁজ করি মনের মানুষের। আবারও ফিরে আসতে চাই এই আখড়াবাড়িতে।’
মানিকগঞ্জ থেকে আসা কলেজছাত্র সৈকত আহমেদ বলেন, লালনের বাণী ও গান ধর্ম, বর্ণ, জাতির ঊর্ধ্বে। তাই মায়ার টানে আখড়াবাড়িতে এসেছি। অতীতের তুলনায় এবার ভিড় বেশি।
লালন একাডেমির শিক্ষার্থী মুসলিমা খাতুন বলেন, ‘সাঁইজি সবসময় মানুষকে ভালো পথে আনা ও ভালোবাসার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। মানুষকে ভালোবাসার মাধ্যমেই স্রষ্টা পর্যন্ত পৌঁছানো যায়। সে জন্য সাঁইজি বলেছেন, মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি।’
উল্লেখ্য, ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর ফকির লালন শাহ দেহত্যাগ করেন। এরপর থেকেই দিনটি তিরোধান দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। তিরোধান দিবস তথা পহেলা কার্তিক অধিবাস সেবার মধ্য দিয়ে শুরু হয় অষ্টপ্রহর সাধুসঙ্গ। পরদিন সকালে বাল্যসেবা ও বিকেলে পূর্ণসেবার মধ্য দিয়ে সাধুসঙ্গ শেষ হয়।
আরটিভি/এফএ
মন্তব্য করুন